Beanibazarer Alo

  সিলেট     বুধবার, ১৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জকিগঞ্জে কঠিন চ্যালেঞ্জে প্রার্থীরা

admin

প্রকাশ: ০৪ জুন ২০২৪ | ১২:৪২ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৪ | ১২:৪২ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
জকিগঞ্জে কঠিন চ্যালেঞ্জে প্রার্থীরা

Manual5 Ad Code

জকিগঞ্জ সংবাদদাতা:
সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৫ জুন বুধবার। সোমবার মধ্যেরাত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। প্রার্থীরা বসে নেই। নিরবে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভোট চাইছেন।

সীমান্তের এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী (দোয়াত কলম), জমিয়ত নেতা মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরান (কাপ পিরিচ), জেলা যুব সংহতির সদস্য সচিব মর্তুজা আহমদ চৌধুরী (আনারস), জাপা নেতা আব্দুশ শুক্কুর (মোটরসাইকেল)। আনুষ্ঠানিক প্রচার প্রচারণায় প্রার্থীরা বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হয়েছেন। নির্বাচিত হলে নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ভোটারদেরকে।

Manual6 Ad Code

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চারজন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ভোটারদের কাছে মূল আলোচনায় আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী (দোয়াত কলম) এবং জমিয়ত নেতা মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরান (কাপ পিরিচ)।

এই দুই প্রার্থীকে ঘিরে এখন ভোটারদের সব হিসেব-নিকেশ চলছে। কে হচ্ছেন উপজেলা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কোন কমতি নেই। চেয়ার ধরে রাখতে শেষ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন লোকমান উদ্দিন চৌধুরী। আর চেয়ারে বসতে মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরানও চেষ্ঠার কমতি করছেন না। রোববার থেকে লোকমান উদ্দিন চৌধরীর পক্ষে মাঠে নেমেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ড. হাফিজ আহমদ মজুমদার মাঠে নেমেছেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরীকে বিজয়ী করতে নির্বাচনী জনসভায় উন্নয়নের জন্য দোয়াত কলম প্রতীকে ভোট প্রয়োগ করতে ভোটারদেরকে আহবান জানিয়েছেন। তবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কোন্দল-বিরোধ প্রকাশ্যে চলে এসেছে। আগে থেকে আওয়ামী লীগে বিরোধ থাকলেও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে দলের মধ্যে এই বিরোধ তুঙ্গে পৌছেঁছে। প্রভাব পড়েছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। জকিগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি তিনটি ধারায় বিভক্ত। সাবেক এমপি হাফিজ আহমদ মজুমদার সমর্থিত গ্রæপের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী।

এ গ্রুপ থেকে তিনি চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী। জকিগঞ্জ উপজেলায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবিরের পৃথক দুটি শক্তিশালী গ্রুপ রয়েছে। এই দুটি গ্রæপের মধ্যে গত সংসদ নির্বাচনে মাসুক উদ্দিন আহমদ নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ড. আহমদ আল কবির স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।

কিন্তু তখন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী নিরবতা পালন করেন। অভিযোগ রয়েছে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরীর পক্ষে কাজ করেছেন। এই ক্ষোভে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন গ্রæপ ও মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির গ্রুপের শীর্ষ নেতাকর্মীরা এখন প্রকাশ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির বিজয় ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন। জমিয়ত নেতা মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরানকে আওয়ামী লীগ নেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়ে তাঁকে বিজয়ী করতে সাধারণ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইছেন। এতে সাধারণ ভোটারদের ধারনা অনেকটা বেকায়দায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী এবং ভোটের মাঠে অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে চলে এসেছেন মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরান। এরআগে ২০১৪ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও দলের বিরোধের কারণে বিএনপির প্রার্থী ইকবাল আহমদের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন লোকমান উদ্দিন চৌধুরী।

