Beanibazarer Alo

  সিলেট     শনিবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভোটার টানতে কৌশলী বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

admin

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:০১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ০১:০১ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
ভোটার টানতে কৌশলী বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

Manual3 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ডিসেম্বর। এ সময়ে নির্বাচন হলে তফশিল হবে অক্টোবরে। যেহেতু ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমলে জনগণ ১৫ বছর ভোট দিতে পারেননি, সে কারণে এবার ভোটের জন্য ভোটার ও সম্ভাব্য প্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। সবার মধ্যে এক ধরনের মুক্তির অপেক্ষা কাজ করছে। দীর্ঘদিন ভোট দিতে না পারার যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসতে সবাই আগেভাগে নির্বাচনি প্রচারণায় মাঠে নামতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

এছাড়া আসন্ন নির্বাচনে ভোটাররাই যেহেতু বড় ফ্যাক্টর, সেজন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের হৃদয় জয় করে দলের কাছে নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে বেশি তৎপর। এজন্য এলাকায় নানা কর্মসূচি অব্যাহত রেখে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।

Manual6 Ad Code

তিনশ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা ঠিক করতে কয়েকটি টিম নিয়ে কাজ করছে অন্যতম বড় দল বিএনপি।

Manual4 Ad Code

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে-এমনটা ধরেই রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি মাঠে নেমেছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা ফিরেছেন নিজ এলাকায়। সিনিয়র নেতারাও এখন ঘন ঘন যাচ্ছেন নির্বাচনি আসনে। সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন তারা। আজ থেকে ৬৭ সাংগঠনিক জেলায় ধারাবাহিকভাবে সমাবেশ শুরু করছে বিএনপি। এরপর মহানগর ও বিভাগীয় শহরেও সমাবেশ করবে। এসব সমাবেশেরও মূল উদ্দেশ্যে জাতীয় নির্বাচনের ঢেউ তোলা। একই সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও নানা বার্তা দেবে এসব সমাবেশের মাধ্যমে। অন্যদিকে, ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিয়ে ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে চায় জামায়াতে ইসলামী। এরই মধ্যে ৭৯ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণাও করেছে। কেন্দ্রের গাইডলাইন অনুযায়ী সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ আসনে নানা কৌশলে গণসংযোগ ও প্রচার চালাচ্ছেন। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নিয়মিত কর্মিসভায় যোগ দিচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান ইতোমধ্যে চল্লিশটির বেশি জেলা সফর করেছেন। সব আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঠিক করছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও। একই চিন্তা এবি পার্টির। এককভাবে ৩০০ আসনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একমত হয়েছে গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি)। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে জিওপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে নির্বাচনে প্রার্থিতা করতে আগ্রহীদের ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত ও সংসদীয় আসন উল্লেখ করে, দলীয় কর্মকাণ্ডের বিস্তারিতসহ আবেদনপত্র কেন্দ্রীয় দপ্তর বরাবর জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনি লড়াইয়ে মাঠে নামতে বসে নেই ডান, বাম ও ইসলামী দলগুলোও।

Manual7 Ad Code

সূত্রমতে, আপাতত নিজ নিজ দলীয় ভাবনা বাস্তবায়নেই মনোযোগ দিচ্ছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হলে ‘জোট’ নাকি ‘সমঝোতা’ সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দলগুলো। তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও বিগত দিনে ওই সরকারে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জোট বা সমাঝোতার কোনো চিন্তা নেই বিএনপি ও জামায়াতের। এ দুদল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্ক বাড়িয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের একাধিক নেতা জানান, আগামী নির্বাচনে জোট গঠন নিয়েই তারা বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। জোট অথবা মঞ্চ যে কোনো নামেই তা গঠন হতে পারে। সেক্ষেত্রে জামায়াত চেষ্টা করছে একটি আসনে ইসলামি দলগুলোর একজন প্রার্থী থাকবে। আবার বিএনপির তৎপরতা আছে, ২০১৮ সালের স্টাইলে মিত্রদের ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নেওয়া। তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই জানিয়ে দলগুলোর নেতারা বলেন, এখন যে যার মতো তৎপরতা চালাচ্ছেন। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হলে অনেক চিত্রই পালটে যাবে। এমনও হতে পারে-বিএনপি-জামায়াত-ছাত্রনেতাদের নতুন দলসহ মিত্ররা একসঙ্গে থাকবে। সবকিছু নির্ভর করবে আওয়ামী লীগের ভোটে আসা না আসার ওপর।

জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ১৫ বছর ধরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। মানুষ দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়। প্রধান উপদেষ্টাও বলেছেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য কাজ করছেন। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও নির্বাচনমুখি দল। যে কোনো সময় নির্বাচন হলে বিএনপির প্রস্তুতি আছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই বিএনপির সুসম্পর্ক রয়েছে। আগামী নির্বাচন একক নাকি জোটগতভাবে-এটা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। তফশিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়, তারপর সিদ্ধান্ত হয়।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন-এমনটি ধরেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন। সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে নির্বাচনের আবহ জনগণের মধ্যে আরও ছড়িয়ে দিতে চায় দলটি। সূত্রমতে, নির্বাচনি স্লোগানেও থাকবে চমক। এ নিয়েও কাজ করছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিশ্বস্ত কয়েকজন নেতা। সিনিয়র নেতারা জানান, এবারের নির্বাচনে তরুণ, অভিজ্ঞ ও প্রবীণদের সমন্বয়ে হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। এ তালিকা করতে মাঠপর্যায়ে ইতোমধ্যে কয়েকটি টিম কাজ করছে। যাদের এলাকায় জনপ্রিয়তা আছে, বিগত আন্দোলনে ছিলেন, দলের প্রতি আনুগত্য রয়েছে এবং দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন-এমন নেতাদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় রাখতে চায় দলটির হাইকমান্ড। সেই সঙ্গে ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়া জনপ্রিয় প্রার্থীদের মূল্যায়নও করা হবে বলে জানা গেছে।

৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে প্রতিটি সভা-সমাবেশ ও দলীয় ফোরামে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘আসছে নির্বাচন বিএনপির জন্য সহজ হবে না; দিতে হবে কঠিন পরীক্ষা।’ এমন বক্তব্যে ধারণা করা হচ্ছে দলের ভেতরে শক্তভাবে সাংগঠনিক পুনর্গঠনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে বিএনপি।

Manual8 Ad Code

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। যে কোনো সময় নির্বাচন হলে বিএনপির প্রস্তুতি আছে। আমাদের নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় কাজ করছেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, সব সাংগঠনিক জেলা-মহানগরে যে সমাবেশ হবে তাও নির্বাচনের প্রস্তুতিই বলা যায়। এই সমাবেশ কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য সামনের জাতীয় নির্বাচনই। সমাবেশকে কেন্দ্র করে অনেকের জনপ্রিয়তাও যাচাইয়ের সুযোগ থাকে। আবারও ভোটারদের আস্থায় নেওয়ার জন্য নানা দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য থাকবে। সামনে রমজান মাস, পরে ঈদুল ফিতর। এই পুরো মাস সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ইফতার মাহফিলসহ নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে দিয়েও জনগণের পাশে থাকবেন। স্থায়ী কমিটির এ নেতা আরও বলেন, বিএনপি যেহেতু একটি বড় রাজনৈতিক দল, তাই একেকটি আসনে অনেক প্রার্থী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এ নিয়ে যাতে কোনো ধরনের বিচ্ছৃঙ্খলা বা গ্রুপিং না হয় সে বিষয়েও এবার কঠোর থাকবে দল। নতুন চমক নিয়েই এবারের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে।

শেয়ার করুন