গাড়ি থেকে বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধারের আগেই যেভাবে ধরা হয় নারীকে
২৬ মার্চ ২০২৩, ০১:১৮ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পদ্মার পাড়ে পড়ে থাকা গাড়ি থেকে সম্রাট খানের (২৯) লাশ উদ্ধারের আগেই অপরাধে জড়িত অভিযোগে শনাক্ত হন আবদুল মমিন ও তাঁর স্ত্রী সীমা খাতুন। মূলত গাড়িটির খোঁজ করতে গিয়ে পুলিশ তাঁদের শনাক্ত করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সীমা হত্যার কথা স্বীকার করেন, তবে লাশ তাঁর স্বামী কোথায় রেখেছেন, তা জানেন না বলে পুলিশকে বলেন।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম আজ রোববার এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গত শুক্রবার গাড়িসহ চালকের খোঁজ জানতে মালিক থানায় এসে চালক সম্রাটের মুঠোফোন নম্বর দেন। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নম্বরটির সর্বশেষ অবস্থান জানা যায় পাবনার ঈশ্বরদীর ছলিমপুর ইউনিয়নের বাঁশেরবাদা এলাকায়।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুলিশের একটি দলকে তখন ওই এলাকায় পাঠানো হয়। শুক্রবার বিকেলে পুলিশ সদস্যরা সেখানে গিয়ে ওই নারীর বাড়িতে মুঠোফোনটি বন্ধ হয় বলে নিশ্চিত হন। কিন্তু সীমা প্রথমে বিষয়টি স্বীকার করছিলেন না। পরে তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন। তবে গাড়ি, লাশ ও তাঁর স্বামী কোথায় আছেন, তা তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।
গাড়ির মালিক আনিসুর রহমান বলেন, তাঁর গাড়িটি রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে নিকিম নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে ভাড়ায় চলত। সম্রাট ওই গাড়ির চালক ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত গাড়িটি নিকিম কোম্পানির কাজ করেছে। শুক্রবার সকালে গাড়িটি নিয়ে চালক আর কাজে যাননি। শুক্রবার সকালে নিকিম থেকে তাঁকে বিষয়টি জানানো হয়। তখন তিনি চালক ও গাড়ির খোঁজ শুরু করেন। সম্রাটের বাবা তাঁকে ফোন দিয়ে ছেলের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানান। তিনি নিজে দুপুর পর্যন্ত সম্রাটের কোনো খোঁজ না পেয়ে থানায় যান। সেখানে গিয়ে গাড়ি ও চালক নিখোঁজের বিষয়ে লিখিত দেন।
গাড়ির মালিক আনিসুর রহমানের ভাষ্য, সীমা পুলিশকে প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন সম্রাট তাঁদের বাসায় এসে মাথাব্যথার কথা বলেন। তখন তাঁর স্বামী মমিন ওষুধ আনতে যান। তখন সম্রাট তাঁর সঙ্গে আপত্তিকর আচরণ করার চেষ্টা করলে তিনি হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করেন। পরে স্বামী বাসায় ফিরলে দুজন মিলে লাশ বস্তায় ভরে গাড়িতে নিয়ে বের হন। দুজন কিছুক্ষণ রাস্তায় ঘুরে লাশ ফেলার জায়গা পাননি। তখন সীমাকে বাড়িতে রেখে তাঁর স্বামী গাড়িতে লাশ নিয়ে বের হন।
তবে নিহত সম্রাটের মামা শামসুল হকের ভাষ্য, সম্রাট পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে। সম্রাট খান গত সাত বছর ধরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে একটি কোম্পানির হয়ে ভাড়ায় গাড়ি চালান। বৃহস্পতিবার সকালে কাজে বের হন তিনি। ওই দিন রাত ৯টার দিকে তাঁর সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের শেষ কথা হয়। ঈশ্বরদীতে এক নারীর কাছে তাঁর ভাগনে ৫০ হাজার টাকা পেতেন। ওই টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে ভাগনেকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, আটকের পর ওই নারী একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মমিন ঈশ্বরদীর বাঁশেরবাদা এলাকা থেকে গাড়িসহ লাশ নিয়ে আসেন পাবনার পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পদ্মার পাড়ে। পরে গাড়ি সেখানে রেখে চলে যান।
পদ্মার পাড়ে একটি কলাবাগানের সামনে খোলা জায়গায় সম্রাটের লাশবাহী গাড়িটি পার্ক করে রাখা ছিল। গতকাল শনিবার সকালে গাড়ির ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। এ বিষয়ে চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার মোজাম্মেল হক বলেন, গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তিনি গাড়ির ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হওয়ার কথা জানতে পারেন। ৬টার দিকে সেখানে যান। গাড়ির দরজা টান দিতেই খুলে যায়। দরজায় কোনো লক ছিল না। তিনি দ্রুত বিষয়টি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করে জানান।
সম্রাটের লাশের সুরতহাল করেন কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক দীপঙ্কর দাস। তিনি লাশ হস্তান্তরের পর বলেন, মাথায় শক্ত কিছু দিয়ে তিনটি আঘাতের চিহ্ন আছে। ধারণা করা হচ্ছে, এতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।