Beanibazarer Alo

  সিলেট     সোমবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

‘পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন মইরা গেছে’

admin

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৩ | ০৬:২৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৩ | ০৬:২৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
‘পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন মইরা গেছে’

Manual5 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
বড় হয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল কিশোরী নাদিয়া আক্তারের (১৬)। গুলিতে তার দাদা মারা যাওয়ার পর থেকে সেই স্বপ্ন আর দেখছে না। কিশোরী নাদিয়া বলে, ‘পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন মইরা গেছে।’

নাদিয়া আক্তার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার বরগাঁ এলাকায় র‍্যাবের সঙ্গে এলাকাবাসীর হট্টগোলের সময় গুলিতে নিহত বৃদ্ধ আবুল কাশেমের নাতনি। নাদিয়ার বাবা নজরুল ইসলামকে র‍্যাব শুক্রবার রাতেই আটক করে। পরে র‍্যাবের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল রোববার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই মামলায় বৃদ্ধ কাশেমের আরেক ছেলে জহিরুল ইসলামকেও আসামি করা হয়েছে।
সোমবার দুপুরে আবুল কাশেমের বাড়িতে গেলে বাড়ির উঠানে এলাকার নারী, কিশোর ও কিশোরীদের জটলা দেখা যায়। অপরিচিত মানুষ বাড়ি এসেছে দেখে তাঁরা যে যাঁর মতো দৌড়ে আড়ালে যেতে থাকেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কয়েকজন নারী এগিয়ে আসেন। সঙ্গে আসে কিশোরী নাদিয়া আক্তারও। এ সময় বাড়িতে কোনো পুরুষকে দেখা যায়নি।

পুলিশ ভেবে ভয় পেয়েছিল বলে জানায় কিশোরী নাদিয়া। সে বলে, ‘দাদারে খুন করার পর বাবারেও জেলে নিয়া গেছে। এখন শুনি, আমার চাচাগো বিরুদ্ধেও মামলা হইছে। যেকোনো সময় নাকি পুলিশ আমাগো বাড়ি আইতে পারে। এই ভয়েই আছি আমরা।’
বাড়ির সামনে বসেই কথায় কথায় শুক্রবারের রাতের ঘটনার বর্ণনা দেয় নাদিয়া। দাদাকে শেষবার দেখার স্মৃতি আওড়ায়। আর জানায়, নিজের স্বপ্নভঙ্গের কথা। নাদিয়া জানায়, আবুল কাশেমের ঘর থেকে চার ঘর দূরে তাদের আরেকটি ঘর আছে। ঘটনার রাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে সেই বাড়িতেই ঘুমাচ্ছিল সে। গভীর রাতে হইচই আর গুলির শব্দ শুনে তার ঘুম ভাঙে। ঘর থেকে বের হয়েই সে জানতে পারে, অপরিচিত কিছু লোক তার দাদাকে গুলি করেছে। দৌড়ে দাদার বাড়িতে এসে বাড়ির সামনে দাদার নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে।

Manual3 Ad Code

এসব কথা বলতে বলতেই কিশোরী নাদিয়ার চোখে পানি চলে আসে। এবার সে হাতে থাকা একটি দৈনিক পত্রিকায় চোখ বোলায়। কিছুক্ষণ থেমে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নাদিয়া। বলে ‘তিন দিন দাদার লগে কথা কই নাই। আমি কী আর জানি দাদা যাইব গা। স্কুল থেকে আইসা বিকেলে দাদারে দেখতে আসতাম। দাদার লগে টিভি দেখা নিয়া তখন ঝগড়া হইত। মাঝেমধ্যে রাগ করে না এলে লোক পাঠাইয়া আমারে ডাইকা আনতে অথবা নিজে যাইয়া বলত, “আয় টিভি দেখি।” বিনা অপরাধে আমার দাদারে শুধু শুধু খুন করল। বাপ-চাচার নামে মামলা দিয়া রাখল। চাচারা ভয়ে রাইতে বাড়িতেও ঘুমায় না। দাদা মরছে, কই সবাই মিলাদ পড়ানোর ব্যবস্থা করব, হেইডা না কইরা এহন সবাই কোর্টে ঘুরতাছে।’

Manual2 Ad Code

নানা কথার ফাঁকে নাদিয়া বলে, ‘আমা গো লগে কেন অন্যায় হইতাছে। আমরা তো খারাপ লোক না। আমি আর আমার বান্ধবী শ্রাবন্তী ছোটবেলা থেইকাই অন্যায় কাজের বিরোধিতা করি। আমরা স্বপ্ন দেখতাম, বড় হইয়া একদিন পুলিশ অফিসার হমু। বিপদে-আপদে মানুষের পাশে থাকমু। এখন সেই স্বপ্নও মইরা গেছে।’

পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন মরে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে হাতে থাকা পত্রিকা থেকে চোখ তুলে নাদিয়া জবাব দেয়, ‘আমগোর লগে আইনের লোকজন যা যা করতাছে, তারপর আর কেমনে এই স্বপ্ন থাহে?’

Manual7 Ad Code

 

Manual4 Ad Code

শেয়ার করুন