Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আওয়ামী ‘ভোটব্যাংক’ দখলে জামায়াত, এনসিপি ও বিএনপির তৎপরতা

admin

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৫ | ০১:০৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৫ | ০১:০৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
আওয়ামী ‘ভোটব্যাংক’ দখলে জামায়াত, এনসিপি ও বিএনপির তৎপরতা

Manual7 Ad Code
স্টাফ রিপোর্টার:

বাংলাদেশে ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ‘ভোটব্যাংক’ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। দল হিসাবে নির্বাচনের বাইরে থাকার সম্ভাবনায় নৌকা সমর্থক ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন দলের মাঠপর্যায়ে তৎপরতা বেড়েছে। এ জন্য স্থানীয় পর্যায়ে নৌকা সমর্থকদের নিরাপত্তা, মামলা, হামলা বা হয়রানি থেকে রক্ষা করার নানা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।

Manual8 Ad Code

রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনিশ্চিত। ফলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠ পর্যায়ের প্রার্থীরা ভোটারদের সমর্থন আদায়ে নানা কৌশল প্রয়োগ করছেন। এ প্রসঙ্গে জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্যও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনায় এসেছে।

গোপালগঞ্জে পরিস্থিতি
জনসমর্থন ও ভোটারের দিক থেকে গোপালগঞ্জকে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জাতীয় নির্বাচনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখানে তিনটি আসনেই নৌকা মার্কা বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়। নৌকার বিপরীত প্রার্থীদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার ঘটনা রয়েছে।

এই গোপালগঞ্জের তিনটি আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবার প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। গোপালগঞ্জ-২ সদর আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী আজমল হোসেন সরদার, পেশায় আইনজীবী, ১৯৯৬ সালে গোপালগঞ্জ-২ থেকে শেষবার নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে থাকবে না ধরে নিয়ে তিনি নৌকার সমর্থকদের ভোট নিজের পক্ষে নিতে মাঠে কাজ করছেন।

মি. সরদার বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থকদের সঙ্গে পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক কাজে লাগাতে চান। তিনি বলেন, ‘তাদেরকে বলি এটা আওয়ামী লীগের জায়গা, যদি আওয়ামী লীগ আবার নির্বাচনের সুযোগ পায়, তাহলে আবারো আওয়ামী লীগে ভোট দিতে পারেন, কিন্তু তারা না আসলে আমাদেরকে দেবেন।’

গোপালগঞ্জে জামায়াতের পক্ষ থেকে নৌকা সমর্থকদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে এবং অজ্ঞাত মামলার নিরীহ আসামীদের ছাড়াতে সহায়তা করা হচ্ছে। মি. সরদার জানান, ৫ আগস্টের পর এবং এনসিপির সঙ্গে সংঘর্ষকে ঘিরে ২০-২৫টি মামলায় ৩০ হাজারের বেশি নামে-বেনামে আসামী হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কৌশল কথার মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। মিথ্যা মামলা ও হয়রানি থাকলেও আমরা মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি। কেউ কেউ মিথ্যাভাবে নাম দেয়, টাকা পয়সা নেয়; আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। এতে সাধারণ ভোটাররা আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।’

গোপালগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতের  সম্ভাব্য প্রার্থী আজমল হোসেন সরদার

বিএনপির অবস্থান
গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংকে নজর রাখছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও। প্রাথমিক মনোনয়নে গোপালগঞ্জ-২ সদর আসনের প্রার্থী কে এম বাবর বলেন, ‘এবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নির্বাচনে থাকবে না। নির্বাচনে না থাকার কারণে সাধারণ মানুষ একাত্তর সালের পক্ষের শক্তি ধানের শীষকে ভোট দেবে।’ তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে প্রতিশোধের রাজনীতি করবে না বিএনপি এবং ভোটারদেরও এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

