সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘এশিয়ান এলিফ্যান্ট স্পেশালিস্ট গ্রুপের’ বৈঠকে পাথারিয়ার সংরক্ষিত বনে পুরুষ হাতি ছাড়ার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেছেন, সেখানে শ্রীলঙ্কার বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞরা উদ্যোগটিকে স্বাগত জানালেও ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা আপত্তি তোলেন।
বন বিভাগের নথি বলছে, পাথারিয়ার সংরক্ষিত বনটি ভারতের আসাম রাজ্য–সংলগ্ন। তিন দশক আগেও আসামের বনাঞ্চল থেকে এক দল হাতি নিয়মিত পাথারিয়ার বনে যাতায়াত করত। পরে ভারত সীমান্তে কাঁটাতার নির্মাণ করলে এ সংখ্যা কমে আসে।
মৌলভীবাজারভিত্তিক বন্য প্রাণী সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন ‘স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেনজারড ওয়াইল্ডলাইফের’ প্রতিষ্ঠাতা সোহেল শ্যাম বলেন, হাতির বিলুপ্তি ঠেকাতে এটি ইতিবাচক একটি উদ্যোগ। তবে পুরুষ হাতি ছাড়া হলে সেটার প্রভাব কী পড়বে, নারী হাতি কীভাবে পুরুষ হাতিকে গ্রহণ করবে, এ রকম বৈশ্বিক কোনো উদাহরণ আছে কি না, সব বিবেচনায় নিয়ে এটা করতে হবে।
সোহেল আরও বলেন, এসব প্রটোকল মানা না হলে আবার অন্য ধরনের সমস্যা দেখা দেবে। উদ্যোগটি সফল হলে হাতিগুলো সংরক্ষণ কীভাবে করা হবে, সে বিষয়ে পরিকল্পনা থাকতে হবে। বনে তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করা, হাতি-মানুষ সংঘাত যে কয়েকটি জেলায় দেখা যায়, সেগুলোয় কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, এসব বিবেচনায় নিয়ে এগোতে হবে।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বন বিভাগের অধীনে থাকা দেশের দুটি সাফারি পার্কের যেকোনো একটি থেকে হাতি নিয়ে তা পাথারিয়ার বনে ছাড়ার পরিকল্পনা আছে বন বিভাগের।
বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী বলেন, চার মাস ধরে হাতি তিনটিকে আর পাথারিয়ার বনে দেখা যাচ্ছে না। এগুলো ভারত আর বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকে।
এরই মধ্যে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে এই বন সংক্ষক বলেন, এ তিনটি হাতি মূলত আধা গৃহপালিত। মালিক মারা গেলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরিকল্পনা আছে সাফারি পার্ক থেকে যেকোনো একটা পুরুষ হাতি এখানে ছাড়া হবে। তবে ছাড়ার পর ফলাফল কী হচ্ছে, তা জানতে দীর্ঘসময় ধরে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে।
বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এশীয় হাতি
আইইউসিএন বলছে, বাংলাদেশে হাতি মহাবিপন্ন হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও ভারতে তা বিপদাপন্ন। এর অর্থ বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে হাতির অবস্থা ও সংখ্যা ভালো। ভারতে বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ হাজার হাতি আছে। আর বাংলাদেশে হাতির সংখ্যা ২৬৭।
বিশ শতকের শুরুতে এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে—পারস্য উপসাগর থেকে ভারত ও চীন পর্যন্ত, একসময় এক লাখেরও বেশি এশীয় হাতি বিচরণ করত। কিন্তু গত তিন প্রজন্মে তাদের সংখ্যা অন্তত ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এখন বিশ্বের বড় অংশে মানুষ বাস করছে হাতির আবাসস্থলের ভেতরে বা আশপাশে। আবাসস্থল ধ্বংস ও খণ্ডিত হওয়া, শিকার ও বন্য হাতি বেচাকেনা—সব মিলিয়ে হাতির টিকে থাকা ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে।