Beanibazarer Alo

  সিলেট     সোমবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভারতের পাসপোর্টধারী আরাভকে দেশে ফেরানো সহজ নয়

admin

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৩ | ০৩:২৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৩ | ০৩:২৬ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
ভারতের পাসপোর্টধারী আরাভকে দেশে ফেরানো সহজ নয়

Manual1 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
পুলিশ কর্মকর্তা মামুন খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। সম্প্রতি ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান দুবাইয়ে আরাভ খানের একটি গহনার শোরুম উদ্বোধনে গেলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।

আরাভ খান দুবাইয়ে অবস্থান করছেন ভারতীয় পাসপোর্টে। তাকে দেশে হত্যা মামলার আসামি হিসেবে ফিরিয়ে আনার তোরজোড় শুরু করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। তবে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়াটি জটিল এবং সহসা তাকে ফেরানো সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন কূটনীতিক, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

Manual3 Ad Code

জটিল প্রক্রিয়ার ব্যাখ্যায় তারা বলছেন, রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক। কিন্তু তিনি রবিউল ইসলাম নাম বদলে আরাভ খান নামে ভারতীয় পাসপোর্ট করে দুবাইয়ে যান। চাইলেও ইন্টারপোল আরাভকে বাংলাদেশে পাঠাতে পারবে না। কারণ সেখানে তার অবস্থান ভারতীয় হিসেবে। দুবাইয়ে দাগী আসামি বা অপরাধীও নন আরাভ। আবার আরব আমিরাতের সঙ্গে বাংলাদেশের নেই বহিঃসমর্পণ চুক্তিও। তাছাড়া পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলায় চার্জশিট দাখিল হলেও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নন তিনি। মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া এখনও চলমান। তাকে ফেরানো নির্ভর করছে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক, ভারত ও দুবাই পুলিশের সহযোগীতা ও সদিচ্ছার ওপর।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান খুনের মামলার আসামি দুবাইয়ে থাকা রবিউল ইসলাম। ইন্সপেক্টর মামুন খুন হন ২০১৮ সালের ৮ জুলাই। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তার দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে নিহত মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে ডিএমপির বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইন্সপেক্টর মামুন হত্যা মামলায় অভিযুক্ত আসামি ১০ জন। এদের মধ্যে দুজন কিশোরী। রবিউলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ও তার স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার ধনী ব্যক্তিদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। মামুন হত্যার ঘটনায় লাশ গোপন করতে সহায়তা করেছেন রবিউল। খুনে সরাসরি জড়িতরাও রবিউলের সহযোগী। রবিউলসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দেয় ডিবি গোয়েন্দা পুলিশ। মামলাটিতে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছেন রবিউলের স্ত্রী সুরাইয়াও।
এ মামলার আসামি হয়ে কারাগারে রয়েছেন আসামি রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দীদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১) ও সারোয়ার হোসেন (২৩)। উচ্চ আদালত মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য গত বছরের ২০ ডিসেম্বর নির্দেশ দেন। যদিও সে মামলা এখনও ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন।

Manual3 Ad Code

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার পরও গত এক বছরে দুবার দেশে এসেছিলেন আরাভ খান। কিন্তু রহস্যজনক কারণে একবারও তিনি গ্রেপ্তার হননি। দেশে এসে ঘুরেফিরে আর ফেসবুকে লাইভ করে আবার নিরাপদে দুবাই ফিরে গেছেন বলে জানা গেছে।

এখন দুবাই থেকে আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনা কতোটা সহজ? জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ড. কামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, চাইলেও ফিরিয়ে আনা সহজ হবে না। কিন্তু চাইতে তো হবে। কোনো একটা দেশ থেকে যদি কাউকে ফিরিয়ে আনতে চাই, তিনি যদি ক্রিমিনাল হন, তাহলে সেই দেশের সঙ্গে চুক্তি (বহিঃসমর্পণ চুক্তি) থাকতে হবে। আমি জানি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সেরকম কিছু আমাদের নেই। আমি স্বরাষ্ট্রে থাকতে ভারত ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। তবে আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনতে চুক্তি থাকতেই হবে এমনও না। কিন্তু চুক্তি থাকলে সহজ। এখন কাজটা কঠিন বটে। কারণ এটা নির্ভর করছে সেই দেশের সদিচ্ছা ও পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর।

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, শুনছি পুলিশ নাকি বলেছে ইন্টারপোলকে। কিন্তু কাউকে ফিরিয়ে দেওয়া ইন্টারপোলের কাজ না। তার কাজ লোকেট করা। কোনো দেশের ক্রিমিনাল অন্য দেশে আশ্রয় নিলে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইলে তারা লোকেট করে দেয়। ফিরিয়ে দেওয়া তাদের কাজ নয়। যেমন বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বিভিন্ন স্থানে ঘুরছে। আমরা ফিঙ্গার প্রিন্ট পর্যন্ত দিয়েছি, ইন্টারপোল কিন্তু লোকেট করতে পারেনি। এজন্য তাদের আনাও যাচ্ছে না। আরাভ খানকে ফিরিয়ে আনার কাজটা বাংলাদেশকেই করতে হবে দুবাই তথা আরব আমিরাতের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের তো ওই দেশের সঙ্গে চুক্তি (বহিঃসমর্পণ চুক্তি) থাকতে হবে। সেটা যেহেতু নেই, এখন ফেরানো নির্ভর করছে দুই দেশের সম্পর্কের ওপর।

