Beanibazarer Alo

  সিলেট     মঙ্গলবার, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: জেন-জি বিপ্লবের পরবর্তী টার্গেট কে

admin

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | ১১:৪৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: জেন-জি বিপ্লবের পরবর্তী টার্গেট কে

Manual2 Ad Code

নিউজ ডেস্ক:
নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একের পর এক যুব-নেতৃত্বাধীন আন্দোলন রাজনৈতিক পালাবদল ঘটিয়েছে। প্রসঙ্গ ও প্রেক্ষাপট আলাদা হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব বিদ্রোহকে একসূত্রে গেঁথে রেখেছে একটি প্রজন্ম—যারা রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভঙ্গুর প্রতিশ্রুতি আর অচল ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

গত সপ্তাহেই নেপালে হাজারো তরুণ-তরুণী রাজধানী কাঠমান্ডুতে রাস্তায় নামে। সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত আন্দোলনের সূচনা ঘটালেও প্রকৃত ক্ষোভ জমে ছিল বৈষম্য, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিকে ঘিরে।

Manual7 Ad Code

তিন দিনের বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ৭০ জনেরও বেশি নিহত হয়। ক্ষুব্ধ জনতা পার্লামেন্ট ভবন, রাজনৈতিক দলের নেতাদের বাসভবন এমনকি নেপালের বৃহত্তম গণমাধ্যম অফিসেও আগুন দেয়। প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য হন।

অন্যদিকে, একই সময়ে প্রবাসী নেপালি তরুণরাও ডিসকর্ড অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন ভোটে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের নজির গড়েন। বিশ্লেষকদের মতে, এটাই প্রমাণ করে রাজনৈতিক ব্যবস্থার বাইরে থেকেও জেন-জি নিজেদের কণ্ঠ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হচ্ছে।

এর আগের বছর, ২০২৪ সালে, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়।

Manual1 Ad Code

তবে পুলিশের দমন-পীড়ন ও শত শত মানুষের মৃত্যু আন্দোলনকে রূপ দেয় সরকারের পতনের দাবিতে। ছাত্রনেতারা আল্টিমেটাম দিলেও আন্দোলন ছিল ছড়িয়ে থাকা একাধিক নেতৃত্ব কাঠামোয়।

সরকারের ইন্টারনেট বন্ধ করা, দমননীতি কিংবা ভয়ভীতি কোনো কিছুই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারতের উদ্দেশে দেশত্যাগ করেন।

বাংলাদেশেরও আগে, ২০২২ সালে, শ্রীলঙ্কা ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। বৈদেশিক ঋণ খেলাপি হয়ে পড়া দেশটিতে দিনে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট, জ্বালানি ও গ্যাসের দীর্ঘ সারি এবং মুদ্রাস্ফীতি ৫০ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়।

তখন জন্ম নেয় ‘আরাগালায়া’ আন্দোলন, যার অর্থ ‘সংগ্রাম’। রাজধানী কলম্বোয় ‘গোটাগোগামা’ নামের প্রতীকী গ্রাম গড়ে তরুণেরা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলন শুরু করে। জুলাই মাসে প্রেসিডেন্টের বাসভবন দখল করার পর রাজাপক্ষ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এসব আন্দোলনের মূল ভিত্তি একই—সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতি ও প্রজন্মের অচলাবস্থা।

দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী ২৮ বছরের নিচে। তুলনামূলক কম মাথাপিছু আয়ের দেশ হলেও সাক্ষরতার হার ৭০ শতাংশের বেশি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শিক্ষা ও তরুণ জনসংখ্যার মিশ্রণই আন্দোলনগুলোকে ব্যাপক ভিত্তি দিয়েছে।

Manual8 Ad Code

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, ‘যুবসমাজ তাদের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কোনো সংযোগ খুঁজে পাচ্ছে না। তাদের জীবনের বাস্তবতা ও রাজনীতিকদের বিলাসবহুল জীবনের ব্যবধান খুব বেশি।’

বিশেষজ্ঞদের আরেকটি পর্যবেক্ষণ হলো, কোভিড-১৯ মহামারির সময় ঘরে বন্দি হয়ে থাকা তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। সেই অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক সংগঠনে ও আন্দোলনে বিরাট ভূমিকা রাখে। ফলে ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করা উল্টো সরকারের জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়ায়।

কাঠমান্ডু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জীবান শর্মার মতে, নেপালের তরুণেরা বাংলাদেশের ও শ্রীলঙ্কার আন্দোলন ঘনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করেছে।

অন্যদিকে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল স্ট্যানিল্যান্ড বলেন, এসব আন্দোলন একে অপরকে অনুপ্রাণিত করছে এবং ভবিষ্যতের জন্য এক ধরনের ডিজিটাল প্রতিবাদের কৌশল তৈরি করছে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুমেলা সেন মন্তব্য করেন, ‘এই প্রজন্মের স্লোগানগুলো শুধু ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং ন্যায়বিচার, কর্মসংস্থান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।’

প্রশ্ন এখন একটাই—দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশে পরবর্তী বিদ্রোহ ফেটে পড়বে?

Manual3 Ad Code

বিশ্লেষকদের মতে, সামাজিক বৈষম্য, দুর্নীতি আর প্রবীণ নেতৃত্বের সঙ্গে অসংলগ্ন প্রজন্মের সংঘাত যেখানে প্রবল, সেখানেই নতুন তরঙ্গ উঠতে পারে।

শেয়ার করুন