স্টাফ রিপোর্টার:
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন একজনের ছবি প্রকাশ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য জানাতে পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
তবে পুলিশের বিবৃতিতে সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম–পরিচয় দেওয়া হয়নি। সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তির ব্যাপারে সমকালের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে– তার নাম ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে রাহুল। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নে। বাবার নাম হুমায়ুন কবির। দীর্ঘ দিন তারা আদাবরে বসবাস করনে। কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন ফয়সাল।
২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সদস্য হয়েছিলেন তিনি। তার পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা ফয়সালকে প্রধান সন্দেভাজন হিসেবে চিহ্নিত করে তদন্ত কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। দেশত্যাগ ঠেকাতে তার ব্যাপারে এরই মধ্যে সব বিমানবন্দর, স্থলবন্দর ও সীমান্তে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া প্রধান সন্দেহভাজনের ছবি প্রকাশ করে তার ব্যাপারে তথ্য ও সন্ধান জানতে চেয়েছে পুলিশ। সেই ছবির সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল করিম মাসুদের চেহারার মিল রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের ৮ নভেম্বর ফয়সালকে রাজধানীর আদাবরে একটি অফিসে ঢুকে ১৭ লাখ টাকা লুটের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হয়। তিন মাসের মাথায় তিনি জামিন পান। পরে আগস্টে জামিনের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। এই অ্যাকাউন্টটি যে ফয়সালেরই তা ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা নিশ্চিত করেছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তিকে। লিংকডইনে ফয়সাল নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিনটি প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।
ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা ফেসবুকে হাদিসহ কয়েকজনের একটি ছবি প্রকাশ করে তিনজনকে চিহ্নিত করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, এই তিনজনকে যেকোনো মূল্যে ধরিয়ে দিন। বাংলাদেশের জনতা আপনারাই ইনকিলাব কর্মী, আপনারাই এই ভার হাতে নিন। প্রশাসন কোথায় আমাদের আপডেট দিবে, তা না করে উল্টো আমাদের কাছেই আপডেট চাইতেছে।
সূত্র জানিয়েছে, ওসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য (রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানী নেতৃত্বাধীন কমিটি) ফয়সাল করিম দাউদ খান একই ব্যক্তি।
এদিকে ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।