স্টাফ রিপোর্টার:
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলার প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু কবির ওরফে দাঁতভাঙা কবিরকে নিয়ে হাদির অফিসে গিয়েছিলেন—এমন তথ্য উঠে এসেছে আদালতের রিমান্ড শুনানিতে।মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামানের আদালতে রিমান্ড শুনানিকালে এসব তথ্য তুলে ধরেন রাষ্ট্রপক্ষ।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা থেকে ১৫ ডিসেম্বর কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন তাকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ফয়সাল আহমেদ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন বলেন, কবির আদাবর থানার স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। প্রকাশ্য দিবালোকে যে মোটরসাইকেলে করে শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়, সেই মোটরসাইকেলে কবির উপস্থিত ছিলেন। ফয়সাল করিম মাসুদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এবং ফয়সালকে নিয়ে কবিরই হাদির অফিসে যান।
রাষ্ট্রপক্ষ আরও জানায়, ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর কবির আত্মগোপনে চলে যান। হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত অস্ত্র কবির ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করা হয় এবং যে মোটরসাইকেলটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিও তার বলে দাবি করা হয়। অস্ত্র উদ্ধার ও ঘটনার সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছে কি না, তা জানার জন্য রিমান্ড প্রয়োজন বলে জানানো হয়।
শুনানিকালে আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না। এ সময় আদালতে বক্তব্য দেন কবির। তিনি বলেন, তিনি পেশায় উবার গাড়িচালক এবং মাঝে মাঝে ফয়সাল করিম মাসুদ ফোন দিলে তার সঙ্গে যেতেন। গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় ফয়সালের সঙ্গে যাতায়াত ছিল। প্রায় ১৮–২০ দিন আগে ফয়সাল ফোন করে তাকে হাদির অফিসে নিয়ে যেতে বলেন এবং ‘গেলে উপকার হবে’ বলেছিলেন। পরে তিনি ফয়সালকে হাদির অফিসে নিয়ে যান।
মোটরসাইকেল প্রসঙ্গে কবির বলেন, সেটি তার বন্ধু মাউনুদ্দিন ইসলাম শুভ কিনেছিলেন। দুজন একসঙ্গে মোটরসাইকেল কিনতে গেলেও পরিচয়পত্র হিসেবে তার এনআইডি ব্যবহার করা হয়। মোটরসাইকেলের কাগজপত্র শুভর নামে রয়েছে এবং এটি অনেক আগেই কেনা হয়েছিল।
শুনানি শেষে আদালত কবিরের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে, গত ১৪ আগস্ট ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব জাবেদ বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় এরই মধ্যে ফয়সাল করিম মাসুদের স্ত্রী সাহেদা পারভীন সামিয়া, তার বান্ধবী মারিয়া আক্তার লিমা এবং শ্যালক ওয়াহিদ আহমেদ সিপুকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর জুমার নামাজের পর রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোড এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্তের একজন চলন্ত রিকশায় থাকা শরিফ ওসমান হাদির মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সর্বশেষ উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে, বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক।