ভারত ও বাংলাদেশে রেমালের তাণ্ডব: এলাকা প্লাবিত, নিহত ১৫

Daily Ajker Sylhet

admin

২৭ মে ২০২৪, ০২:১৯ অপরাহ্ণ


ভারত ও বাংলাদেশে রেমালের তাণ্ডব: এলাকা প্লাবিত, নিহত ১৫

নিউজ ডেস্ক:
রেমালের ফলে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ বাংলাদেশের উপকূলের জেলাগুলোতে প্রবল গতিতে হাওয়া বইতে শুরু করে। তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়।

বরগুনার আমতলীতে জোয়ারের জলে বাঁধ ভেঙে গেছে। সবশেষ তথ্য নিয়ে জানা গেছে, রেমালের তাণ্ডবে বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের চারজন এবং বাংলাদেশের ১১ জন।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বিভিন্ন জায়গায় প্রবল বষ্টি হচ্ছে। দুই দেশে বেশ কিছু জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে যাওয়ায় অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে গেছে।

সাতক্ষীরার শ্যামনগরে বাড়ি থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় পড়ে গিয়ে ৬৫ বছর বয়সি শওকাত মোড়ল নামের এক ব্যক্তি মারা যান। গাবুরা ইউনিয়নের নাপিতখালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এছাড়া জোয়ারের জলে ভেসে গিয়ে ২৪ বছর বয়সি শরীফুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধূলাসর ইউনিয়নের কাউয়ারচর এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে।

বরিশালের রুপাতলী এলাকায় একটি ভবনের ছাদের দেয়াল ধসে খাবারের হোটেলের টিনের ওপর পড়ে দুজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- লোকমান হোটেলের মালিক লোকমান ও কর্মী মোকসেদুর রহমান।

রোববার দুপুরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের হাত থেকে ফুপু ও বোনকে রক্ষা করতে গিয়ে মো. শরীফ (২৭) নামের এক যুবক মারা গেছেন। শরীফের ফুপু মাতোয়ারা বেগম কাউয়ারচর এলাকায় বসবাস করেন। ওই বাড়িতে তার বোনও ছিল। বেলা ২টার দিকে দিকে অনন্তপাড়া থেকে শরীফ তার বড় ভাই ও ফুপাকে নিয়ে বোন ও ফুপুকে উদ্ধারে যায়। এসময় সমুদ্রের পানিতে কাউয়ারচর এলাকা ৫ থেকে ৭ ফুট পানিতে প্লাবিত ছিলো। সাঁতার কেটে তারা ফুপুর ঘরে যাওয়ার সময় ঢেউয়ে শরীফ হারিয়ে যায়। পরে এক ঘণ্টা পর ওই স্থান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা।

ভোলায় ঘরচাপা পড়ে মনেজা খাতুন (৫০) নামে এক নারী মারা গেছেন। তিনি লালমোহনের পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরউমেদ গ্রামের তেলী বাড়ির আব্দুল কাদেরের স্ত্রী।

বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় দেয়াল ধসে সাইফুল ইসলাম হৃদয় নামের এক যুবক মারা গেছেন। সোমবার সকালে এই ঘটনা ঘটে। এছাড়া অন্যান্য মৃত্যুর তথ্য বিস্তারিত জানা যায়নি।

বরগুনার তিনটি নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। পরশুনিয়ার বাঁধ ভেঙে গেছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বাঁধের উপর দিয়ে জল বইছে। কক্সবাজারে জোয়ারের জলে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় সকালে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে।

পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা
পশ্চিমবঙ্গেও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বাঁধ ভেঙেছে। প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। কলকাতায় রাতে ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকালেও বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। সাড়ে আটটার পর তা শুরু হয়। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখাতে ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।

রেমাল দুর্যোগে কলকাতায় ৫১ বছর বয়সি সাজিবের মৃত্যু হয়েছে। সাজিবের ছেলে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আইপিএল ফাইনাল দেখতে গেছিলেন। ঝড়-বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর তাকে বাড়িতে নিয়ে আসতে যান তিনি।

বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় এন্টালির বিবির বাগানে তিনি একটি বাড়ির নিচে আশ্রয় নেন। তখনই তার উপর বাড়ির কার্নিশ ভেঙে পড়ে ও তার মৃত্যু হয়।

মৌসুনি দ্বীপে রেণুকা মণ্ডল নামে এক নারীর গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে কলাগাছে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে গিয়েছিল। সেই কলাগাছ কাটতে গিয়ে প্রথমে একজনের মৃত্যু হয়। তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার ছেলেরও মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার সকালে বৃষ্টি একটু কমলেও কলকাতার অনেক রাস্তায় জল জমে আছে। কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, মোট ৫২টি গাছ পড়েছে। কয়েকটি রাস্তায় জল জমে আছে। এখন বৃষ্টি কমলেও পরে আবার হতে পারে। ক্যামাক স্ট্রিটে একটি পাঁচিল ভেঙেছে।

কলকাতা থেকে ডিডাব্লিউর প্রতিনিধি গৌতম হোড় জানাচ্ছেন, রোববার বিকেল থেকেই কলকাতায় বৃষ্টি শুরু হয়। রাত যত বাড়ে ততই বৃষ্টির দাপট বাড়ে। শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া। রাত দশটার পর থেকে ঝড় ও বৃষ্টি প্রবল হয়। গভীর রাত পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডব চলতে থাকে। সোমবার সকালেও আকাশ পুরো মেঘলা। ঝোড়ো হাওয়া থেমেছে। তবে মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে।

Sharing is caring!