সহিংস ঘটনায় সব সময় পুলিশ কেন টার্গেট!

Daily Ajker Sylhet

admin

০৬ নভে ২০২৩, ১২:৪৬ অপরাহ্ণ


সহিংস ঘটনায় সব সময় পুলিশ কেন টার্গেট!

স্টাফ রিপোর্টার:
মানুষের নিরাপত্তা দিতে গিয়ে নিজের জীবন হারাচ্ছে পুলিশ সদস্যরা। আন্দোলনে পুলিশ সব সময় প্রতিপক্ষের সহিংসতার শিকার হয়। যে কোনো আন্দোলনে পুলিশ যেন বিক্ষোভকারীদের কমন টার্গেট। মানুষের জানমাল রক্ষা, দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকেই সব সময় দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হয়। আর তা করতে গিয়ে নিজেদের জীবনকেই বিপন্ন করে তোলেন তারা। রাজনৈতিক কর্মীদের হিংস্রতার শিকার হয়ে নিজের জীবন দিতে হয়, তার পরেও দায়িত্ব পালন থেকে সরে আসেন না তারা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারকে অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে তারা দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

গত ২৮ অক্টোবর কাকরাইলে রাজনৈতিক কর্মীদের হিংস্র আক্রমণের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ। এর পরবর্তী আট দিনে (২৮ অক্টোবর-৪ নভেম্বর) সারা দেশে বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ডাকা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে ১১৩ জন পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে ১২ জন আইসিইউতে মুমূর্ষু অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। অনেকের হাত-পা ভেঙে গেছে। কেউ কেউ মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন। এরা প্রত্যেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন কি না, এ নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। আর তাদের পরিবার, স্ত্রী-সন্তানরা তাদের বাবা আবার সুস্থ জীবনে ফিরতে পারবে কি না, আর সুস্থ হলেও আবার যে তারা সহিংসতার শিকারে পরিণত হবেন না—এ দোদুল্যমানতা নিয়ে অসহায় ও আতঙ্কিত জীবন কাটাচ্ছেন।

পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজটাই হচ্ছে জানমাল রক্ষা করা। আন্দোলন, দুই পক্ষের মারমুখী পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা, সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের সন্ত্রাসী অপরাধীদের মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু এর বাইরে উন্মত্ত রাজনৈতিক কর্মী, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হতে হচ্ছে পুলিশকে। দেশে শান্তি রক্ষা করতে গিয়ে আজ তারা বিকলাঙ্গ জীবনকে বরণ করে নিতে হচ্ছে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই, তারা এই স্বাধীন বাংলাদেশেরই নাগরিক। তাদেরও পরিবার রয়েছে। রয়েছে স্ত্রী, সন্তান। যাদের ভরন-পোষণের দায়িত্ব তাদের এই পুলিশের চাকরির ওপরে নির্ভরশীল।

রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থাকলে পুলিশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে। কিন্তু যেই ক্ষমতায় থাকে না তখন পুলিশই তাদের কমন টার্গেটে পরিণত হয়। পুলিশ যে এ দেশের সন্তান ও নাগরিক এটা তারা ভুলে যায়।

পুলিশ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হরতাল, অবরোধে হামলার শিকার পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে তাদের অসহায়তার চিত্র উঠে আসে। আহত পুলিশ সদস্যরা আদৌ সুস্থ হয়ে উঠবেন কি না, এ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা চিন্তিত ও আতঙ্কিত দিন কাটাচ্ছেন।

পুলিশ ইন্সপেক্টর আব্দুল কুদ্দুস ২৮ তারিখে আহত হয়েছেন। তার দুই ছেলে, এক মেয়ে। সুস্থ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারব—এটাই আমার প্রত্যাশা। এসআই মাহবুবুর রহমানের অবরোধে বিএনপি কর্মীদের হামলায় হাত ও দুই পায়ে আঘাত পেয়েছেন। কনস্টেবল মনিরুজ্জামান মাথায় আঘাত নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় দিন কাটাচ্ছেন, এএসআই আজমত আলীর বাম হাতের হাড় ফেটে গেছে। তিনিও সুস্থতার প্রত্যাশায় দিন গুনছেন। আর এ পুলিশ সদস্যদের পরিবারের সদস্যরা একদিকে তাদের সুস্থতার প্রত্যাশা করছেন।

আহত পুলিশ সদস্যরা বলেন, আমরা সুস্থ হয়ে দ্রুত দায়িত্ব পালনে কাজে যোগ দেব ইনশাল্লাহ। তারা বলেন, আমরা স্বাধীন দেশের পুলিশ। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পুলিশ বাহিনীই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল, শত শত পুলিশ সদস্য সেদিন জীবন দিয়েছেন। কিন্তু পিছু হটে যাননি। সেই পুলিশ সদস্যরাই এদেশের নাগরিকদের জানমাল রক্ষায় কোনো প্রতিকূলতার কাছে হার মানবেন না। দায়িত্ব পালনকালে আমরা মনে করি, আমরা আমাদের পরিবার ও দেশের নিরাপত্তা দিচ্ছি। করোনা মহামারির সময় অনেকের পিতা-মাতা মারা গেছেন। তাদের আপনজনরা লাশও দেখতে আসেনি। সেই লাশ এই পুলিশ সদস্যরাই দাফন করেছেন। আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। দেশের এ ধরনের যে কোনো দুর্যোগের সময় পুলিশ জনবান্ধব হিসাবে দায়িত্ব পালন করে থাকে, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। তাই সবাই যেন মনে রাখে, পুলিশও মানুষ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, পুলিশের কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজের নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশের পুলিশের পক্ষ থেকে তার সমুদয় পাওনা অর্থ দ্রুততার সঙ্গে পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এটা তো সমাধান না। সেই পরিবারের সন্তান পিতাকে হারিয়েছে, স্ত্রী হারিয়েছে স্বামীকে। এদের জীবন এখন এক বিশাল অন্ধকারের মুখোমুখি। আমরা তো এ দেশেরই নাগরিক। দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে পুলিশকে প্রাণ দিতে হবে—প্রশ্ন তার।

Sharing is caring!