বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগ কর্মী জাবির আত্মগোপন রহস্য ফাঁস: তোলপাড়

Daily Ajker Sylhet

admin

০২ নভে ২০২৪, ০৬:২২ অপরাহ্ণ


বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগ কর্মী জাবির আত্মগোপন রহস্য ফাঁস: তোলপাড়

শাহরিয়ার ইমন:
বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগ কর্মী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাবির আহমদ (২২) আত্মগোপন রহস্য ফাঁস হওয়ায় এলাকাজুড়ে তোলপাড় চলছে। একাধিক মামলার দায় থেকে নিজেকে রক্ষা, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পরিচয় থেকে আড়াল হওয়া এবং জমিজমা নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার লক্ষ্যে সে আত্মগোপন করে বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও আইনশৃংখলা বাহিনীর ভাবমূর্তি বিনষ্ট এবং পরিকল্পিতভাবে আইনশৃখলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে মর্মে আওয়ামী মহলের সর্বত্র ধারণা জন্মাতে চতুর জাবির পরিকল্পিতভাবে আত্মগোপন করে।
এলাকা ঘুরে জানা যায়, জাবির আহমদের পিতা আজমান আলী বহুবছর পূর্বে অন্যত্র থেকে এসে দুবাগ ইউনিয়নের মেওয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। বর্তমানে যে বাড়িতে তারা বসবাস করছেন ওই বাড়ির বেশকিছু জমি সরকরি খাস খতিয়ানভূক্ত ও প্রতিবেশী সাংবাদিক আব্দুল খালিকের। বিয়ানীবাজারের সহকারি কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় থেকে সরকারি খাস খতিয়ানভূক্ত জমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এরপরও গত কয়েকদিন পূবর্ থেকে জাবির গংরা ওই জমিতে জোরপূর্বক স্থাপনা নির্মাণ করার চেষ্টা করেন। বিষয়টি উল্লেখ করে সাংবাদিক আব্দুল খালিক যথাযথ আদালতে একাধিক মামলা দায়ের করেন। এতে ক্ষুব্দ হয়ে জাবির আহমদ ও তার ভাই জামিল আহমদ (২৫) গত ৬ আগস্ট দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় সাংবাদিক খালিকের বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করেন। এ সময় তাদের সাথে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ও কিশোর গ্যাংয়ের অন্তত: ৭-৮জন সদস্য দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ওই সাংবাদিকের বাড়িতে ডাকাতির মত করে লুটপাট চালায় বলে একাধিক গ্রামবাসী জানান। পরদিন জাবির ও তার ভাই জামিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাংবাদিক খালিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেন। এতে মনোক্ষন্ন হয়ে সিলেটের আদালতে সাইবার আইনে মামলা দায়ের করেন ভূক্তভোগী ওই সাংবাদিক। যা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন তদন্ত করছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক রায়হান আহমদ বলেন, বিবাদী জামিলের মোবাইল ফোন জব্দ করেছি। মামলার অভিযোগের অনেক সত্যতা পাওয়া গেছে। এরা দুষ্টু চক্রের সাথে জড়িত বলেও মনে হয়েছে।
আত্মগোপনে যাওয়া জাবিরের বন্ধু মুবিন আহমদ বলেন, একাধিক মামলায় জাবির অত্যন্ত চিন্তিত ছিল। তার নিখোঁজ কিংবা আত্মগোপন রহস্যঘেরা। আমরা সকল বন্ধুই বিষয়টি নিয়ে সন্দিহান।
বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ সূত্র জানায়, কথিত নিখোঁজের দিন জাবির চারখাই বাজার থেকে একটি সিএনজি অটোরিক্সায় করে গোলাপগঞ্জ উপজেলার কোন এক স্থানে গিয়ে জনৈক যুবকের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা নেন। ওই টাকা পাওয়ার পর তার নিজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিম পরিবর্তন করে অন্য সিম ব্যবহার শুরু করেন তিনি। বিকাশে টাকা প্রদানকারী ওই যুবকসহ অপর আরেকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ এমন তথ্য পায়। পরবর্তীতে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ও অধিকতর তদন্তে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ জাবির নিখোঁজ হয়নি, আত্মগোপনে আছে বুঝতে পেরে তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি অবগত করে। অবস্থা বেগতিক দেখে পরদিন জাবির আত্মগোপন থেকে বেরিয়ে চট্রগামের পাহাড়তলী থানায় অবস্থান নেয়। সেখান থেকে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ জাবিরকে এলাকায় নিয়ে আসে। বিয়ানীবাজার থানার এসআই শাহাব উদ্দিন বলেন, জাবিরকে উদ্ধারের সময় অসূস্থ মনে হয়নি। তবে তার গলা জ্বলছে এবং সে নিজেকে অসূস্থ বলে দাবী করে।
এদিকে ভাই অপহরণ হয়েছে মর্মে সিলেটের আদালতে মামলা দায়ের করেন জামিল আহমদ। ওই মামলায় সিএনজি অটোরিক্সায় (!) করে অপহরণ পরবর্তী জাবিরকে পাহাড়তলী নিয়ে যাওয়া হয় বলে দাবী করা হয়। এমন মিথ্যা মামলা দায়েরের পর শুক্রবার রাতে সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল খালিক এলাকার বিপুল সংখ্যক লোকের উপস্থিতিতে একটি সভা আহবান করেন। ওই সভায় এমন সাজানো অপহরণ নাটক ও মিথ্যা মামলা দায়েরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
সাংবাদিক আব্দুল খালিক বলেন, মামলা থেকে বাঁচতে এবং ছাত্রলীগের লেবাস ঢাকতে আত্মগোপন করে জাবির। তার এক মামা বিগত সময়ে অপহরণ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন। তিনি আরো বলেন, আত্মগোপন নাটকের পরিকল্পনায় যারা ছিলেন কিংবা যারা মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছেন, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, সাজানো মামলা দায়েরের আশঙ্কা করে আমি আগেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্ঠা, আইজিপি, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার, পুলিশ সুপার পিবিআই ও পুলিশ সুপার সিলেটের কাছে আবেদন করেছি।
নিজের আত্মগোপন নিয়ে প্রশ্ন করলে জাবির আহমদ জানান, তার ভাই জামিল এ বিষয়ে সব বলতে পারবেন। জামিল আহমদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের নিন্দা:
বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের প্রচার ও প্রকাশণা সম্পাদক, দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি, সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল খালিকের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ কর্তৃক মিথ্যা মামলা দায়েরের নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসক্লাব নেতৃবন্দ। এক বিবৃতিতে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানান, তদন্তকারী সংস্থাকে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আত্মগোপন রহস্যের জের বের করতে হবে। মিথ্যা মামলায় সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল খালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবেনা।

Sharing is caring!