Beanibazarer Alo

  সিলেট     সোমবার, ১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দিনের পর দিন পরিবারের অশ্রুসিক্ত অপেক্ষা, ফিরবেন কি আনসার আলী?

admin

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪ | ০২:১০ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২৪ | ০২:১০ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
দিনের পর দিন পরিবারের অশ্রুসিক্ত অপেক্ষা, ফিরবেন কি আনসার আলী?

Manual1 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
মা এবং স্ত্রী-কন্যা নিয়েই ছিল সুখের সংসার। ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। পেশাগত আয়ে সুখেই কাটছিল দিন। পরিবারের একমাত্র শিশু কন্যাকে ঘিরে শেষ ছিল না আনন্দের। দূরে থাকলেও মেয়ের কাছে পড়ে থাকত মন। স্বপ্ন বুনছিলেন তাকে ঘিরেই। ফুসরত পেলেই কণ্ঠ শুনতেন ফোনে। বাড়ি ফিরলে বিরাজ করতো ঈদানন্দ। রাজ্যের খুশি ভর করতো শিশু কন্যার মনে। আব্বুর কোল থেকে যেতে চাইতো না আর।

Manual4 Ad Code

ছোট্ট মেয়েটি যখন দুই বছরের, তখনই এক মধ্যরাতে পরিবারে নেমে আসে বিষাদের ছায়া। বিএনপির জনপ্রিয় নেতা এম. ইলিয়াস আলীর সাথে ‘নিখোঁজ’ হন তিনি। নিখোঁজ আনসার আলী ছিলেন ইলিয়াস আলীর ব্যক্তিগত গাড়ি চালক। নিখোঁজের পর পরিবারে নেমে আসে কেবলই হাহাকার আর রাজ্যের শূণ্যতা। একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে দিশেহারা পরিবার। শুরু হয় অজানা আতঙ্কের প্রহর গোনা। কেটে যায় যুগ। তবুও ফুরোয়নি ছেলের জন্যে মায়ের, স্বামীর জন্যে স্ত্রীর আর পিতার জন্যে কন্যার অশ্রুসিক্ত অপেক্ষা। ছেলের ফেরার পথ চেয়ে চেয়ে পৃথিবী ছাড়েন মা। আর দূর্বিষহ জীবনে একটু স্বস্তির আশায় দেশ ছাড়েন অসহায় স্ত্রী-কন্যা।

Manual1 Ad Code

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের গোমরাগুল গ্রামের মৃত ইছব আলীর ছেলে আনসার আলী ছিলেন ইলিয়াস আলীর গাড়ী চালক। আত্মীয়তার সুবাধে ইলিয়াসকে চাচা ডাকতেন তিনি। ছিলেন ইলিয়াস আলীর খুবই বিশ্বস্ত। ২০ বছর ধরে বসবাস করতেন ইলিয়াস আলীর রাজধানীর বাসাতেই। বাড়ি আসলে সময় কাটাতেন শিশু কন্যা চাঁদনিকে নিয়ে। তার আয়েই চলতো সংসার। যে রাতে নিখোঁজ হন, ওই রাত ১১টার দিকে পরিবারের সদস্যদের সাথে সর্বশেষ কথা হয় আনসার আলীর। পরে রাতেই পরিবারে খবর আসে ইলিয়াস আলীর সঙ্গে আনসার আলীও নিখোঁজ হয়েছেন।

Manual2 Ad Code

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে দেশের প্রভাবশালী রজনীতিবীদ এম. ইলিয়াস আলীর সঙ্গে নিখোঁজ হন গাড়ীচালক আনসারও। এরপর থেকে সন্ধানে দিনরাত এক করেছে পরিবার। চেয়েছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও। তবুও সন্ধান মেলেনি তার।

অসুুস্থ মা নূরজাহান বেগমের (৬০) অগাধ বিশ্বাস ছিল, একদিন ফিরবে খোকা। সে অপেক্ষায় থেকেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। নিখোঁজের সময় মেয়ে মারিয়া মাহজাবিনের বয়স ছিল ২ বছর। তার এখন ১৪। তিনি জানেন না তার বাবা কোথায়? কবে ফিরবেন?

নিখোঁজের পর ইলিয়াস পরিবার ও স্বজন-শুভাকাঙ্খীদের আর্থিক সাপোর্টে চলছিল পরিবার। সংসারের অন্যান্য খরচ যোগান দিতে বুকচাপা কষ্ট নিয়ে হাল ধরেন স্ত্রী মুক্তা। শুরু করেন শিক্ষকতা। কিছুদিন চাকুরী করেন সিলেট সিটি করর্পোরেশনেও। একসময় এ চাকুরীও ছাড়তে হয়। তাকে ঘিরে ধরে চরম অসহায়ত্ব। তবুও সংসারের সকল টানাপোড়েনের চেয়ে আনসারের সন্ধান না পাওয়াই কারণ হয়ে দাঁড়ায় নিদারুন মানসিক কষ্টের। পরে, গেল ডিসেম্বরে যুক্তরাজ্যে অবস্থানকরা ভাইয়ের সহযোগিতায় দূর্বিসহ জীবনে একটু স্বস্তি ও মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তায় ক্রমান্বয়ে তিনি ও তার মেয়ে চাঁদনী পাড়ি জমান যুক্তরাজ্যে।

Manual2 Ad Code

এদিকে, হাসিনা সরকার পতনের পর নিখোঁজ অনেকে ফিরলেও সুরাহা হচ্ছে না ইলিয়াস ও আনসার ‘নিখোঁজ রহস্যে’র।

নিখোঁজ আনসার আলীর স্ত্রী মুক্তা বেগম বলেন, ‘নিখোঁজের পর থেকে এখন অবধি কঠিন সময় পার করছি আমরা। তাড়া করে ফিরছে দুঃসহ যন্ত্রণা। কোন অবস্থায় আছি-আল্লাহ ছাড়া বুঝার সাধ্য নাই কারো। উনার পথ চেয়ে মারা গেলেন মা (শ্বাশুড়ি)। অবশেষে মেয়েকে নিয়ে আমাকে পাড়ি দিতে হলো যুক্তরাজ্যে। আল্লাহ চাইলে কি না হয়? নিখোঁজ অনেকেই তো ফিরেছেন। আমরা আশায় আছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস তিনি ফিরবেন।’

শেয়ার করুন