Beanibazarer Alo

  সিলেট     সোমবার, ৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমারের দুই গ্রামে সেনাবাহিনীর তাণ্ডব, নিহত ১৭

admin

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০২৩ | ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৩ | ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
মিয়ানমারের দুই গ্রামে সেনাবাহিনীর তাণ্ডব, নিহত ১৭

Manual1 Ad Code

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি গ্রামে তাণ্ডব চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা। ধর্ষণ, শিরশ্ছেদসহ এসময় তারা কমপক্ষে ১৭ জনকে হত্যা করে।

অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হওয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সামরিক বাহিনীর সমালোচকরা বলছেন, দুই বছর আগে ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যুদ্ধাপরাধ করেই চলেছে এবং সর্বশেষ ঘটনা সেটিরই অংশ। মঙ্গলবার (৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সৈন্যরা সম্প্রতি দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় সাগাইং অঞ্চলের নিয়াউং ইয়িন এবং টার তাইং নামক গ্রামে তাণ্ডব চালায়। পরে সেখান থেকে ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে সরকার বিরোধী প্রতিরোধ বাহিনীর সদস্যরা এবং নিজের স্ত্রীকে হারানো একজন বাসিন্দা জানিয়েছেন।

Manual5 Ad Code

তারা বলেছেন, নিহতদের সামরিক বাহিনী আটক করেছিল এবং কিছু ক্ষেত্রে হত্যার আগে তাদের নির্যাতন করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

Manual4 Ad Code

এপি বলছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি’র নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর থেকে মিয়ানমার অশান্তির মধ্যে রয়েছে। সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে দেশব্যাপী শুরু হওয়া শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ নিরাপত্তা বাহিনী মারাত্মক শক্তি দিয়ে দমন করে।

এছাড়া বিক্ষোভ দমনের সময় সৃষ্ট সহিংসতা মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে সশস্ত্র প্রতিরোধের সূত্রপাত ঘটায় যা পরবর্তীতে জাতিসংঘের কিছু বিশেষজ্ঞ গৃহযুদ্ধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

Manual4 Ad Code

এরপর থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গ্রামাঞ্চলে বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানের সময় সেনা সদস্যরা গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া এবং লাখ লাখ মানুষকে তাদের বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটিয়ে থাকে।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারবিরোধী গণতন্ত্রপন্থি পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস’র স্থানীয় নেতারা এবং স্বাধীন মিয়ানমার মিডিয়া জানিয়েছে, গত সপ্তাহের এই হামলায় জড়িত সৈন্যরা ৯০ জনেরও বেশি একটি দলে ছিল। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি পাঁচটি হেলিকপ্টারে করে এসব সৈন্যকে ওই এলাকায় আনা হয়।

তারা জানিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার নিয়াং ইয়িনের একটি নদীর মধ্যে অবস্থিত ছোট দ্বীপে তিন নারীসহ ১৪ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রতিরোধ বাহিনীর দুই সদস্যসহ টার তাইংয়ে আরও তিনজন পুরুষের মরদেহ পাওয়া গেছে। ওই দু’জনের মধ্যে একজনের মাথা কেটে ফেলা হয়েছিল বলেও জানিয়েছেন তারা।

পাশাপাশি অবস্থিত এই দু’টি গ্রাম মিয়ানমারের অন্যতম প্রধান শহর মান্দালয় থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার (২৮ মাইল) পশ্চিমে অবস্থিত।

টার তাইংয়ের বাসিন্দা ৪২ বছর বয়সী মো কিয়াও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওই আক্রমণ থেকে বেঁচে যান। অবশ্য মো কিয়াও হামলা থেকে নিজে বাঁচলেও তার ৩৯ বছর বয়সী স্ত্রী প্যান থাওয়াল এবং ১৮ বছর বয়সী ভাতিজা সেনা সদস্যদের হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন।

ফোনে যোগাযোগ করা হলে গত শুক্রবার তিনি বলেন, গত বুধবার মধ্যরাতে সৈন্যদের হাতে আটক হওয়া ৭০ জন গ্রামবাসীর মধ্যে তারা ছিলেন। পরে তাদেরকে বন্দি করে স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারে নিয়ে যায় সেনারা।

মো কিয়াও বলছেন, সৈন্যরা তার খালার ছোট দোকান থেকে বিয়ার এবং অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি করে। পরে তারা তার খালাকে মারধর শুরু করলে নিজের জীবন বাঁচাতে তিনি (মো) পালিয়ে যান। যদিও দুই সৈন্য তাকে হত্যার উদ্দেশে গুলি চালিয়েছিল।

৪২ বছর বয়সী এই ব্যক্তি আরও বলেন, তার স্ত্রী এবং অন্যান্য গ্রামবাসীদের ওই বৌদ্ধ মঠে নির্যাতন করা হয় এবং পরে গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে যায়।

মোর অভিযোগ, তার স্ত্রী এবং অন্য দুই নারীকে বৃহস্পতিবার সৈন্যরা মারধরের পর ধর্ষণ করে এবং গুলি করে হত্যা করে। এমনকি সেনা সদস্যরা তার স্ত্রীর কানের দুলও নিয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।

Manual4 Ad Code

অবশ্য সৈন্যরা চলে যাওয়ার সময় তার ৯ ও ১১ বছর বয়সী দুই ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান মো কিয়াও। যদিও হত্যার আগে স্ত্রীর সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছিল সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিভাবে জেনেছেন সেটি ব্যাখ্যা করেননি মো।

এপি বলছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইনে এই অভিযোগ বেশ গুরুতর।

২০১৭ সালে রাখাইনে নৃশংস জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। এর জেরে মুসলিম রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের ৭ লাখরেও বেশি সদস্য নিরাপত্তার জন্য প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

শেয়ার করুন