Beanibazarer Alo

  সিলেট     শনিবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আদালতের নির্দেশের পরেও উত্তোলন হয়নি মরদেহ

admin

প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১১:২৫ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ০১:১৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
আদালতের নির্দেশের পরেও উত্তোলন হয়নি মরদেহ

Manual7 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহতদের মধ্যে ১১৪টি মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়। এক বছর ধরে মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় চলতি বছরের ৪ আগস্ট ঢাকার মূখ্য মহানগর হাকিম আদালত ১১৪টি মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আদালতের এই নির্দেশের ৪৮ দিন পরও মরদেহ উত্তোলন করা হয়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ গত শনিবার বলেন, মেট্রোপলিটন এলাকায় লাশ উত্তোলনের বিষয়টি আইনগতভাবে দেখেন পুলিশ কমিশনার। পুলিশই লাশ উত্তোলন, ময়নাতদন্ত, ডিএনএ প্রোফাইল করে তাদের পরিচয় শনাক্ত করা এবং এ সংক্রান্ত মামলার কার্যক্রম শুরু করার বিষয়গুলো দেখে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে লাশ উত্তোলনের সময় একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হয়। সেক্ষেত্রে আমরা একজন ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানোর নির্দেশনা দিয়ে রেখেছি। যতদূর জানি, পুলিশ কমিশনারের দপ্তর থেকে লাশ উত্তোলনসংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেনি।

Manual4 Ad Code

আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিতকরণের পর পরিবারের কাছে শহিদদের লাশ হস্তান্তরের জন্য আদালতে লাশ উত্তোলনের আবেদন করেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই মো. মাহিদুল ইসলাম। আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৪ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত রায়েরবাজার কবরস্থান থেকে বেওয়ারিশভাবে দাফন করা ১১৪টি লাশ তোলার নির্দেশ দেয়।

গত শনিবার এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি কাজী রফিক বলেন, বিষয়টি যিনি আদালতে আবেদন করেছেন, তিনিই দেখভাল করছেন। এ ব্যাপারে মোহাম্মদপুর থানার এসআই মাহিদুল ইসলাম গত শনিবার বলেন, ‘আদালত নির্দেশনা অনুযায়ী একজন ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আবেদন পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের কোনো নির্দেশনা পুলিশের কাছে আসেনি। নির্দেশনা এলেই আমরা লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত ও সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের মাধ্যমে ডিএনএ প্রোফাইল প্রস্তুত করা হবে।’

Manual4 Ad Code

রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে গিয়ে দেখা যায়, কবরস্থানের বামপাশ দিয়ে এগিয়ে গেলে ৪ নম্বর ব্লকের ৩৭ নম্বর লেনে সারিবদ্ধভাবে দাফন করা রয়েছে জুলাই আন্দোলনে নিহত ১১৪ জনের লাশ। দাফন করা এসব কবরের পুরো জায়গা সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পাকা দেওয়াল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। দেওয়ালের কালো টাইলসের ওপর নামফলকে বড় বড় অক্ষরে লেখা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২০২৪-এর শহীদদের গণকবর’। এছাড়াও পুরো দেওয়াল

জুড়ে বিভিন্ন সুরা লেখা হয়েছে।

কবরগুলোর দেখভালের দায়িত্বে থাকা ও গোরখোদকেরা বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের এই ৪ নম্বর ব্লকে সাধারণত বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গে নাম-পরিচয়হীনভাবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা বেওয়ারিশ লাশগুলো প্রশাসনের মাধ্যমে দাফন করা হতো। গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময়ও যাদের পরিচয় শনাক্ত সম্ভব হয়নি, তাদের এখানে দাফন করা হয়। অন্যান্য কবরে যেমন নামফলকে নাম-পরিচয় উল্লেখ থাকে কিন্তু এই কবরগুলোতে তা নেই। আন্দোলনের সময় একের পর এক লাশ এসেছে আর আমরা মাটি দিয়েছি। বছরখানেক তো খালি অবস্থাতেই ছিল এই কবরগুলো। সম্প্রতি উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পুরো জায়গায় পাকা দেওয়াল করে দেওয়া হয়েছে। তাই ডিএনএ প্রোফাইলের মাধ্যমে কারোর লাশ শনাক্ত করা গেলেও নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়-কাকে ঠিক কোন জায়গায় কবর দেওয়া হয়েছে।’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম বলছে, ‘জুলাইয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন মর্গ থেকে নাম-পরিচয়হীন মোট ৮০টি লাশ পুলিশের মাধ্যমে দাফনের জন্য আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর আগস্টে আরো ৩৪টি লাশ হস্তান্তর করা হয়। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে রায়েরবাজার কবরস্থানে লাশগুলো পর্যায়ক্রমে দাফন করে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। সবশেষ গত ৭ আগস্ট এক জন নারীসহ ছয় জন জুলাইযোদ্ধার লাশ এক বছর ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে রাখার পর হস্তান্তর করা হয় আঞ্জুমানের কাছে। তাদেরকেও বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে জুরাইন কবরস্থানে।’

Manual5 Ad Code

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহত যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী সোহেল রানার মা রাশেদা বেগম বলেন, ‘গত বছরের ১৮ জুলাই আন্দোলনে গিয়ে নিখোঁজ হন তার ছেলে সোহেল রানা। অনেক খোঁজ করার পরও সোহেলের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একটি ভিডিও দেখে বুঝতে পারি-ওটা সোহেলের লাশ। এর ৩৪ দিন পর আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা মরদেহের নথির মধ্যে সোহেলের ছবি খুঁজে পাই। সেখান থেকে জানতে পারি রায়েরবাজার কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে আমার সন্তানকে দাফন করা হয়েছে। এরপর থেকে অনেক বার রায়েরবাজার কবরস্থানে এসেছি কিন্তু কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি, ঠিক কোনটা আমার ছেলের কবর।’

Manual3 Ad Code

বিষয়টি নিয়ে জুলাই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক সোহেল মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লাশ উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে গত সপ্তাহে একটি বৈঠক হয়েছে। আগামী সপ্তাহে একটি বৈঠক রয়েছে। আশাকরি বৈঠকে লাশ কবে উত্তোলন করা হবে-এ ব্যাপারে চূড়ান্ত দিনক্ষণ নির্ধারণ হবে।

শেয়ার করুন