Beanibazarer Alo

  সিলেট     রবিবার, ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে ‘নিখোঁজের’ ৬ বছর পর কাস্টমস কর্মকর্তার মরদেহ মিললো ফেনীতে

admin

প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | ১২:১১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | ১২:১১ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
চট্টগ্রামে ‘নিখোঁজের’ ৬ বছর পর কাস্টমস কর্মকর্তার মরদেহ মিললো ফেনীতে

Manual4 Ad Code

ফেনী প্রতিনিধি :
ফেনীর ছাগলনাইয়ায় আবদুল আহাদ (৪৬) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। শুরুর দিকে ওই ব্যক্তির পরিচয় না মিললেও পরে তার পকেটে থাকা একটি চেকের সূত্র ধরে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিন্তু ওই ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবর পরিবারের কাছে পৌঁছাতেই শুরু হয় নতুন বিপত্তি।

পরিবারের দাবি, প্রায় ৬ বছর আগে নিখোঁজ হন কাস্টমস কর্মকর্তা আবদুল আহাদের (৪৬)। এরপর অপহরণকারী পরিচয়ে তার মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু টাকা দেওয়ার পরও তার সন্ধান মিলেনি। এরপর প্রায় ৬ বছর ধরেই নিখোঁজ ছিলেন তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকালে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে অজ্ঞান অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে ছাগলনাইয়া থানা ওসি মো. আবুল বাশারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল তাৎক্ষণিক হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। এ সময় মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে পুলিশ তার সঙ্গে থাকা কাগজপত্র দেখতে গিয়ে উত্তরা ব্যাংক ফেনীর বিরিঞ্চি শাখার একটি চেক পান। চেকে হিসাবের নাম আবদুল আহাদ উল্লেখ রয়েছে। পরে পুলিশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে হিসাব নম্বর জানালে, তারা আবদুল আহাদের পরিচয় নিশ্চিত করেন।

ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশার বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী নিহত আবদুল আহাদ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার হাজীপুর ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের ইমানী মিয়ার ছেলে বলে জানা যায়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

Manual5 Ad Code

এদিকে নিহতের পরিচয় শনাক্তের পর স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। নিখোঁজ ব্যক্তি ফেনীতে ব্যাংক হিসাব কী করে খুললেন তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

Manual2 Ad Code

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিহতের ছোট বোন নাঈমা নাসরিন মনি মুঠোফোনে বলেন, আমার ভাই একসময় সিলেট ব্রিটানিকা উইমেন্স কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। পরবর্তীতে সিলেট বিমানবন্দরে কাস্টমসের অডিটর পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে চাকরি করেন। এরপর একইপদে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পরে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কর্তব্যরত অবস্থায় ২০১৯ সালের ১ মে হঠাৎ তার মুঠোফোন বন্ধ পাই। পরে একটি নম্বর থেকে কল দিয়ে আমাদের জানানো হয় আবদুল আহাদকে অপহরণ করা হয়েছে। বিকাশে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ পাঠালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন বলেন, অপহরণকারীদের দাবি অনুযায়ী তখন আমরা দুই লাখ টাকা পাঠিয়েছি। এরপর তাদের নম্বরে যোগাযোগ করলেও বন্ধ পাই। অন্যদিকে আমার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকেও পাইনি। পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করার ছয় বছর পরও ভাইকে আর পাইনি। বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জানতে পারি ফেনীর ছাগলনাইয়ায় আমার ভাইয়ের মরদেহ পাওয়া গেছে।

একই প্রসঙ্গে কথা হয় নিহতের ভাগিনা মোস্তাফিজুর রহমান সাকিফের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার মামার দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। ছোট মেয়ে গর্ভে থাকাকালীন তিনি নিখোঁজ হন। এর মাঝে ছেলের নিখোঁজের শোকে আমার নানা-নানী দুইজনই মারা গেছেন। দীর্ঘ ছয় বছর আমরা মামাকে খোঁজাখুঁজি করে পাইনি। তিনিও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এখন তার মরদেহ পেলাম। বিষয়টি রহস্যজনক।

Manual1 Ad Code

এ বিষয়ে জানতে নিহতের স্ত্রী মাহবুবা আক্তার সুমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে আবদুল আহাদের মরদেহ বুঝে নিতে তার বড় ভাই আবদুল নুর বাড়ি থেকে ফেনীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলে জানান বোন নাঈমা নাসরিন মনি।

Manual1 Ad Code

ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, নিহতের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে স্ট্রোকজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

শেয়ার করুন