Beanibazarer Alo

  সিলেট     বৃহস্পতিবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শবেবরাতে কী করা যাবে ও যাবে না

admin

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৩ | ০৮:২৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৩ | ০৮:২৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
শবেবরাতে কী করা যাবে ও যাবে না

Manual4 Ad Code

আলেমা মাইমুনা ফাহমিদা :
হিজরি বর্ষের ৮ম মাস হলো মাহে শাবান। শাবান মাস রজব ও রমজান মাসের মধ্যবর্তী মাস। এ মাসেই রয়েছে পবিত্র শবেবরাত।

‘শবেবরাত’ বা মধ্য শাবান আরবি নিসফে শাবান বা লাইলাতুল বরাত হচ্ছে হিজরি শাবান মাসের ১৪ তারিখের দিবাগত রাত। তাকে অর্ধ শাবানও বলা হয়। ‘শবেবরাত’ দুটি শব্দের সমষ্টি। প্রথম শব্দটি ‘শব’ ফারসি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে রাত রজনি। দ্বিতীয় শব্দটি ‘বরাত’ আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো মুক্তি। আর ‘শবেবরাত’-এর অর্থ হচ্ছে মুক্তির রাত।

Manual2 Ad Code

শবেবরাত একটি পুণ্যময় রজনী। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা বান্দার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন।

হজরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হল, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; আমি তখন উঠে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়িশা!

তোমার কী এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আপনার দীর্ঘ সেজদা দেখে আমার আশঙ্কা হচ্ছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না?

নবীজী (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই ভালো জানেন। তখন নবীজী (সা.) বললেন, এটা হল অর্ধশাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)

শবে বরাতে আমাদের করণীয়

Manual1 Ad Code

হজরত আবু উমামা বাহেলি (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, যখন শাবান মাস আগমন করত তখন রাসূল (সা.) বলতেন, এ মাসে তোমরা তোমাদের অন্তর্জগৎকে পূতপবিত্র করে নাও এবং নিয়তকে পরিশুদ্ধ ও সঠিক করে নাও। (তাবরানি)

Manual1 Ad Code

অন্তরকে পূতপবিত্র করার কী অর্থ? এর অর্থ হল, বেশি বেশি নেক আমল করা ও তওবা- ইস্তেগফার করা। যখন শাবান মাস আসত, রাসূল (সা.) নফল আমলের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। দিনে রোজা রাখতেন এবং রাতে দীর্ঘ সময় নামাজ পড়তেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করো ও দিনে রোজা পালন করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ)

এ রাতে বিশেষ করে আমরা কয়েকটি আমল করতে পারি।

১. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা ২. জিকির-আজকার করা ৩. দীর্ঘসময় নিয়ে নফল নামাজ পড়া ৪. সালাতুত তাসবীহ পড়া ৫. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা ৬. অধিকপরিমাণে চোখের পানি ঝরিয়ে নিজের জন্য, সমস্ত মুসলমানের জন্য এবং মৃত আত্মীয়-স্বজনের জন্য দোয়া করা। ৭. লায়লাতুল বরাতের পরের দিন রোজা রাখা ৮. একাকী কবর জিয়ারত করা।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজী (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন।

তিনি আরও বলেন, নবীজী (সা.) তাকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া-বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৭৩৯)

ইমাম ইবনে রজব (রহ.) বলেন, শবে বরাতে নফল নামাজের জন্য মসজিদে ভিড় করা কিংবা মাহফিল করা মাকরূহ। (নফল ইবাদাত-বন্দেগি করতে হবে নিজের ঘরে)

তিনি আরও বলেন, একজন মুমিন বান্দার উচিত, এ রাতে জিকির ও দোয়ার জন্য পুরোপুরি অবসর হয়ে যাওয়া।
উচিত হল, প্রথমে খাঁটি মনে তওবা করা; এরপর মাগফিরাত ও ক্ষমা প্রার্থনা করা; আপদ-বিপদ দূর হওয়ার জন্য দোয়া করা এবং নফল নামাজ বেশি বেশি পড়া।

সব সময় সে সব গোনাহ থেকে বিরত থাকা, বিশেষত যেগুলো এই রাতের ফজিলত (ব্যাপক ক্ষমা) থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে। যেমন- শিরক, হত্যা, জিনা, হিংসা ইত্যাদি।

(সূত্র: লাতায়িফুল মাআরিফ ফীমা লিমাওয়াসিমিল ‘আমি মিনাল ওয়াযায়েফ)

শবে বরাতে যা করা যাবে না

১. এই রাতকে উপলক্ষ করে মসজিদে বিপুল পরিমাণ কোনো জনসমাগমের আয়োজন করা যাবে না।

২. শুধু শবে বরাতকে কেন্দ্র করে মসজিদে বা ঘরে প্রয়োজন অতিরিক্ত লাইটিং করা যাবে না।

৩. ইবাদত মনে করে হালুয়া-রুটির আয়োজন করা যাবে না।

৪. ইবাদত মনে করে খাশি জবেহ করা যাবে না।

৫. আতশবাজি,পটকা ফোটানো যাবে না।

Manual4 Ad Code

৬. ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে অযথা ঘোরাফেরা করা যাবে না।

৭. গর্হিত ও অশ্লীল কোনো কাজ করা যাবে না।

৮. অন্য কারও ইবাদতের বা ঘুমের বিঘ্ন ঘটানো যাবে না

৯. এবং দলবেঁধে কবরস্থানেও যাওয়া যাবে না।

বিশেষজ্ঞ আলেমরা মনে করেন, এ রাতে আলোকসজ্জা, পটকা ফোটানো, হালুয়া রুটি ইত্যাদি কুসংস্কার থেকে বিরত থেকে নবি কারিম (সা.)-এর ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করা। দান-সদকা করা ও মানুষদের খাওয়ানো, মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে বিগত সব গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।

সারা রাত জাগ্রত থেকে কুরআন তেলাওয়াত, তসবিহ তাহলিল পড়া, বুজুর্গানে দ্বীন ও আউলিয়া কেরাম ও পূর্ব পুরুষসহ মুরব্বিদের কবর জিয়ারত ইত্যাদি উত্তম আমলের মাধ্যমে এ পুণ্যময় রজনি অতিবাহিত করার উচিত।

শেয়ার করুন