মোবাইল ফোন কী আশির্বাদ না অভিশাপ?
০৭ ফেব্রু ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ণ
এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) যদি বেহেশতের গন্ধুম না খেতেন, তাহলে মানবজাতির সৃষ্টি হত না। প্রত্যেক সৃষ্টির-ই ভাল ও মন্দ দিক আছে। ভাল জিনিষটি গ্রহন ও মন্দ জিনিষটি ত্যাগ করতে পারলে সফল হওয়া সম্ভব। কয়’জনই বা ভাল জিনিষটির প্রতি আকৃষ্ট। স্বাভাবিক ভাবেই মন্দের প্রতি শয়তানের প্ররোচনায় আকৃষ্ট হবেই। শয়তান এ ক্ষেত্রে শতভাগ সফল হবে। সফল হয়েছে ও। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে মোবাইল ফোনটি অতীব জরুরী। যারা এর সঠিক ব্যবহার জানে একমাত্র তাদের জন্য। কিন্তু এর সুফল ভোগকারী হাতে গোনা কিছু দূরদৃষ্টি সম্পূর্ণ মানুষ। সংখ্যা হয়ত; ১৫ বা ২০ পার্সেন্ট হবে। প্রায় ৮০পার্সেন্ট, মানুষ খারাপ দিকটি-ই পছন্দ করে। পূর্ণগ্রাফি সম্পর্কে ব্যবহার কারী কে দেখতে বাধা দিলে অভিভাবদের সাথে যে কোন খারাপ আচরণ করতে দ্বিধা করবে না। অহেতুক সমাজ বিরোধী কিছু প্রচারণা করে, অন্যের চরিত্র হননে সদা জাগ্রত। টিনেজ, টিনেজাদের মধ্যে এর ব্যাপক প্রভাব। অভিভাবকগন উদ্বিগ্ন। অহেতুক প্রেম প্রীতি করার সহজ উপায় আধুনিক মোবাইলটি। এর দ্বারা উত্তম পরিবারের স্বপ্ন চুরমার করে দিচ্ছে। অতিরিক্ত আশক্তির কারনে তেজস্ক্রিয়তায় ব্রেইন টিউমারের হার, বেড়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিক ঘুম হচ্ছে না। অতিরিক্ত আশক্তির কারনে সারারাত জেগে অবাস্তব ও অকল্পনীয় এবং শয়তান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আল্লাহর নাম ভুলে সারারাত জেগে ক্ষতিকর বিভিন্ন খারাপ জিনিষগুলো দেখে দেরীতে ঘুমালো। এই দেরীতে ঘুমানোর কারনে শেষ রাত্রিতে ষ্ট্রোক বা হার্ট এ্যটাক করলেন। আর অধিকাংশ ষ্ট্রোক বা হার্ট এ্যটাকের কারণ এই ‘অনিয়মিত জীবন যাপন। মান অভিমান প্রত্যেকের আছে, থাকবে। পূর্বেকার দিনে ৩য় পক্ষ খবর পাওয়ার পূর্বেই তাদের দাম্পত্য জীবন স্ববাভাবিক হয়ে যেত। কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহাবের কারনে ৩য় পক্ষ অতি সহজেই খবর পেয়ে এ বিরোধে জড়িয়ে উত্তেজিত হয়ে একটা সংসারকে ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হয়। পরকিয়া বেড়ে গেছে। ৩/৪ বাচ্চার মাতা-পিতা তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের ভালো মন্দের কথা বিবেচনা না করে অতি সহজেই পরকিয়ায় জড়ে যাচ্ছে। সার্র্বিক সহযোগীতা দিয়ে থাকে আধুনিক প্রযুক্তিটি। বাচ্ছা ভাত খাচ্ছে না। ছেলে বা মেয়ে জেদ ধরে বসে, মোবাইলের কার্টুন না দেখে ভাত খাবে না। বিজ্ঞান বলে, এই ভাত খাওয়া আর না খাওয়ার মধ্যে কোন উপকারিতা নেই।
জ্ঞান বিলুপ্ত হচ্ছে। ক্বোরআন শরিফের শুরুতেই বলা হয়েছে, ইক্্রা বা পড়। ইতিহাস ঐতিহ্যকে জানতে বা বুঝতে হলে, ভাল লেখকদের বই পড়। পড়িলে জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত হবে। আনন্দময় জীবনের অধিকারী হবে। সকলেই বলে থাকেন, এসব পড়ার সময় নেই। সময় থাকবেই বা কি করে? সে তো বর্তমানে এডিকটেড। এডিকটেডের মাত্রা এত বেড়ে গেছে, তার মধ্যে হিতা-হিতি জ্ঞান বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ভুলে গেছে। সে হিরোইন সেবির চেয়েও ভয়াবহ। এই প্রযুক্তিটি তাহাকে সম্পূর্ণভাবে খেয়ে ফেলেছে।
খেয়ে ফেলার ফিরিস্তি অনেক লম্বাঃ
যেমন: (ক) পূর্বেকার দিনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আলাপ-আলোচনা, পারস্পারিক সুখ-দুঃখ শেয়ার করা হত। এখন কি তা হচ্ছে? না, হচ্ছে না। উত্তর একটাই সময় নেই।
(খ) পত্রিকা বা বই নিয়ে পড়ার জন্য কাড়াকাড়ি হত। কে আগে পড়বে? এখন কি সেই প্রতিযোগীতা আছে? না, এসব প্রতিযোগীতা বিলুপ্ত। প্রতিষ্ঠিত এসব প্রকাশনা শিল্পটি বন্ধ হওয়ার পথে। (গ) ডঃ জাফর ইকবাল একজন নামকরা লেখক, গবেষক ও প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু গুগল নির্ভর হওয়ার কারণে তার নিজস্ব প্রতিভাটি নষ্ট হয়ে, বর্তমানে গুগল নির্ভর, প্রতারক লেখক হিসাবে পরিচিত। হয়ত: তিনি জানতেন না, এই ২০ ভাগ লোক সব ব্যাপারে খেয়াল রাখেন। (ঘ) টিভি দর্শক, পত্রিকা পাঠক এখন আর নেই। এর সাথে সাম্পৃক্ত কলা কোশলীরা তাদের কর্মসংস্থান হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আর এর জন্য দায়ী এই আধুনিক প্রযুক্তিটি। প্রযুক্তিটির সহজ লভ্য ব্যবহারের সুযোগ পেয়ে গোটা সমাজের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বি.টি.আর.সি এর নিকট দাবী থাকবে, পুর্নোগ্রাফী সহ ক্ষতিকর, সমাজ বিরোধী অপসাংস্কৃতি বন্ধ করে কাল্যানকর জিনিষগুলো সচল রাখা। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্রের দাম কমিয়ে, এসব প্রযুক্তি ব্যবহার এর উপর নিয়মিত ভ্যাট, ট্যাক্স, এম.বি, মিনিট মোবাইল সেটের দাম বৃদ্ধি করে বিপথগামী মানুষদের হয়ত কিছুটা হলে উপকারে আসতে পারে। বাধ্যতা মূলক করা উচিত, সিম এবং মোবাইল সেট ক্রয়ের পুর্বে ট্যাক্স এবং ভ্যাট সার্টিফিকেট প্রদর্শন পূর্বক কর্তৃপক্ষকে দেখানো বাধ্যতামূলক করা উচিত। নতুবা গুনে ধরা সমাজ ধ্বংশ হয়ে যাবে।
লেখক, সভাপতি- সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট।