Beanibazarer Alo

  সিলেট     মঙ্গলবার, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্ত্রীর হাত বেঁধে শরীরে গরম পানি ঢেলে দেন শিক্ষক স্বামী

admin

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১১:২১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১১:২১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
স্ত্রীর হাত বেঁধে শরীরে গরম পানি ঢেলে দেন শিক্ষক স্বামী

Manual6 Ad Code

জামালপুর প্রতিনিধি:
জামালপুরে মায়া আক্তার নিশি (১৮) নামে এক কিশোরী গৃহবধূ হাসপাতালের শয্যায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। ঝলসে গেছে তার বুক, পিঠ ও পেট। হাত বেঁধে তাকে নির্যাতনের এক পর্যায়ে শরীরে গরম পানি ঢেলে দেন তার স্বামী। পরে তাকে চিকিৎসা না করে ঘরে সাত দিন তালাবদ্ধ করে রাখেন।

Manual8 Ad Code

এমন অমানবিক নির্যাতনের পর গত সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ওই গৃহবধূকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে জামালপুর শহরের গেটপাড়ে একটি ভাড়া বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় জামালপুর সদর থানায় ওই গৃহবধূর বড় বোন মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন। এ ঘটনায় গৃহবধূর শ্বশুর আশেক আলীকে আটক করেছে পুলিশ। স্বামী আল-আমিন (৩৩) পালাতক রয়েছেন। অভিযুক্ত আল-আমিন জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের চর মল্লিকপুর এলাকাযর বাসিন্দা ও শাহবাজপুর ইউনিয়নের জাফর শাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক।

জানা যায়, প্রায় ১০ মাস আগে মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের নাগেরপাড়া এলাকার প্রবাসী আব্দুল মান্নানের মেয়ে নিশির সঙ্গে আল-আমিনের বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় ঝগড়া বিবাদ। গত ৩ মাস আগে ওই জামালপুর শহরের গেটপাড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসা নেন শিক্ষক আল-আমিন। ওই ভাড়া বাসায় স্ত্রী নিশিকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে ওড়না দিয়ে স্ত্রী নিশির হাত বেঁধে তাকে মারতে শুরু করেন। পরে চা তৈরি করার জন্য রাখা গরম পানি নিশির শরীরে ঢেলে দেন। গরম পানিতে মুহূর্তে ঝলসে যায় তার শরীর। পরে ওষুধের দোকান থেকে কিছু ওষুধ কিনে এনে নিশিকে খাওয়ান। তারপর তাকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখেন। ৭ দিন তালাবদ্ধ থাকার পর নিশি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করে তার পরিবারকে খবর দেন আল-আমিন। এরপর ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যান তিনি। পরে আহত নিশিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মায়া আক্তার নিশি বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে যৌতুকের টাকা দাবি করে কথা কাটাকাটি হয় আমাদের। পরে আমার গলায় টিপে ধরে ও হাত বেঁধে মারতে শুরু করে। এক পর্যায়ে চা বানানোর জন্য করা গরম পানি আমার শরীরে ঢেলে দেয়। গরম পানি ঢেলে আমাকে ছেড়ে দিলে আমি ওয়াশরুমে গিয়ে ঠান্ডা পানি নিয়ে বের হই। এ সময় আমি কান্না করলে, আমাকে দেখে হাসতে থাকে। পরে ওষুধের দোকান থেকে কয়েকটা ওষুধ নিয়ে আসে কাউকে না জানানোর জন্য আমাকে ভয় দেখায়।

Manual7 Ad Code

সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় বাইরে থেকে রুমে তালা মেরে স্কুলে চলে যেত। আবার আমার বিকেল বাসায় আসতো। সাত দিন আমাকে তালা মেরে রেখেছে। শরীরের পিঠে, বুকে, পেটে পোড়ার ক্ষত বেশি থাকায় আমাকে গ্রীন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। অন্যজনের মোবাইল দিয়ে আমি বড় বোনকে ফোন করে। আমার বোন আসার আগেই আল-আমিন পালিয়ে চলে যায়। পরে আমাকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

Manual6 Ad Code

ভুক্তভোগীর মা নার্গিস বেগম বলেন, আমার মেয়ের পিঠ, বুক ও পেট দেখার মতো অবস্থায় নেই। গরম পানি ঢেলে একবারে ঝলসে দিয়েছে। এতটা পুড়িয়ে দিয়েছে যে কেউ দেখলে ভয় পাবে। আমার মেয়ে তো কোনো অপরাধ করেনি। এভাবে নির্যাতন করার কী দরকার ছিল। আমার মেয়েকে নির্যাতনের বিচার চাই।

মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, মানুষ কতটা নির্মম হলে এতটা নির্যাতন করতে পারে। গরম পানি ঢেলে তাকে চিকিৎসা না করে উল্টো ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে রাখে। একজন শিক্ষক স্বামী হয়ে তিনি এই কাজ কিভাবে করতে পারেন। দ্রুত আল আমিনকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।

জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, নিশির শরীরের পিছনেও সামনের অংশ পুড়িয়ে দিয়েছে। শরীরের বিশ শতাংশ পুড়ে গেছে। এই মুহূর্তে আর রোগীর আশঙ্কা নেই। চিকিৎসা চলছে। ধীরে ধীরে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।

জামালপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহব্বত কবীর বলেন, এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আলামিন পলাতক রয়েছেন। ইতোমধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।

Manual6 Ad Code

শেয়ার করুন