Manual2 Ad Code

সাধারণ ভোটাররা আরও জানান, আওয়ামী লীগের কোন্দলের কারণে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী ভোটের মাঠে ধরাশায়ী হতে পারেন জমিয়ত নেতা মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরানের কাছে। এর কারণ হিসেবে ভোটাররা মনে করেন, একদিকে আওয়ামী লীগের বড় দুটি গ্রুপ লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এবং অন্যদিকে লোকমান উদ্দিন চৌধুরীর বড় একটি ভোট ব্যাংকে ভাগ বসিয়েছেন জাপা নেতা আব্দুশ শুক্কুর (মোটরসাইকেল)।

তবে অনেকে মনে করেন, এখন পর্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও শেষ পর্যন্ত উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরীকে সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লোকমান উদ্দিন চৌধুরী ও মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরান ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছেন জাতীয় পার্টি নেতা মর্তুজা আহমদ চৌধুরী, জাতীয় পার্টি নেতা আব্দুশ শুক্কুর। এই দুই প্রার্থীও দিনরাত গ্রামেগঞ্জে ভোট চেয়ে উন্নয়নের নানা অঙ্গীকার দিয়েছেন। উপজেলার প্রত্যান্তঞ্চলে এই দুই প্রার্থীরও ভোট ব্যাংক রয়েছে। শেষ পর্যন্ত জাপা এই দুই নেতাও মূল লড়াইয়ে স্থান করে নিতে নানা চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হলে তাঁরাও বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন।

ভোটাররা বলছেন, ঝড়বৃষ্টি না হলে ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ব্যাপক হবে। কেননা, উপজেলার সব ধারার নেতারা ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছেন। ইসলামপন্থী দলের নেতারা তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে মরিয়া। নিরবে বিএনপির অনেক নেতারা ভোটের রাজনীতে আছেন। পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও ভোটারদেরকে কেন্দ্রে আনতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন।

Manual3 Ad Code

ভাইস চেয়ারম্যান পদে শেষ পর্যন্ত ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদে আল ইসলাহ নেতা বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুস সবুর (চশমা), উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজমল হোসেন (মাইক), উপজেলা যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম সুহেল (তালা), যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক লস্কর (টিউবওয়েল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শেষ পর্যন্ত মাওলানা আব্দুস সবুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজমল হোসেন, উপজেলা যুবলীগ নেতা নুরুল ইসলাম সুহেলের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মাজেদা রওশন শ্যামলী (কলস) ও সুলতানা বেগম (ফুটবল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ উন্নয়ন চায়। বিগত পাঁচ বছর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। বিপুল ভোটে জয় হবে আমার। দলের কিছু সংখ্যাক নেতাকর্মী বিরোধিতা করলেও ভোটের মাঠে প্রভাব পড়বেনা। সাধারণ মানুষ উন্নয়নের পক্ষে রয়েছেন।’

চেয়ারম্যান প্রার্থী জমিয়ত নেতা মাওলানা বিলাল আহমদ ইমরান বলেন, ‘সাধারণ মানুষ উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন চায়। আমার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ আমার পক্ষে। জয় সুনিশ্চিত। প্রভাবমুক্ত ও অবাদ সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করা হলে বিপুল ভোটে আমার বিজয় হবে।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী জাপা নেতা মর্তুজা আহমদ চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সাধারণ মানুষ উন্নয়নের জন্য পরিবর্তন চায়। জয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।

চেয়ারম্যান প্রার্থী জাপা নেতা আব্দুশ শুক্কুর বলেন, জনগন তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। প্রচার প্রচারণায় তিনি ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। বিজয়ের ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।

জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাবেদ মাসুদ বলেন, ‘এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সজাগ রয়েছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আশা করি ভোটের দিনেও শান্তিপূর্ণ থাকবে। কাউকে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দেওয়া হবেনা।’

Manual7 Ad Code

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসলিম বলেন, ‘জকিগঞ্জে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে যা যা করার তার সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর কোনো সুযোগ থাকবে না। ভোট কেন্দ্র দখল কিংবা অরাজকতার চেষ্ঠা কেউ করলে তাঁদেকে তাৎক্ষণিক আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

শেয়ার করুন