গোয়াইনঘাটে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যণকেন্দ্র যখন মারণ ফাঁদ
২৫ নভে ২০২৪, ১২:১৫ অপরাহ্ণ
গোয়াইনঘাট সংবাদদাতা:
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সেবার মান খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে জনবল ও চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা। ফলে গ্রাম্য চিকিৎসক বা ওষুধের দোকানদাররাই রোগীদের ভরসা। রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদের ছুটতে হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এদিকে তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্র জানা গেছে,গোয়াইনঘাট উপজেলায় ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র আছে। তার মধ্যে পশ্চিম জাফলং, রুস্তুমপুর,আলীরগাঁও ও তোয়াকুল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র শুধু “আয়া”নির্ভর। অপর দিকে নন্দিরগাওঁ, ফতেহপুর ও ডৌবাড়ী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যণ কেন্দ্রে আছেন একজ পরিবার কল্যাণ পরিদর্শকা ও একজন আয়া।
চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর জন্য সরকার ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন। তবে ইউনিয়ন অনুপাতে ঘাটতি রয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। যেসব ইউনিয়নে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র রয়েছে সেগুলোয় নানা সংকটের কারণে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আশানুরূপ সেবা পাচ্ছে না। উপজেলাবাসীর ভরসা সাতটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। কিন্তু পদ থাকলেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। সাতটি কেন্দ্রের প্রধান ১৪ পদের ৯টি পদই শূন্য। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অধীনে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিটিতে সৃষ্ট জনবলের পদ রয়েছে পাঁচটি উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার একজন, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক একজন, ফার্মাসিস্ট একজন ও এমএলএসএস একজন ও আয়া একজন।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় গর্ভবর্তী মায়েদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তান জন্মদানের পুরোটা সময়জুড়ে চিকিৎসা নিতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন তারা। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য, প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা, পিল, কনডম, ইমপ্লাসন, আইইউডি এবং গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী অন্যান্য সেবা দেওয়া হয়। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন গর্ভবর্তী মায়েরা। কেন্দ্রগুলোতে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন প্রসবকালীন সেবা প্রদান করার কথা থাকলেও জনবল সংকটের কারনে তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে স্থানীয় রোগীদের এক প্রকার নিরুপায় হয়েই যেতে হচ্ছে জেলা শহরের প্রাইভেট ক্লিনিকে। নন্দিরগাওঁ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক রোকেয়া বেগম বলেন, প্রতিদিন প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ জন রোগী ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে তাদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সরজমিনে
নন্দিরগাওঁ ইউনিয়নের দারিরপার গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা লক্ষী রানী দাস বলেন, ‘এখানে বড় ডাক্তার নাই। গরিব মানুষ আমি, গোয়াইনঘাট উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সিলেট ওসমানী মেডিকেলে যাইয়া ডাক্তার দেখাতে অনেক টাকা খরচ হইবে। এইখানে একজন ডাক্তার থাকলে তাঁরে দেখাতে পারতাম।’
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বদরুল ইসলাম জানান, কেন্দ্রগুলোয় জনবল সংকটের বিষয়টি উল্লেখ করে ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জনবল সংকটের কথা জানিয়েছি। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।’