গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে ফিরছেন ফখরুল

Daily Ajker Sylhet

admin

১২ ডিসে ২০২৪, ০৩:৫৫ অপরাহ্ণ


গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে ফিরছেন ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার:
প্রায় ১২ দিনের লম্বা সফর শেষে যুক্তরাজ্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নিয়ে দেশে ফিরছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। সফরকালে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান বৈঠক করার পাশাপাশি যুক্তরাজ্য বিএনপির আলোচনা সভা, মিট দ্য প্রেসসহ একাধিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন মির্জা ফখরুল।

পাশাপাশি বিএনপি মহাসচিবের স্ত্রীর চিকিৎসাও করা হয়েছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলকে আরও শক্তিশালী করা, দলের চেইন অব কমান্ড বজায় রাখা, ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করাসহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন বিষয়ে বিএনপি মহাসচিবকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলে বাংলাদেশ ও লন্ডনের সংশ্লিষ্ট সূত্র কালবেলাকে জানিয়েছে।

নির্বাচন, সংস্কারের সময়সীমা এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার কিছু সিদ্ধান্ত নিতে চায়। এ সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত করার আগে তারা বিএনপির মতামত জানাটা দরকার মনে করছে। এসব পরিকল্পনা সংক্রান্ত সরকারের প্রস্তাব নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করতে ও সিদ্ধান্ত জানতেই মির্জা ফখরুলের লন্ডন যাত্রা।

গত ৩০ নভেম্বর সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে সস্ত্রীক ঢাকা ছাড়েন মির্জা ফখরুল। সেখানে তিনি স্ত্রীর চিকিৎসার পাশাপাশি তারেক রহমানের সঙ্গে একাধিক ইস্যুতে বৈঠক করেছেন। সাংগঠনিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি দুবার লন্ডন গিয়েছিলেন। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন ও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবারই প্রথম সরাসরি লন্ডনে যান মির্জা ফখরুল।

মূলত বিএনপির শীর্ষ দুই নেতার আগ্রহে দলীয় এবং রাজনৈতিক কাজে লন্ডন সফর করলেন তিনি। লন্ডনে পৌঁছালে যুক্তরাজ্য বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীর ভালোবাসায় সিক্ত হন বিএনপি মহাসচিব। বিএনপি মহাসচিবের সহকারী ইউনূস আলী গতকাল কালবেলাকে বলেন, স্যার (মির্জা ফখরুল) বৃহস্পতিবার (আজ) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

জানা যায়, মির্জা ফখরুল লন্ডনে পৌঁছানোর পর ৩ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত রয়েল রিজেন্সিতে এক আলোচনা সভায় অংশ নেন। এরপর তিনি যুক্তরাজ্যের সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানেও বক্তব্য দেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন মির্জা ফখরুল। লন্ডনের সারে এলাকার গিলফোর্ড হারবার হোটেলে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মূলত এসব বৈঠকে দেশের চলমান কঠিন পরিস্থিতিতে দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি, শরিক দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও সুনিবিড়, ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় এবং দলীয় বিভিন্ন কঠিন ও জটিল কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার বিষয়ে তারেক রহমান গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ইস্যু, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা, সব দলের মতামতের ভিত্তিতে প্রণীত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখাকে অধিকতর প্রচারণা ও কার্যকর করা এবং চলমান পরিস্থিতিতে বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে আরও গতিশীল করার লক্ষ্য নির্ধারণ নিয়ে তারেক অধিকতর নির্দেশনা দিয়েছেন।

বিএনপির একাধিক নেতা আলাপকালে জানান, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতন ঘটে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ৮ আগস্ট রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরই মধ্যে কয়েক দফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ।

সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শেষে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। অবশ্য বিএনপিসহ সব দল দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের জন্য দলগতভাবে একক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যে সব দল ও জোট তাদের সঙ্গে ছিল, সেই মিত্রদেরও নির্বাচনে পাশে রাখতে চায় দলটি। এ ছাড়া জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলোর অবস্থান কী হয়, এর ওপর নজর রেখেছে তারা। এসব বিষয়ে সরাসরি কথা বলতেই যুক্তরাজ্য যান মির্জা ফখরুল। এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য লন্ডন সফর করেছেন বলে জানা গেছে।

গত মঙ্গলবার লন্ডন বিএনপির নেতাকর্মীদের মতবিনিময় সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ ও বিএনপির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যেসব প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে, তা প্রতিরোধে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাইবার জগতে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। এখন শুধু স্লোগান দেওয়ার রাজনীতি নয়, এখন তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মিথ্যা ও অপতথ্যের বিরুদ্ধে সাইবার জগতে যুদ্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর ভারত থেকে প্রচার করা হলো যে, বাংলাদেশে বিএনপি সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করছে। মুহূর্তে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু এই মিথ্যা অপবাদের বিরুদ্ধে বিএনপির নেতাকর্মীরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে যথাযথ প্রতিরোধ করতে পারেননি বলে আমি মনে করি।

মির্জা ফখরুল বলেন, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে চারজন ব্রিটিশ এমপি বিএনপি ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তার মানে, আমরা এখানে ব্যর্থ হয়েছি। আমরা সঠিক চিত্রটি তাদের কাছে পৌঁছাতে পারিনি। এ জায়গাটায় আমাদের সজাগ ও সতর্ক হতে হবে।

যুক্তরাজ্য বিএনপিকে একটি সোশ্যাল মিডিয়া সেল গঠন করার পরামর্শ দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তিতে পারদর্শী অনেকে আছেন, যারা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিএনপি ও বাংলাদেশকে সাহায্য করতে চান। তাদের সহযোগিতা নিয়ে আপনাদের সাইবার জগতের যুদ্ধ জোরালো করতে হবে। রাষ্ট্রব্যবস্থা ও কাঠামোর পরিবর্তনের জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। এই ৩১ দফা একটা ম্যাগনাকার্টা। এটা হচ্ছে নতুন সৃষ্টি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটা রোডম্যাপ। সবার কাছে এই ৩১ দফা তুলে ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।

যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক সভায় সভাপতিত্ব করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ এ অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন। মতবিনিময় সভায় যুক্তরাজ্যের প্রতিটি শহর থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

Sharing is caring!