Manual5 Ad Code

জামায়াতের বক্তব্যে বিএনপির দিকে অভিযোগের ইঙ্গিত থাকার বিষয়ে মি. বাবর বলেন, ‘জামায়াত একটা গুপ্ত সংগঠন। তারা সব সময় অন্য দলের ওপর দায় চাপায়। মিথ্যা মামলা বা হয়রানিতে বিএনপির কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

Manual4 Ad Code

গোপালগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াতের তৎপরতা দেখা গেলেও এনসিপির প্রার্থী এখনো সক্রিয় নয়। তবে অন্য দুটি আসনে এনসিপির প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

শুধু গোপালগঞ্জ নয়, সারা দেশে আওয়ামী লীগের ভোটারদের সমর্থন নির্বাচনে জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত থাকায় নৌকা ভোটব্যাংক দখলে বিভিন্ন দল ও প্রার্থীর তৎপরতা বাড়ছে। জামায়াত ও বিএনপি নেতাদের নৌকা ভোটারদের নিয়ে ইতিবাচক বক্তব্যও ভোটের কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ-২ সদর আসনে বিএনপির প্রার্থী কে এম বাবর

এনসিপির মূল্যায়ন
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, ‘নৌকার ভোটব্যাংক কমেছে, বর্তমানে প্রায় দশ শতাংশের নিচে। আওয়ামী লীগকে নিয়ে জামায়াত ও বিএনপি ইতোমধ্যেই বক্তব্য দিয়েছে, তবে আমাদের নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী ভোটব্যাংক এককভাবে কোনো দল বা কৌশলগত জায়গায় থাকবে না; এটি প্রার্থী এবং এলাকায় বিএনপি, জামায়াত বা এনসিপির প্রার্থীর ওপর নির্ভর করবে।’

তিনি মনে করেন, গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ে ছাত্র ও তরুণদের মধ্যে বড় পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেকরা সরাসরি আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। এ থেকে ভোটারদের মধ্যে পরিবর্তন ঘটবে। মি. আদিব বলেন, ‘যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ড বা স্থানীয় অপরাধে জড়িত ছিল না, তারা হয়তো এখন এনসিপি, বিএনপি বা জামায়াতের মতো ভোট দিতে পারেন।’

এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব

জামায়াতের তৎপরতা
জামায়তে ইসলামী আগামী নির্বাচনে নৌকার ভোটারদের নিজেদের পক্ষে নিতে সক্রিয়। সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সরকার বা আইনগত কারণে আমরা নির্বাচনে আসতে পারছি না, কিন্তু ভোটাররা রয়ে গেছে। যারা সাধারণ ভোটার, তারা আমাদের লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের ক্ষমতাসীন নেতাদের অপরাধের জন্য সাধারণ ভোটার দায়ী নয়।’

তিনি বলেন, ‘নৌকার ভোটদাতা এখন দেখবে কোন দল ইশতেহার কি দিয়েছে, কার চরিত্র সৎ, কারা নিরাপদ।’ জামায়াত হিন্দু ভোটারদের জন্যও তৎপর, মি. পরওয়ার নিজ নির্বাচনী এলাকায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সমাবেশ করেছেন।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার

বিএনপির প্রস্তুতি
বড় দল হিসেবে বিএনপি আত্মবিশ্বাসী। বিভিন্ন স্থানে নেতারা নৌকা ভোট নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ভোটব্যাংক কোনো দিকের নয়; আমাদের প্রোগ্রাম দেশের সব মানুষের জন্য।’ তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সংখ্যালঘুরাও গুরুত্ব পাচ্ছেন।

বিএনপির নেতা বলেন, ‘আমরা পার্টিকুলার ধর্ম বা গোষ্ঠীর জন্য রাজনীতি করি না। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করি। কোনো বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে রাজনীতি হতো না; আমরা রাজনীতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে চাই।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

Manual1 Ad Code

বাংলাদেশে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অনিশ্চিত। ফলে নৌকা ভোটাররা কী করবেন, তার সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

শেয়ার করুন