Beanibazarer Alo

  সিলেট     বুধবার, ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট

admin

প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৩ | ০৪:০১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২৩ | ০৪:০১ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
আজ ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী।

১৯৭৫ সালের এই দিনে ইতিহাসের নৃশংস ও মর্মস্পর্শী এক হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশের মানুষ হারায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। মৃত্যুর আগেই নিজের বীরত্ব, ত্যাগ, দৃঢ়প্রত্যয় ও নেতৃত্বগুণে একজন রাজনীতিক হিসেবে বাঙালির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। যা সহজেই তাকে স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির পিতার মর্যাদায় আসীন করেছে। এই শোকের দিনে বাঙালি জাতি তাদের এই মহান নেতাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে। বঙ্গবন্ধুর ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ও আদর্শ স্বাধীনতাকামী মানুষের অধিকার আদায় এবং শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণজাগরণে সবসময় অনুপ্রেরণা জোগাবে।

Manual5 Ad Code

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং গণতন্ত্র-উন্নয়নবিরোধী চক্র এখনও দেশে-বিদেশে নানাভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। চক্রান্তকারী অপশক্তির যেকোনো অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

সংগ্রাম, ত্যাগ, বুদ্ধিমত্তা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন দেশকে ঢেলে সাজাতে আত্মনিয়োগ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভোররাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা সেদিন শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।

এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নীপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ ও সুকান্তবাবু, মেয়ে বেবি, বঙ্গবন্ধুর ভাগনে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এসময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

Manual2 Ad Code

মূলত- ‌‌‌৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকেই বাংলাদেশে এক বিপরীত ধারার যাত্রা শুরু হয়। বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসনের অনাচারী ইতিহাস রচিত হতে থাকে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প। মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে, তারা যেকোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।

বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে। অথচ বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই। বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকাণ্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে আমৃত্যু। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ বিচারের হাত থেকে খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেন। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে আইন হিসেবে অনুমোদন করেন।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাঙালিরা ছিলেন পথহারা পথিকের মতো। বঙ্গবন্ধুহীন সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ঢেকে যায় অন্ধকারে। যে ভাত ও ভোটের অধিকারের জন্য বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু সংগ্রাম, ত্যাগ ও কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তা চলে যায় স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে। হত্যা করা হয় দেশের গণতন্ত্রকে। নির্যাতনের শিকার হন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। দলটির শত শত নেতাকর্মীদের বিনা অপরাধে কারাভোগ করতে হয়। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাকর্মীরা। তার কঠোর পরিশ্রম ও দূরদর্শী নেতৃত্বে সুদীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে। সেই বছরের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তিন প্রধান আসামি বরখাস্ত লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

Manual2 Ad Code

একই বছরের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী (পিএ) এ এফ এম মোহিতুল ইসলাম পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ডে থানায় একটি এফআইআর করেন। ১৯৯৬ সালের ১৪ নভেম্বর খুনিদের বিচারের হাতে ন্যস্ত করতে পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি আইন বাতিল করা হয়। ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে চার্জশিট দাখিল করে এবং একই বছরের ১২ মার্চ ৬ আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচার শুরু হয়।

১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচারক বিব্রত হওয়াসহ স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের নানা বাধার কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। অন্যদিকে, ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৪ দিনের শুনানি শেষে বিভক্ত রায় দেন। বিচারক এম রুহুল আমিন অভিযুক্ত ১৫ আসামির মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বজায় রাখেন। কিন্তু অপর বিচারক এ বি এম খায়রুল হক অভিযুক্ত ১৫ জনকেই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেন।

পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালের অক্টোবরের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বিচার কাজ বন্ধ থাকে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী বর্তমান সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে ৫ আসামিকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতিদানের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। ২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর ২৯ দিনের শুনানির পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষ হয় এবং আদালত ১৯ নভেম্বর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন। ওইদিন (১৯ নভেম্বর) বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৫ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতিকে দায়মুক্ত করা হয়।

Manual5 Ad Code

২০২০ সালের ১২ এপ্রিল ভারতে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর আরও একজন খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার ৪৫ বছর, নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের মামলার ২৫ বছর এবং উচ্চ আদালতের রায়ে ৫ আসামির ফাঁসি কার্যকরের প্রায় দশ বছর পর গ্রেপ্তার হন খুনি মাজেদ। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড ছিল একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। খুনিরা শুধু বঙ্গবন্ধুকে শারীরিকভাবেই হত্যা করেননি, তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মাকেই হত্যা করে পাকিস্তানি আত্মাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের দেহে প্রতিস্থাপন করতে চেয়েছিলেন।

শেয়ার করুন