আরাভ খান তো বাংলাদেশি হিসেবে নয়, ভারতীয় হিসেবে দুবাইয়ে অবস্থান করছেন। এক্ষেত্রে দুবাই কেন আরাভকে ঢাকায় ফেরত পাঠাবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরাভ খান ভারতীয়। কিন্তু বাংলাদেশি রবিউলই যে আরাভ খান তা ভারতকে নিশ্চিত করতে হবে দুবাইকে। ভারত যদি দুবাইকে জানায় যে আরাভ খানকে বাংলাদেশে পাঠালে তাদের কোনো অসুবিধে নেই তবে সম্ভব। তাও অনেক প্রক্রিয়া আছে। এখন ভারতের সঙ্গে দুবাইয়ের চুক্তি (বহিঃসমর্পণ চুক্তি) আছে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। যদি থাকে তবে আবার ভারতও আরাভ খানকে তাদের দেশে নিয়ে যেতে পারে। কারণ রবিউল তো আরাভ নামে সেখানেও ভুয়া পাসপোর্ট করে অপরাধ করেছেন। সেখানে আবার সেদেশীয় আইনি প্রক্রিয়া আছে। সব মিলিয়ে জটিল প্রক্রিয়া।

এ ব্যাপারে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেন, দুবাইয়ে আরাভ খান নামে আশ্রয় নেওয়া রবিউলকে বাংলাদেশে ফেরত আনা কঠিন ও জটিল প্রক্রিয়া। বাংলাদেশি রবিউলই যে আরাভ খান তা আগে ভারতকে জানাতে হবে বাংলাদেশকে। এরপর ভারত সেখানে মামলা করবে। আরাভ অপরাধী, পাসপোর্ট জালিয়াতকারী নিশ্চিত হয়ে দুবাইকে জানাবে ভারত।

তিনি জানান, চুক্তি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সদিচ্ছা থাকলে চুক্তিও লাগে না। যেমন সৌদি আরবের সঙ্গে তো আমাদের চুক্তি নেই। কিন্তু আমরা রাজন হত্যা মামলার আসামিকে সৌদি থেকে ফিরিয়ে এনেছি। সদিচ্ছা ও সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া ২০১৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে একটি চুক্তি করা হয়েছিল ‘ট্রান্সফার অব সেন্টেন্সড পারসন’।

Manual6 Ad Code

বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সহযোগিতায় আরাভ খানের বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার বিষয় সম্পর্কে তিনি বলেন, এই ধরনের অভিযোগের ভিত্তি নেই। সে যখন বাংলাদেশে ছিল তখন তো সে অস্ত্র আইনে গ্রেপ্তার হয়েছে। জামিনও পেয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলায় সে আসামি হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যায়। হয়তো পুলিশ মনে করছে সে পালাবে না। কিন্তু তার পালানোটা ব্যর্থতা।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, যে কাউকে দেশে ফিরিয়ে আনাটা সহজ কোনো কাজ না। বাংলাদেশি রবিউল তথা ভারতীয় আরাভ খানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনাটা খুব সহজ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ তার নাগরিকত্ব বিভ্রাট ও নামে বিভ্রাট আছে। এসব তো তথ্যপ্রমাণ সাপেক্ষ বিষয়। সব সমস্যার সমাধান করেই আনতে হবে। এমনও হতে পারে আমিরাত তাকে ভারতে পাঠাবে যদি ভারত চায়। তখন আবার ভারতের সহযোগীতা লাগবে তাকে ঢাকায় ফেরাতে। তবে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আরাভকে ঢাকায় পাঠানোর সুযোগ খুবই কম। ভারতের সহযোগিতা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। এই জটিল প্রক্রিয়ায় খুবই সচেতনভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমাদের তো আবার কোনো প্রসেস শুরুর কিছুদিন পর সব ভুলে যাই। ভারতীয় পাসপোর্ট যদি মিথ্যে হয় তাহলে তো সেটা অপরাধ। সেই অপরাধে তো আরাভ খানের বিরুদ্ধে বিচারিক বিষয়টা আগে আসবে। কারণ রবিউল বাংলাদেশি হলেও সে নামে নয়, আরাভ নামে ভারতীয় পাসপোর্টে সে দুবাই গেছে।

আরাভ খানকে দেশে ফিরিয়ে আনাটা জটিল প্রক্রিয়া বলে মানছেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দুবাইয়ের সঙ্গে আমাদের যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি রয়েছে, সে অনুযায়ী তিনি যদি সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হতেন, তাহলে বিষয়টা সহজ হতো, কিন্তু তিনি তো বন্দী নন। সে জন্য জটিলতা রয়েছে।’

 

Manual7 Ad Code

শেয়ার করুন