Beanibazarer Alo

  সিলেট     বৃহস্পতিবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক ম্যাচে ৩১ গোল খেতে কেমন লেগেছিল, জানালেন সেই গোলকিপার

admin

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১২:০৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ১২:০৯ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
এক ম্যাচে ৩১ গোল খেতে কেমন লেগেছিল, জানালেন সেই গোলকিপার

Manual3 Ad Code

স্পোর্টস ডেস্ক:
দুই-চার কিংবা ছয়-সাত গোল হজমও কখনো কখনো গায়ে লাগে না। কিন্তু এক ম্যাচে ৩১ গোল হজম তো আর চাট্টিখানি কথা নয়! সব কিছু ধসে পড়ার মতো অনুভূতি হওয়ার কথা। সেই তিক্ত অনুভূতির মুখোমুখি হয়েছিলেন গোলরক্ষক নিকি সালাপুর।

নিকি সালাপু সে ব্যাপারটাই এভাবে বলেছেন ভদ্র ভাষায়। আসলে কেমন লেগেছিল, সেটিও অবশ্য গোপন রাখেননি। সালাপু সেদিন গোলপোস্টে দাঁড়িয়ে চোখের জল লুকিয়েছেন। সতীর্থরা যেন দেখতে না পান!

বার্সেলোনা গোলকিপার মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেনের একটি উদ্ধৃতি এ ক্ষেত্রে মনে করা যায়, ‘লোকে জানে না, গোলকিপার হওয়া কত কঠিন।’ সালাপু সেদিন সেটিই টের পেয়েছিলেন হাড়ে হাড়ে। প্রতিপক্ষের শক্তির সামনে কুলিয়ে উঠতে না পেরে একের পর এক গোল হজম করেছেন। ধরণী দ্বিধা হও, আমি মুখ লুকাই—এমন অনুভূতি আর কি!

তারিখটা ১১ এপ্রিল ২০০১। সেদিন ২০০২ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ওশেনিয়া অঞ্চলের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল আমেরিকান সামোয়া। কফস হারবারে অনুষ্ঠিত ম্যাচে আমেরিকান সামোয়া হেরেছিল ৩১-০ গোলে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে এটাই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের রেকর্ড এখনো।

Manual5 Ad Code

এতক্ষণে বুঝে যাওয়ার কথা, সেই ম্যাচে আমেরিকান সামোয়ার গোলকিপার ছিলেন সালাপু। লোকে এখনো নাকি তাকে ম্যাচটি নিয়ে জিজ্ঞেস করে। বিবিসির ‘স্পোর্টিং উইটনেস’ পডকাস্টে সেই ম্যাচ নিয়েই কথা বলেছেন সালাপু।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটির জন্য খুব দ্রুত দল গড়তে হয়েছিল আমেরিকান সামোয়াকে। বেশিরভাগই ছিলেন কিশোর বয়সি। আমেরিকান সামোয়ার ফুটবল ফেডারেশন (এফএফএএস) ফিফায় অন্তর্ভুক্তি পেয়েছিল ম্যাচটি খেলার মাত্র তিন বছর আগে। সেই সময় ১ কোটি ৯০ লাখ অধিবাসীর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৫৮ হাজার জনসংখ্যার আমেরিকান সামোয়া এমনিতেই পুঁচকে ছিল।

আর ২০০২ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের আগে ফিফা জানিয়ে দেয়, শুধু আমেরিকান পাসপোর্টধারীরাই প্রশান্ত মহাসাগরের দেশটির জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে ঘোষিত ২০ জনের স্কোয়াডে যোগ্য খেলোয়াড় বাছতে দল উজাড়, টিকেছিলেন শুধু সালাপু। তার ভাষায়, ‘মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে যে কাউকে খুঁজে বের করতে হতো। আমরা হাইস্কুলের ছেলেদের বাছাই করেছিলাম।’

সালাপুর এ কথার ব্যাখ্যা দেবে পরিসংখ্যান। আমেরিকান সামোয়ার দলে ১৫ বছর বয়সি খেলোয়াড় ছিলেন তিনজন। দলের খেলোয়াড়দের গড় বয়স ছিল ১৮ বছর। সালাপু সেই দলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ; তার বয়সই ছিল মাত্র ২০ বছর।

