সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার আসামি আ. লীগ নেতা র‍্যাবের জালে

Daily Ajker Sylhet

admin

২১ অক্টো ২০২৪, ০৪:৪৭ অপরাহ্ণ


সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার আসামি আ. লীগ নেতা র‍্যাবের জালে

স্টাফ রিপোর্টার:
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সিলেটের বন্দরবাজারে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক এ টি এম তুরাব হত্যা মামলার ১৫ নং আসামিকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৯। তাদের একটি টিম সেলিম মিয়া নামের এই আসামিকে রবিবার (২০ অক্টোবর) রাতে বন্দরবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতারে করে।

সেলিম মিয়া সিলেট জেলা আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধালীগের সহসভাপতি। তিনি পলাতক ছিলেন। তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি সিলেটভিউ-কে নিশ্চিত করেছেন র‍্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সিনিয়র এএসপি মশিহুর রহমান সোহেল।

তিনি বলেন- এই মামলার সব আসামিকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে র‍্যাব-৯।

শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই সিলেট মহানগরের বন্দরবাজারে বিএনপির মিছিলের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। তিনি দৈনিক নয়াদিগন্ত ও জালালাবাদের রিপোর্টার ছিলেন। ঘটনার এক মাস পর (১৯ আগস্ট) নিহতের ভাই আবুল আহসান মো. আযরফ (জাবুর) বাদী হয়ে সিলেট অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন।

এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল। এজাহারে আসামি হিসেবে পুলিশসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় ২০০ থেকে ২৫০ জনকে।

মামলার ২ নম্বর আসামি হলেন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (ক্রাইম উত্তর) মো. সাদেক দস্তগীর কাউসার, ৩ নম্বর আসামি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, ৪ নম্বর আসামি সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি) মিজানুর রহমান ও ৬ নাম্বার আসামি সেসময়ের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঈন উদ্দিন।

অন্য আসামিরা হলেন- সিলেটের কোতোয়ালি মডেল থানাধীন বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ কল্লোল গোস্বামী, থানার সদ্য সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) ফজলুর রহমান, থানার এসআই কাজি ‍রিপন সরকার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সিসিকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব উদ্দিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পিযূষ কান্তি দে, সিলেট সিটি করপোরেশনের পিআরও সাজলু লস্কর, সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সিসিকের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রুহেল আহমদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক, নগরের চালিবন্দর নেহার মঞ্জিলের বাসিন্দা শিবলু আহমদ (মো. রুহুল আমিন), জেলা আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধালীগের সহসভাপতি সেলিম মিয়া, আজহার ও ফিরোজ।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের মদদপুষ্ট আওয়ামী লীগ দুর্বৃত্তরা ও অবৈধ সরকারের অপেশাদার পুলিশ ও দুর্বৃত্ত দ্বারা ন্যাক্কারজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। আসামিরা সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে একজোট হয়ে বাদীর নিরপরাধ ছোট ভাই সাংবাদিক আবু তাহের মো. তুরাবকে (এটিএম তুরাব) হত্যা করা হয়। দিন দুপুরে শত শত মানুষের সামনে উক্ত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে ২ থেকে ৫ নম্বর আসামি বাদীকে হত্যার হুমকি দেয়। পরে আসামিরা রাষ্ট্রীয় প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাদীকে ঢাকায় নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করান।

অপরদিকে, ঘটনার পাঁচ দিন পর তুরাবের পরিবারের পক্ষ থেকে ৮-১০ জন পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তবে সেটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি পুলিশ।

পুলিশ ওই সময় জানায়- আগেই তাদের পক্ষ থেকে বিএনপি ও জামায়াতের ৩৪ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকশকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছে। তাই তুরাবের ভাইয়ের দায়ের করা অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে রেকর্ড করেছে তারা।

তবে পরবর্তীতে জানা যায়, পুলিশের এজাহারে গুলিতে মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখই নেই। এছাড়া পুলিশের এই মামলা ১ মাস পর্যন্ত কাউকে করেনি তারা। তাই বাধ্য হয়ে তুরাবের পরিবারকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়।

এদিকে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভোররাতে হবিগঞ্জের মাধবপুরের গোপীনাথপুর গ্রামে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করতে গিয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি- তুরাব হত্যা মামলার ৬ নং আসামি মঈন উদ্দিন শিপনকে (৪৩) গ্রেফতার করেছিলো টাস্কফোর্স। তবে তার কাছে অবৈধ অস্ত্র রক্ষিত আছে- এমন কোনো প্রমাণ না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মঈন উদ্দিন গোপীনাথপুর (মাস্টারবাড়ি) গ্রামের ইমাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি ৫ আগস্ট পর্যন্ত সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছিলেন। এর আগে ছিলেন সিলেট এয়ারপোর্ট থানার ওসি।

জানা যায়, সিলেটে পুলিশের গুলিতে নিহত সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলায় সাবেক ওসি মঈনকে গ্রেফতার দেখিয়ে সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের বার্তা দেয়া হয়েছিল। তবে পরে আরেকটি চিঠি ইস্যু করে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত ডিএসবি প্রধান) রেজাউল হক খান জানান, রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৫৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন (হবিগঞ্জ) এর সহকারি পরিচালক মো. ইয়ার হোসেন জানতে পারেন, জেলার মাধবপুর থানার গোপিনাথপুর মাস্টার বাড়ি মনতলা গ্রামে এক ব্যক্তির বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এ সংবাদের প্রেক্ষিতে তিনি তার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেন। এসময় টাস্কফোর্স কর্তৃক অবৈধ অস্ত্র জব্দ করার প্রয়োজনীয়তা থাকায় মনতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের রাত্রীকালীন টহল দলের সহযোগিতা নেন তিনি।

মো. ইয়ার হোসেন ১৪ জন বিজিবি সদস্যের টিম নিয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে রবিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মনতলা গ্রামের মঈন উদ্দিনের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করেন। তবে অভিযানকালে সে বাড়িতে কোনো প্রকার অবৈধ অস্ত্র পাওয়া যায়নি। পরে মঈন উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি সুনামগঞ্জ জেলা হতে ১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স (নং-০৫/২০২২- জগন্নাথপুর) গ্রহণ করলেও এ লাইসেন্সের বিপরীতে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করেননি। তার নামে ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি বৈধ কি না এবং উক্ত লাইসেন্সের বিপরীতে আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে কি না তা যাচাই করতে তাকে নিয়ে বিজিবি দল মাধবপুর থানায় যান। পরবর্তীতে মাধবপুর থানায় রক্ষিত বেসরকারি আগ্নেয়াস্ত্র রেজিস্টার যাচাই করে মঈন উদ্দিনের নামে কোনো আগ্নেয়াস্ত্রের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তার হেফাজতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সটি সঠিক বলে প্রমাণিত হয়।

হবিগঞ্জ জেলা সুপার সেদিন জানান- তিনি (মঈন) একজন পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) পদ মর্যাদার কর্মকর্তা। এ অবস্থায় পুলিশ পরিদর্শক মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিজিবি কর্মকর্তা মো. ইয়ার হোসেনের কোনো অভিযোগ না থাকায় সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে তাকে বাড়ি চলে যেতে দেয়া হয়।

Sharing is caring!