নানা অজুহাতে বন উজাড়
০৯ মে ২০২৪, ০৫:৩৭ অপরাহ্ণ
সম্পাদকীয়:
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় যখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশ বনায়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে, তখন বিভিন্ন অজুহাতে ধ্বংস করা হচ্ছে আমাদের দেশের বনাঞ্চল। বুধবার খবরে প্রকাশ-প্রভাবশালী ব্যক্তি ও বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান তো আছেই, এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামেও ধ্বংস করা হচ্ছে বন। পরিসংখ্যান বলছে, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশে যেখানে ২৫ শতাংশ বন থাকার কথা, সেখানে রয়েছে মাত্র ১০ দশমিক ৭৪ শতাংশ। বিশেষজ্ঞের মতে, খাতাকলমে এ হিসাব দেখানো হলেও বাস্তবে তাও নেই। এ অবস্থায় বন ও পরিবেশ গবেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, বনের শত্রু বনসম্পদ রক্ষায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই। তারা ব্যক্তিস্বার্থে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেয় বনাঞ্চল। পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্রও বলছে, এমন অভিযোগে তথা বন উজাড়ে জড়িত শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এরই মধ্যে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।
জানা গেছে, গত কয়েক বছরে শুধু কক্সবাজারে ২৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ বন উজাড় হয়েছে। এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের হাতে ১০ শতাংশ এবং বাকি ৯০ শতাংশ উজাড় হয়েছে স্থানীয়দের মাধ্যমে। আবার বনায়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ ও উদ্যোগ নেওয়া হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা ব্যর্থ হচ্ছে। যেমন, ২০২২-২০২৩ অর্থবছর দেশে ৭ কোটি ৯০ লাখ ৮৫ হাজার ৬০০টি গাছের চারা লাগানো হলেও অধিকাংশই আর টেকেনি। আবার বন রক্ষায় আইনেও দুর্বলতা রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। ফলে আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিয়েও রয়েছে সংশয়।
আমরা মনে করি, বনাঞ্চল রক্ষায় আইনের বিধান কঠোর ও যুগোপযোগী করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্বশীল আচরণেরও প্রয়োজন আছে। সাধারণত বন বিভাগের নামে সংরক্ষিত বন থাকলেও তা রক্ষার দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের। সেক্ষেত্রে বন ও বনসম্পদ রক্ষায় জেলা প্রশাসকরা কেন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছেন না, তাও খতিয়ে দেখা দরকার। এছাড়া বনের জমিতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা, বনের আশপাশের জমিতে সরকারি-বেসরকারি শিল্পকারখানা ও স্থাপনা তৈরিতে বরাদ্দ প্রদান, বনকেন্দ্রিক অনিয়ম-দুর্নীতি এবং বনের জমি জবরদখলের মাধ্যমে বন ধ্বংসের বহুমুখী কর্মযজ্ঞ চলছে বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তারও সত্যতা নিশ্চিত হওয়া দরকার। বনসম্পদ ও বনভূমি রক্ষায় নিয়োজিতরাই যদি ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তাহলে তা পরিবেশের জন্য যে একটি মারাত্মক অশনিসংকেত, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। বনের যেসব কর্মীর মদদে বনভূমি জবরদখল ও উজাড় হচ্ছে, তাদেরও যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বন রক্ষায় যদি অধিদপ্তরের সদিচ্ছার ঘাটতি থাকে, তবে এর কারণ উদ্ঘাটন করে সে ব্যাপারেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া পরিবেশের স্বার্থেই জরুরি।
বনায়নের উদ্যোগের পাশাপাশি বনভূমি পুনরুদ্ধারেও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশ কীভাবে বনায়ন রক্ষা ও বৃদ্ধিতে কাজ করছে, সে সম্পর্কে জেনে আমাদের আবহাওয়ার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলে তা অনুসরণে জোর দিতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস করার কারণে বন ও বন্যপ্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী এবং বনজ সম্পদ রক্ষায় সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেবে, এটাই কাম্য।