Manual7 Ad Code

বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মতো টুর্নামেন্টে এমন দল নিয়ে যা হওয়ার কথা, তা–ই হয়েছিল। প্রথম রাউন্ডে ফিজির কাছে আমেরিকান সামোয়ার হারের ব্যবধান ১৩-০। পরের ম্যাচে সামোয়ার কাছে হার ৮-০ গোলে। তৃতীয় ম্যাচে হারের ব্যবধান তো ছাড়িয়ে গেল সবকিছুকে ৩১-০! ওই ৩ ম্যাচে ৫২ গোল খাওয়ার পর টোঙ্গার কাছে ৫-০ গোলের হার আমেরিকান সামোয়ার কাছে জয়ের সমান হওয়ার কথা!
খুব কাছে গিয়েও ১৯৯৮ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে উঠতে ব্যর্থ হওয়া অস্ট্রেলিয়া ২০০২ বিশ্বকাপে জায়গা পেতে মুখিয়ে ছিল। নিজেদের প্রমাণে জিদ কাজ করছিল অস্ট্রেলীয়দের মনে। আমেরিকান সামোয়ার আগে অস্ট্রেলীয়দের সেই জিদের অনলে পুড়েছিল টোঙ্গাও। পলিনেশিয়ান দেশটিকে ২২-০ গোলে গুঁড়িয়ে আমেরিকান সামোয়ার মুখোমুখি হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সালাপু জানিয়েছেন, তার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল কোনোভাবেই ‘২২-০ ব্যবধানের হার অতিক্রম করা যাবে না’।

গোলবন্যার ‘ফটক’ খুলেছিল ম্যাচের ৮ মিনিটে। অস্ট্রেলিয়ার ২২ বছর বয়সি স্ট্রাইকার আর্চি থম্পসন একাই করেছিলেন ১৩ গোল। ৮ গোল করেন ডেভিড জিদ্রিলিক। সালাপু জানিয়েছেন, পুরো ম্যাচে তিনি সতীর্থদের ‘সামনে এগোতে’ বলেছেন। কারণ তার সতীর্থরা বেশিরভাগ সময়েই রক্ষণভাগে জড়সড় হয়েছিলেন। এ কারণে বল দেখতে খুব সমস্যা হচ্ছিল সালাপুর। ৮৬ মিনিটে অস্ট্রেলিয়ার পোস্টে একবারই আক্রমণ করতে পেরেছিল আমেরিকান সামোয়া। অস্ট্রেলিয়ার গোলকিপার মাইকেল পেটকোভিচের ম্যাচে সেটাই একমাত্র সেভ।
সালাপু মনে করেন, অস্ট্রেলিয়া যেভাবে খেলেছে, সেটি অখেলোয়াড় সুলভ।

তার প্রশ্ন, ‘(দুই দলের মধ্যে) পার্থক্য গড়তে আপনার কত গোল প্রয়োজন?’ সালাপু জানিয়েছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার কোচ হলে দল ২০ গোল করার পর খেলোয়াড়দের ‘ম্যাচ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত বলের দখল ধরে রেখে খেলতে’ বলতেন।

Manual7 Ad Code

হারের সেই স্মৃতি মনে সইয়ে নিতে সালাপুর প্রায় ১০ বছর লেগেছে। এ সময়ের ব্যবধানে আমেরিকান সামোয়া টানা ৩৮ ম্যাচ হেরেছে ২১৭ গোল ব্যবধানে। ফিফা র্যাংকিংয়ে নেমেছে ২০৪তম স্থানেও (বর্তমানে ১৮৯)।

২০১০ সালে ডাচ বংশোদ্ভূত কোচ টমাস রনজেনকে কোচ করে আনে আমেরিকান সামোয়া। পরিস্থিতি এর পর ধীরে ধীরে পাল্টাতে থাকে। ২০১৪ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে ২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর টোঙ্গার মুখোমুখি হয় আমেরিকান সামোয়া।

সালাপু জানিয়েছেন, সে ম্যাচে ‘আমাদের পুরো দল জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ছিল’। শেষ বাঁশি বাজার পর পূরণ হলো সেই প্রত্যাশাও। টোঙ্গাকে ২-১ গোলে হারায় আমেরিকান সামোয়া—ফিফা স্বীকৃত ম্যাচে সেটাই প্রথম জয় দলটির। সালাপুকে সেদিনও আবেগ সংবরণ করতে হয়েছিল। তার ভাষায়, ‘খুবই ভালো লাগছিল। বারবার মনকে প্রবোধ দিয়েছি, ম্যাচে মনোযোগ ধরে রাখতে আবেগ সামলে রাখতে হবে।’

Manual8 Ad Code

শেয়ার করুন