‘ধর্ষণ’র শিকার কিশোরীর গর্ভপাত করাতে করা হয় বর্বর নির্যাতন!

Daily Ajker Sylhet

admin

১০ সেপ্টে ২০২৩, ০৭:০৪ অপরাহ্ণ


‘ধর্ষণ’র শিকার কিশোরীর গর্ভপাত করাতে করা হয় বর্বর নির্যাতন!

ওসমানীনগর প্রতিনিধি:
সিলেটের ওসমানীনগরে সনাতন ধর্মালম্বী ১৭ কিশোরীর ধর্ষণ মামলায় ‘ধর্ষক’র ভাইকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। থানায় নেওয়া যুবক রঞ্জু দেব (৪৫) উপজেলার নিজ বুরঙ্গা গ্রামের রাখাল দেবের ছেলে ও ‘ধর্ষক’ সজু দেবের বড় ভাই।

রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে রঞ্জু দেবকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। বিকাল ৫টার দিকে ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রঞ্জু দেবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে। এখনো তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এর আগে ১১ জুলাই ভুক্তভোগী কিশোরী বাদি হয়ে ইউপি সদস্য দিপংকর দেব শিবু, রঞ্জু ও বাসু দাস নামের স্থানীয় কথিত ডাক্তারকে আসামি করে সিলেট আদালতে মামলা দায়ের করে। পরে ২৪ আগস্ট মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-কে নির্দেশ দেন আদালত।

মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, রঞ্জু দেবের ছোট ভাই সজু কর্শিক ধর্ষিত হওয়ার পর ওসমানীনগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২ মে ধর্ষিতার পিতা মামলার আবেদন করলে থানাপুলিশ মামলাটি আমালে নিলেও সজুকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। মামলা দায়েরের পর সজুর বড় ভাই রঞ্জু দেব, ইউপি সদস্য দিপংকর দেব শিবু, স্থানীয় কথিত ডাক্তার বাসু দাস ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কিশোরীকে গর্ভপাতের প্রস্তাব দিলে সে তা প্রত্যখান করে। পরবর্তীতে ৪ জুলাই দুপুরে রঞ্জু দেব ও শিবু দেব কিশোরীর বাড়ীতে এসে ৫ জুলাই সন্ধ্যা ৭টার দিকে পবিত্র হিন্দু ধর্মের বিবাহ রীতি মোতাবেক শিবু দেবের সিটিং রুমে সংক্ষিপ্ত পরিসরে বিবাহের মঙ্গলাচরন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার আশ্বাস দেন। নির্ধারিত সময়ে নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হলে কিশোরীসহ তাদেরকে সেখানে আটকে রাখা হয়।

এসময় কথিত ডাক্তার বাসু এমএম কিট নামক ২ বক্স ট্যাবলেট ওই কিশোরীর হাতে দিয়ে এবং শিবু পানি দিয়ে ঔষধ সেবনের জন্য জোর-জবরদস্তি করলে কিশোরী রাজি না হওয়ায় তাকে বর্বর শারিরিক নির্যাতন করা হয়। ঔষধ সেবনে করাতে ব্যর্থ হয়ে একটি সাদা কাগজে জোরপূর্বক কিশোরীর টিপসই রাখে অভিযুক্তরা।

পরবর্তীতে নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের চিৎকারে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বালাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে প্রেরণ করেন। পরে এই ঘটনায় গত ১১ জুলাই সিলেট সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি ১ নং আদালতে ইউপি সদস্য দিপংকর দেব শিবু, রঞ্জু দেব ও বাসু দাসকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী কিশোরী। পৃথক দুটি মামলা হলেও মূল অভিযুক্ত সজুকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২০ অক্টোবরে ভোরে ওই কিশোরী পূজার ফুল তুলতে গিয়ে সজুর ধর্ষণের শিকার হন। পরবর্তীতে বিয়ের প্রতিশ্রুতিতে আরও কয়েকবার তাকে ধর্ষণ করে সজু। একপর্যায়ে কিশোরী শারীরিক পরিবর্তন ঘটলে বিষয়টি জানাজানি হয়। সজুর পক্ষ হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য দীপংকর দেব নগদ ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কথিত ডাক্তার বাসু দেবের মাধ্যমে ওই কিশোরীর গর্ভপাত ঘটিয়ে বিষয়টি মিমাংসার জন্য চাঁপ প্রয়োগ করেন।

এই বিষয়ে পঞ্চায়েতের লোকজন সালিশে বসলে নির্ধারতি দিনে ইউপি সদস্যসহ সজুর পরিবারের কেউ উপস্থিত হননি। পরে ২ মে থানায় সজুকে আসামি করে সংশ্লিষ্ট আইনে মামলা দায়ের করেন কিশোরীর পিতা। চার দিন পর রাতে মামলার বাদীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে কথিত ডাক্তার বাসু দাশের চেম্বারে আটকে রাখা হয়। বাসু দাশসহ অভিযুক্ত সজুর ভাই রঞ্জু দেব, দিপংকর দেব ৫ লক্ষ টাকা গ্রহণের মাধ্যমে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার ও কিশোরীর গর্ভপাত করাতে চাপ সৃষ্টি করেন।

পরে এই ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন মামলার বাদী ও নির্যাতিতার পিতা।

এসব ঘটনার মধ্যে গত ২৩ জুলাই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন ওই কিশোরী।

হাসপাতাল থেকে ফিরে কিছুদিন বাবার বাড়িতে অবস্থান করে গত বৃহস্পতিবার স্ত্রী ও সন্তানের স্বীকৃতির দাবিতে অভিযুক্তের বাড়িতে গিয়ে উঠেন কিশোরী। সকাল ৯ টা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত ওই বাড়িতে অবস্থান নিলেও ঘরের কেউ দরজা না খোলায় স্ত্রী-সন্তানের স্বীকৃতি পেতে আত্মহত্যার হুমকি পর্যন্ত দেন কিশোরী।

খবর পেয়ে থানাপুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্তের পরিবারের লোকজনদের সাথে কথা বলতে না পেরে ওই কিশোরীকে গভীর রাতে শিশুসহ ফের বাবার বাড়িতে পৌছে দেয়।

শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে কিশোরীর বাবার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়- শিশুসন্তান নিয়ে একটি ঘরে বসে আছেন তিনি। তবে এতদিন পর্যন্ত অভিযুক্ত সজু গ্রেফতার না হওয়ায় অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছেন তিনি। সামাজিকভাবে হেয়-প্রতিপন্ন হচ্ছেন বলে জানান তিনি। ওই কিশোরী সজুর স্ত্রী ও ছেলের পিতৃপরিচয় চান।

এদিকে, ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে ১৯ জুন ওসমানীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানায় নির্যাতিতার পরিবার।

Sharing is caring!