Beanibazarer Alo

  সিলেট     সোমবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তদন্ত কমিটির কাছে যুগ্ম সচিবের তথ্য গোপন

admin

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৩ | ০১:২৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৩ | ০১:২৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
তদন্ত কমিটির কাছে যুগ্ম সচিবের তথ্য গোপন

Manual6 Ad Code

রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির কাছে অনেক তথ্য গোপন করেছেন।

রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির মুখোমুখি করা হয় তাকে। এ সময় তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সুলতানা জেসমিনকে র‌্যাবের হাতে তুলে দেওয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় এড়িয়ে যান।

Manual8 Ad Code

এমনকি তার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে জেসমিনকে আটকের ঘটনাও অস্বীকার করেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বিভাগী কমিশনার কার্যালয়ের তদন্ত টিম শুধু তার বক্তব্যের ভিত্তিতেই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ওই প্রতিবেদনের আলোকে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া কিছুটা কঠিন বলে মনে করছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন পদস্থ কর্মকর্তা।

তিনি জানান, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে পাঠানো প্রতিবেদনটি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি এতে পরিপূর্ণ তথ্য-উপাত্ত বা বক্তব্য না আসে তবে আরও অধিকতর তদন্ত হবে।

Manual1 Ad Code

অপর একটি সূত্র জানায়, যুগ্ম সচিব এনামুল হকের মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এমনকি জেসমিন সুলতানার মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডিংও যাচাই করা হচ্ছে। জেসমিন সুলতানার সঙ্গে ভিন্ন নম্বর দিয়ে যুগ্ম সচিবের একাধিকবার মোবাইল ফোনে কথোপকথন হয়েছে।

এসব কথায় জেসমিন সুলতানার সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা। র‌্যাবকেও সংস্থাটি এসব তথ্য যাচাই করতে বলেছেন।

এদিকে র‌্যাব হেফাজতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যু ও দাফনের বিষয়ে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে।

কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন রাজশাহী বিভাগের একজন সংগঠন জানান, সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর একদিন পর তার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর হাসপাতালের হাম্মামখানায় জেসমিনের মরদেহের গোসল করানো হয়। র‌্যাবের আটককারী টিমের তত্ত্বাবধানে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তার শেষ গোসল হয়।

তিনি আরও জানান, কোয়ান্টামের নারী স্বেচ্ছাসেবীরা জেসমিনের মরদেহের গোসল করান। এরপর কাফন পরিয়ে দেন তারাই। কাফনে মোড়ানো মরদেহ কফিনে করে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন র‌্যাব সদস্যরা। জেসমিনের মরদেহের দাফনও হয়েছে র‌্যাবের পাহারায়।

Manual2 Ad Code

অপর দিকে, জেসমিনকে আটক ও তার মৃত্যুর ঘটনা সরেজমিন অনুসন্ধান করেন রাজশাহীর কয়েকজন বিশিষ্ট আইনজীবী ও কয়েকজন সমাজসেবক। নওগাঁ থেকে ফিরে এসে শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। এ সময় বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রকাশ করেন।

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অনুসন্ধান দলের সদস্য, রাজশাহীর বিশিষ্ট গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ, রাজশাহী বারের সিনিয়র আইনজীবী হাসনাত বেগসহ আরও কয়েকজন আইনজীবী।

অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসউদ বলেন, জেসমিনের মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পর তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের কথা বলা হলেও নিজ বাড়িতে মরদেহের গোসল দেওয়া হয়নি। র‌্যাব বলেছে, গোসল তারা করিয়ে নিয়ে গেছে। কফিন থেকে কাফন পরানো মরদেহ বের করে শুধু দাফন করে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের সদস্যরা মরদেহের মুখ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পারেননি।

