Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এবার রূপনগর ট্র্যাজেডি : কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে কবে

admin

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৫ | ১২:২৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৫ | ১২:২৭ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
এবার রূপনগর ট্র্যাজেডি : কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে কবে

Manual4 Ad Code

সম্পাদকীয়:
রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১৬ জন শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা আবারও আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের চরম গাফিলতির চিত্র। এটি কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতার এক প্রতিচ্ছবি। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা আবারও প্রমাণ করল আমরা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। পুরান ঢাকার নিমতলী বা চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডিকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে এখনো বিপজ্জনক রাসায়নিক গুদামের মালিকরা জনবহুল আবাসিক এলাকায় বা পোশাক কারখানার পাশেই দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি নিছক একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক হত্যাকাণ্ড, যার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই সংশ্লিষ্ট কারও। গত মঙ্গলবার রাতের এই অগ্নিকাণ্ডে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রাসায়নিক গুদাম থেকে আসা ক্ষতিকর গ্যাসে অজ্ঞান হয়ে এতজনের প্রাণহানি ঘটেছে। জানা গেছে, পোশাক কারখানাটির ছাদের দরজায় তালা লাগানো ছিল। আগুন লাগার পর অনেকে সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু তালা খোলার কেউ না থাকায় রাসায়নিকের বিষাক্ত ধোঁয়ায় অজ্ঞান হয়ে মারা যান।

Manual5 Ad Code

প্রশ্ন হলো, একটি জনবহুল এলাকায় একটি পোশাক কারখানার ঠিক পাশে কীভাবে বিপজ্জনক রাসায়নিকের গুদাম বছরের পর বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে? গুদামটির কি বৈধ লাইসেন্স ছিল? যদি না থাকে, তাহলে কাদের প্রশ্রয়ে চলছিল এই অবৈধ ব্যবসা? আর যদি লাইসেন্স থেকেও থাকে, তাহলে ফায়ার সেফটি ও নিরাপত্তা মানদণ্ড কেন নিশ্চিত করা হয়নি? এই গাফিলতির শিকড় খুঁজতে হবে এবং দোষীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক অবৈধ রাসায়নিক গুদাম। এসব থেকে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। একটি বড় দুর্ঘটনার পর প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা একটু নড়েচড়ে বসে। প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি হয়, কিছুদিন আলোচনা চলে, কিন্তু সমস্যার মূলোৎপাটন হয় না। অতীতের ট্র্যাজেডিগুলোর পর যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তার অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে রূপনগরের মতো ঘটনা বারবার ঘটছে। এ পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হলে কেবল তদন্ত নয়, কঠোর পদক্ষেপ অপরিহার্য। অবিলম্বে সব আবাসিক এলাকা ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে রাসায়নিক গুদামগুলো সরিয়ে নিতে হবে এবং লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি শিল্প-কারখানায় জরুরি বহির্গমন পথ খোলা ও সুরক্ষিত রাখা এবং অগ্নি-নিরাপত্তার আধুনিক সরঞ্জামাদি নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। শ্রমিকদের নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ মহড়া ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সর্বোপরি, এই নিয়মগুলো যারা লঙ্ঘন করবে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

Manual2 Ad Code

রূপনগরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কর্তৃপক্ষের অবহেলার বিষয়টিকেই আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে। প্রশ্ন হলো, এরপরও কি কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে? এ ধরনের আর কোনো ট্র্যাজেডির মুখোমুখি হতে চাই না আমরা। কাজেই অনতিবিলম্বে রাজধানীর আবাসিক এলাকাগুলো থেকে সব রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা সরিয়ে নিতে হবে। এজন্য প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মেঘে মেঘে অনেক বেলা হয়েছে। আমরা আর কোনো অজুহাত বা আশ্বাসবাণী শুনতে চাই না। এখন যা দরকার তা হলো, কাজের মাধ্যমে প্রমাণ দেওয়া এবং এজন্য কাউকে না কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব নিতে হবে।

Manual4 Ad Code

শেয়ার করুন