গাজায় যুদ্ধবিরতির পর কী হবে

Daily Ajker Sylhet

admin

২৬ নভে ২০২৩, ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ


গাজায় যুদ্ধবিরতির পর কী হবে

নিউজ ডেস্ক:
সাত সপ্তাহের যুদ্ধে ১৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণহানির পর শুরু হয়েছে মাত্র চার দিনের যুদ্ধবিরতি, যার প্রথম দিনে গাজায় হামলা-আক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। তবে এই যুদ্ধবিরতি নির্ভর করছে ইসরায়েল-হামাসের বন্দি বিনিময়ের ওপর। ফলে বিরতির মেয়াদ যদি না বাড়ে, তাহলে চার দিন পর কী ঘটবে, সেটিই এখন প্রশ্ন। এদিকে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি মানলে হামাসও মানবে বলে জানিয়েছেন হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়া।

গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যুদ্ধবিরতি শেষ হলে গাজা নিয়ন্ত্রণে লড়াই আবার শুরু হবে। আর সেটি আরো এক সপ্তাহ বা দশ দিন ধরে চলতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি বিশেষজ্ঞরা।

ইসরায়েলের মুহুর্মুহু হামলার মধ্যে উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণে আশ্রয় নিয়েছে লাখো মানুষ। সেখানে থাকতে পারে হামাস যোদ্ধারাও। হামাসের আস্তানা যেখানেই পাবে, সেখানেই আক্রমণ চালাবে ইসরায়েলি বাহিনী। আবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দক্ষিণে অভিযানের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। ফলে ইসরায়েলি বাহিনী যদি দক্ষিণে মনোযোগ দেয়, তবে মানবিক সংকট যে আরো বাড়বে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ইসরায়েল মনে করছে, হামাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা ইয়াহা সিনওয়ার ও মোহাম্মদ দেইফ দক্ষিণে কোথাও আছেন। সেই সঙ্গে হামাসের অনেক যোদ্ধা ও জিম্মি ইসরায়েলি নাগরিকরাও সেখান আছে। দেশটি উত্তর গাজায় এতদিন ধরে যা করেছে, যদি সেটি দক্ষিণেও করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে পশ্চিমা বিশ্ব—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী হবে, সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।

এদিকে গাজার শত শত মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে দক্ষিণের আল-মাওয়াসি এলাকার বালুকাময় মাঠে তাঁবু পেতেছে। ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা বলছে, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজার প্রায় ১৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এদের বেশির ভাগই আশ্রয় নিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলে গাদাগাদি করে। সেখানে পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে। ১০ হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে স্কুল, হাসপাতালে ও তাঁবুতে। শীতকালীন বৃষ্টি ইতিমধ্যে ঐ এলাকা ভাসিয়ে দিয়েছে। ফলে দুর্ভোগ আরো চরমে উঠেছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে আল-মাওয়াসি এলাকাকে তথাকথিত ‘নিরাপদ এলাকা’ বলছিলেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। মাওয়াসি মূলত ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলের সরু কৃষিভূমি। কাছেই মিশর সীমান্ত।

বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র আভিচায় আদ্রাই বলেন, আল-মাওয়াসি গাজাবাসীর জন্য উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু যখন এর কাছেই যুদ্ধ চলছে, তখন এই এলাকায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষের আশ্রয় নেওয়াটা কতটা বাস্তবসম্মত? সেই সঙ্গে আল-মাওয়াসির পরিবেশই বা কতটা উপযুক্ত? ফিলিস্তিন বিষয়ক ইসরায়েলের প্রাক্তন এক উপদেষ্টা মাইকেল মিলশটাইন বলেন, সেটি সুন্দর আর কার্যকরী জায়গা। কিন্তু বেশ ছোট। তবে ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার কমিউনিকেশন ডিরেক্টর জুলিয়েট টুমা বলেন, আল-মাওয়াসি খুব ছোট জায়গা। কিছুই নেই সেখানে। কেবল বালিয়াড়ি আর পামগাছ রয়েছে। হাজারো বাসিন্দাদের এমন একটি জায়গায় সরিয়ে নিলে, যেখানে অবকাঠামো নেই, হাসপাতাল নেই, জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র নেইতাহলে বিশাল মানবিক সংকট তৈরি হবে। তবে গাজাবাসীর জন্য আরো নিরাপদ এলাকা খুঁজতে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তারা আলোচনার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। গাজা থেকে আরো দক্ষিণের দাহানিয়া এলাকার কথাও সম্ভবত বিবেচনা করা হচ্ছে। জিম্মিদের মুক্তি চুক্তির শর্তের অধীনে প্রতিদিন গাজায় ২০০ ট্রাক সাহায্য পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়ার কথা রয়েছে ইসরায়েলের।

আর এখন ইসরায়েল গাজাবাসীর নিরাপদ আশ্রয়স্থলের যে কথা বলছে, তা গত ১৬ নভেম্বর ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সহায়তা প্রদানের সঙ্গে জড়িত ১৮টি জাতিসংঘ সংস্থা ও এনজিওগুলোর প্রধানদের দেওয়া বিবৃতির পুরো বিপরীত। ঐ বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গাজায় কোনো ‘নিরাপদ এলাকা’ তৈরিতে অংশ নেব না, যেগুলো সব পক্ষের চুক্তি ছাড়াই তৈরি করা হয়েছে। জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর বিবৃতিতে আল-মাওয়াসির নামোল্লেখ না করে বলা হয়, ইসরায়েলের একক প্রস্তাব অনেকের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস ইসরায়েলের পরিকল্পনাকে ‘দুর্যোগের রেসিপি’ বলে অভিহিত করেছেন। এমন ছোট এলাকায় এতগুলো মানুষকে একত্র করলে ব্যাপক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হবে। সেখানে তেমন অবকাঠামো কিংবা সেবার ব্যবস্থা নেই।

এদিকে ইসরায়েল যতদিন যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে, ততদিন হামাসও তা করবে বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী এই গোষ্ঠীটির চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়া। শুক্রবার এক ভিডিওবার্তায় অতিসাম্প্রতিক এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘গাজায় ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করা, বন্দি বিনিময় সম্পূর্ণ করা, গাজাকে অবরোধমুক্ত করা এবং আল আকসা মসজিদে হামলা প্রতিরোধ করতে যা যা করা প্রয়োজন, তার সবই করতে প্রস্তুত আছে হামাস। তাই ইসরায়েল যতদিন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে, ততদিন হামাসও তা অনুসরণ করবে।

Sharing is caring!