জেপি নেতাদের বিচার দাবি আ.লীগ ও স্থানীয়দের
১৯ এপ্রি ২০২৩, ০১:১৯ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুরের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো উপজেলা এলাকা। এ ঘটনায় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির (জেপি) উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও যুব সংহতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ ও উপজেলার আপামর জনতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভাণ্ডারিয়া বাজার ও আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও ডিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের নিন্দা জানিয়েছে উপজেলার সব মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিবিদ। তারা দ্রুত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তা না হলে মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে রাজপথে নেমে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন ভাণ্ডারিয়ার সাধারণ মানুষ।
গতকাল দিনভর উপজেলার রিজার্ভ পুকুরের পাশে আওয়ামী লীগের উপজেলা কেন্দ্রীয় অফিসে কয়েকশ নেতাকর্মীকে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়। সেখানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেন। তবে এদিন আওয়ামী লীগ অফিসের পাশেই অবস্থিত জেপি অফিসে কাউকে দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, সোমবার রাতে থানার পাশে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে হামলা করে ব্যাপক ভাঙচুর ও ছাত্রলীগ নেতাদের তিনটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ চালায় উপজেলা জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জল, যুব সংহতি (জেপি) সভাপতি রিজভি জমাদ্দার ও সাধারণ সম্পাদক মামুন সরদারের নেতৃত্বে প্রায় ৫০-৬০ যুবক।
এ সময় হামলাকারীরা কার্যালয়ের ভেতরে থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করে নিচে ফেলে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে গেলে তাদের ওপরও হামলা করা হয়।
পুড়িয়ে দেওয়া হয় ছাত্রলীগের তিনটি মোটরসাইকেল। এতে ১৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী আহত হয়ে ভাণ্ডারিয়া ও আশপাশের উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়। কয়েকজনের অবস্থার অবনতি হলে তাদের ভোররাতে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হঠাৎ করেই সোমবার রাত আটটার দিকে ৫০-৬০ যুবক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র- রামদা, কিরিচ, দা হাতে নিয়ে জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নামে স্লোগান দিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। অফিসে থাকা ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা নিবৃত্ত করতে গেলে তাদের পিটিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে আতিকুল ইসলাম উজ্জল, রিজভি জমাদ্দার ও মামুন সরদারের লোকজন।
এ সময় তারা অফিসের দেওয়ালে টানানো বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি টেনে নিচে ফেলে ভাঙচুর করে। এরপর হামলাকারীরা রাত পৌনে নয়টার দিকে কলেজ রোডে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের নিজ বাসভবনের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করে চলে যায়।
এ বিষয়ে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও দলের সাধারণ সম্পাদক মিরাজুল ইসলাম জানান, সোমবার দুপুরের পর তেলিখালীতে একটি ইফতার অনুষ্ঠান শেষে জাতীয় পার্টির (জেপি) দলীয় নেতাকর্মীরা ভাণ্ডারিয়ায় ফেরার পথে স্থানীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে ধাওয়া-পালটাধাওয়া হয়। মূলত জেপি নেতারা তেলিখালীতে বিএনপি নেতার বাড়িতে বসে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে আজেবাজে মন্তব্য ও কটূক্তি করায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
আর তাতেই জেপি নেতাকর্মীরা প্রথম দফায় তেলিখালীতে ছাত্রলীগের ওপর হামলা করে। এর কিছু সময় পর ভাণ্ডারিয়া জেপির (মঞ্জু) দলীয় নেতাকর্মীরা দ্বিতীয় দফায় দেশীয় নানা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তার কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
তেলিখালী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুল ইসলাম তালুকদার মাসুম জানান, ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত তেলিখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মির্জা গোলাম কিবরিয়া রিপনের নেতৃত্বে তার জুনিয়া গ্রামের বাড়ির সামনে সোমবার আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ভাণ্ডারিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টি জেপির নেতারা অংশগ্রহণ করেন। ইফতার মাহফিলে বক্তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিভিন্ন রকম কটূক্তি করেন।
এ নিয়ে স্থানীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগ জেপির নেতাদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। উভয় পক্ষের ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর হয়। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের তিনজন আহত হয়েছে।
হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, ভাণ্ডারিয়া জাতীয় পার্টি-জেপি (মঞ্জু) সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম উজ্জল জানান, তেলিখালী ইউনিয়নে একটি ইফতার অনুষ্ঠানে গেলে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা তাদের কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে এবং হামলায় তাদের ৩ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
ভাণ্ডারিয়া থানার ওসি মো. আসিকুজ্জামান জানান, তেলিখালী এলাকায় একটি ইফতার পার্টি শেষে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও জেপি (মঞ্জু) গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন আছে। আওয়ামী লীগ থেকে দুটি লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে বলে তিনি জানান। বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান থানার ওসি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মঠবাড়িয়া সার্কেল) মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে আছে। দুপক্ষের বেশ কিছু লোক আহত হয়েছে। পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও জানান তিনি।