বড়লেখায় চার প্রার্থীই আ.লীগের, দলে বিভক্তির গুঞ্জন

Daily Ajker Sylhet

admin

২০ এপ্রি ২০২৪, ০১:২৮ অপরাহ্ণ


বড়লেখায় চার প্রার্থীই আ.লীগের, দলে বিভক্তির গুঞ্জন

বড়লেখা সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রথম ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তন্মধ্যে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়েব আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম সুন্দর, আওয়ামী লীগ নেতা দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা মাসুম আহমদ হাসান মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

তাদের মধ্যে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়েব আহমদ সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি মো. শাহাব উদ্দিনের ভাগনা। সোয়েব ২০১৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে দলের মনোনীত নৌকার প্রার্থী রফিকুল ইসলাম সুন্দরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে স্থানীয় এমপি মো. শাহাব উদ্দিন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করেছেন।

এবার দলীয় প্রতীক না থাকায় সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি মো. শাহাব উদ্দিন কারো পক্ষেই সরব হননি। ফলে কার পক্ষে কাজ করবেন, তা নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বেশ কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে।

অন্যদিকে উপজেলা নির্বাচনে চারজন প্রার্থী হওয়ায় বিভক্ত হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় দলের চারজন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন আওয়ামী লীগ নেতা ও এক ছাত্রলীগ নেতা রয়েছেন। এই অবস্থায় দলের নেতাকর্মীরা কার পক্ষে কাজ করবেন, সে বিষয়ে দলের পক্ষে থেকে কিংবা সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি মো. শাহাব উদ্দিনের পক্ষ থেকে তাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। দলীয় প্রতীক না থাকায় এবং কেন্দ্রের কড়া নির্দেশ থাকায় স্থানীয় এমপি মো. শাহাব উদ্দিন অনেকটা নীরব রয়েছেন। যার কারণে দলের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। তাই তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে দিনরাত মাঠে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। তবে দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়েব আহমদের পক্ষে মাঠে কাজ করছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের কয়েকজন নেতাকর্মীরা জানান, এবার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নেই। দলেরও মনোনীত কোনো প্রার্থী নেই। তাই আমরা কার পক্ষে কাজ করব, সে বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে আমাদের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি মো. শাহাব উদ্দিনও কারও পক্ষে প্রকাশ্যে কোনো ধরনের সভা বা প্রচারণায় এখনও অংশ নেননি। এমনকি কার পক্ষে আমরা কাজ করব, তিনি সেই নির্দেশনাও আমাদের দেননি। তিনি অনেকটা নীরব। যার কারণে দলের নেতাকর্মীরা যে যার মত তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে।

উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ আহমদ বলেন, সোয়েব আহমদ ত্যাগী রাজনীতিবীদ। তিনি অতীতে অনেক জেল-জুলুমের শিকার হয়েছেন। তিনি দলের জন্যও ভালো। দলের নেতাকর্মীদের সাথে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া তিনি বিগত ৫ বছরে রাস্তা-ঘাট নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়মূলক কাজ করেছেন। এজন্য দলের অনেকে তার জন্য কাজ করছেন।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক নেতা জানান, মানুষ পরিবর্তন চায়। নির্বাচনে চারজন প্রার্থী হয়েছেন। তাদের মধ্যে যে এলাকার জন্য ও দলের জন্য করবে আমরা তাকেই নির্বাচিত করব।

উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি। দলের জন্য অনেক কাজ করেছি। আমি যখন উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম, তখন ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে আমি দলের মনোনীত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও আমাকে নানা ষড়যন্ত্র করে পরাজিত করা হয়। এবারও তিনি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাপে প্রার্থী হয়েছেন। তারা তার পক্ষে কাজ করছেন।

স্থানীয় এমপি কারও পক্ষে কাজ করছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি কারও পক্ষে কাজ করার কথা নয়। তিনি নিরপেক্ষ থাকার কথা।

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে জয়ী হবেন বলে জানান রফিকুল ইসলাম।

বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোয়েব আহমদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তিনি বিগত ৩৬ বছর ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি অনেক জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিগত নির্বাচনে তিনি দলের নেতাকর্মীদের চাপে-সমর্থনে প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে বিগত ৫ বছরে তিনি গ্রামীণ রাস্ত-ঘাটের উন্নয়নসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। দলের নেতাকর্মীদের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। এবারও তিনি দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের চাপে ও সমর্থনে প্রার্থী হয়েছেন।

সাবেক মন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদ মো. শাহাব উদ্দিন তাঁর মামা হলেও দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে তাঁর (এমপির) যে সম্পর্ক রয়েছে, ঠিক তাঁর সঙ্গে এরকম সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন- এমপি (শাহাব উদ্দিন) বিগত নির্বাচনে নৌকার মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। আমার জন্য কাজ করেননি। এবার তিনি (সোয়েব) দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষকে নিয়ে মাঠে কাজ করছেন। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে তিনি বিপুল ভোটে আবারও জয়ী হবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন বলেন, আমরা চাই নির্বাচন সুন্দর হোক। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করা ঠিক নয়। তবে প্রশাসন কঠোর থাকলে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে বলে তিনি মনে করেন।

Sharing is caring!