এদিকে, সুলতানা জেসমিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডারসহ যে ১১ জনের বিরুদ্ধে সদর দপ্তর থেকে তদন্ত হচ্ছে সে বিষয়ে কেউ কোনো তথ্য দিতে চাচ্ছেন না। কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে ১১ জনের বিষয়ে তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের টিম তদন্ত করছে। আজকালের মধ্যে ওই টিম তাদের রিপোর্ট সদর দপ্তরে দাখিল করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ওই টিম ছাড়াও র‌্যাবের গোয়েন্দা ইউনিট থেকে পৃথকভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা এবং পুলিশের একটি টিম এ নিয়ে কাজ করছে। এরই মধ্যে জেসমিনকে তুলে নিয়ে যাওয়া ও হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগে র‌্যাব জয়পুরহাট কোম্পানি র‌্যাবের ১১ জনকে ক্লোজ করা হয়েছে। তাদের কঠোর নজিরদারির মধ্যে র‌্যাব-৫ ব্যাটালিয়নে রাখা হয়েছে।

তিনি শনিবার সন্ধ্যায় জানান, তাদের (অভিযানে সম্পৃক্ত ১১ জন) বিষয়ে তদন্ত শেষ হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না।

জানা গেছে, নওগাঁও ভূমি অফিসের কর্মচারী জেসমিন সুলতানাকে র‌্যাবের হাতে তুলে দেওয়া ও পরে তার ইন্ধনে নির্যাতনের ঘটনায় যুগ্ম সচিব এনামুল হক ফেঁসে যেতে পারেন-এমন আশঙ্কায় তাকে রক্ষার জন্য কেউ কেউ চেষ্টা তদবির করছেন। যেভাবে তার বিরুদ্ধে ছন্দা জোয়ার্দার নামে এক নারীর দায়ের করা প্রতারণা মামলা ও বিভাগীয় তদন্ত থেকে তাকে রক্ষায় তৎপর ছিল ওই গ্রুপটি। তার ব্যাচের কিছু কর্মকর্তা বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদারকি করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়। তারা যেকোনো মূল্যে এনামুল হককে রক্ষা করতে চান। ফলে প্রকৃত সত্য উদঘাটন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

এনামুল হক নিজেও একটি প্রতারণা মামলার আসামি। তার বিরুদ্ধে ওই মামলার বিচার এখনো চলছে। ভুক্তভোগী ছন্দা জোয়ার্দারের দায়ের করা প্রতারণা মামলার পর তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হলেও তা প্রতিপালন করা হয়নি। তার বিরুদ্ধে তদন্ত না করে তা ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছে।

অপর দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ভূমি অফিসের কর্মচারী জেসমিনকে র‌্যাবের হাতে তুলে দেওয়ার অভিযোগ এখনো খতিয়ে দেখছে প্রশাসন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, যুগ্ম সচিব এনামুল হক নিজে উপস্থিত থেকে জেসমিনকে র‌্যাবের হাতে তুলে দিয়েছেন। র‌্যাবের কর্মকর্তারাও বলেছেন, জেসমিনকে আটকের সময় এনামুল হক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। অথচ এনামুল হক সেই তথ্য তদন্ত কমিটির কাছে চেপে গেছেন।

সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি তার বক্তব্যের সত্যতা যাছাই না করেই তদন্ত রিপোর্ট মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছে।

Manual6 Ad Code

এ বিষয়ে সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম শহীদ খান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী তদন্তকালে সম্ভাব্য সব পক্ষের মতামত নিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করার কথা। তবে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসাবে আংশিক তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া দোষের কিছু নয়। পরে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের সময় সব পক্ষের মতামত নেওয়া হবে বলে আমি মনে করি।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) মো. আব্দুস সবুর মন্ডল বলেন, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনারের তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। ঘটনায় যুগ্ম সচিব এনামুল হকের সম্পৃক্তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অপর দিকে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ বলেন, বিষয়গুলো তদন্ত হচ্ছে।

গত ২২ মার্চ বুধবার সকাল ১০টার দিকে শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে রাজশাহী র‌্যাব-৫ এর একটি দল মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে সুলতানা জেসমিনকে (৪৫) আটক করে। পরে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই নারীর মৃত্যু হয়। জেসমিন সুলতানা সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন।

জেসমিনকে র‌্যাব আটকের পরদিন রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাটি করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এনামুল হক।

 

শেয়ার করুন