Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পথে হাঁটবে অন্তর্বর্তী সরকার?

admin

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ | ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৪ | ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পথে হাঁটবে অন্তর্বর্তী সরকার?

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হঠাৎ করে একই সাথে দাবি জানিয়েছেন যে, মো. সাহাবুদ্দিন ‘চুপ্পুকে অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অপসারণ করতে হবে’। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন আনার দাবি সমন্বয়কদের নতুন না। এর আগেও সমন্বয়করা দাবি তোলার পর বিভিন্ন পদে পরিবর্তন আসতে দেখা গেছে। সরকার এবারও তাদের দাবি মেনে নিয়ে রাষ্ট্রপতি অপসারণের পথে হাঁটবে কি?

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিল বিবিসি বাংলা। তবে তিনি বলেছেন, তিনি ‘এখনই’ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না।

রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি কেন?
মূলত ৩ অক্টোবর দুপুরে সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একটি পোস্টে সর্বপ্রথম এ দাবির কথা জানান। তার কয়েক ঘণ্টা পর সমন্বয়ক সারজিস আলমও তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একই কথা লিখে পোস্ট করেন। এরপর-ই এই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের দুজনের পোস্টেই মোট পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের বাইরে বাকি চারটি দাবি হলো– ‘আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিতকরণ, নতুন সংবিধান গঠন, আওয়ামী দুর্নীতিবাজ আমলাদের পরিবর্তন ও হাসিনার আমলে করা সব অবৈধ চুক্তি বাতিল।’

ঠিক কী কী কারণে তারা হঠাৎ করে এসব দাবি, বিশেষ করে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবি তুলেছেন, এ বিষয়ে জানতে শুক্রবার দিনভর উভয়ের সাথেই একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের কেউই কোনো সাড়া দেননি।

পরবর্তী সময়ে এক পর্যায়ে কথা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদের সাথে। তিনি জানান, তারা সকলেই ওই দাবির সাথে একমত।

সেক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আসলে ঠিক কী কারণে রাষ্ট্রপতির অপসারণ চাচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘একটি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন হইছে। তাই, ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্ধারিত রাষ্ট্রপতি থাকলে তা যেকোনো সময় রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠতে পারে।’

‘এই কারণে আমরা মনে করি, ওনাকে সহজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সসম্মানে কিভাবে বিদায় দেওয়া যায়, সেদিকটা নিয়ে ভাবা উচিত। উনি ফ্যাসিজমের একটি সিম্বল। সেই সিম্বলটা থাকা উচিত না।’ বর্তমান রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে সবার কাছে ‘গ্রহণযোগ্য’ ও ‘দেশপ্রেমিক’ রাষ্ট্রপতি চান তারা।

হাসিনা সরকার পতনের প্রায় দুই মাস পর কেন এখন এই দাবি তুলছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর আগেও তারা বলেছিলেন। তবে এখন তারা জোরালোভাবে বলছেন।

কোন প্রক্রিয়ায় অপসারণ করা হবে?
এখন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের দাবি মেনে সরকার যদি সত্যিই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে চায়, তবে তারা কোন পথ অবলম্বন করবে? আইনজীবীরা বলছেন, এই মুহূর্তে সেটি একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে দাঁড়াবে। কারণ এই সরকারের আইনগত বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন আছে।

Manual4 Ad Code

সংবিধান অনুযায়ী সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে হয়। বাংলায় যাকে বলে অভিশংসন। একাধিক সিনিয়র আইনজীবী মন্তব্য করেছেন অভিশংসনের জন্য ‘সংসদ লাগবেই’। তবে রাষ্ট্রপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলে তখন আর সংসদ লাগবে না, জানিয়েছেন তারা। এখন, রাষ্ট্রপতি যদি পদত্যাগ করেন, তখন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব কে পালন করবেন?

এ বিষয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি যদি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বা মৃত্যুজনিত কারণে পদ শূন্য হয়, তখন স্পিকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বাংলাদেশের বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থায় স্পিকার-সংসদ কোনোটাই নেই।

সেইসাথে, স্পিকার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হলে পরবর্তী ৯০ দিনের মাঝে ‘ওই সংসদ দ্বারাই নতুন রাষ্ট্রপতি’ নির্বাচন করতে হবে। ‘অতএব, রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের জন্য বৈধ কোনও পন্থা নাই।’

তাহলে বর্তমান সরকার রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারবে কি না এবং পারলে তা কীভাবে, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ওই সুযোগ নাই। রাষ্ট্রপতি এখন স্বেচ্ছায় বা কারও কথায় চলে যেতে পারেন।’

‘কারও কথায় যাওয়া অসম্ভব কিছু না। ক্ষমতায় যারা আছেন, তারা বললেই চলে যাবে। সেনাবাহিনী ও সরকার চাইলে এক সেকেন্ডের ব্যাপার,’ বলছিলেন তিনি।

‘আর এখানে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে চিন্তা করার দরকার নাই। কারণ ফর্মেশন অব গভর্নমেন্ট-ই তো লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের মাঝে না। কাজেই, ওই সুযোগ নাই। এখানে যা হবে, এমনিতে হবে। তবে এগুলোকে পরবর্তীতে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের মাঝে অনুমতি দিতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে কথা হয় ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ও সিনিয়র আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুমের সাথেও। তিনিও বলেন, ‘এখন অস্বাভাবিক সরকার কাজ করছে, তাই সংবিধানের মাঝ দিয়ে বৈধতা অবৈধতা সাংবিধানিক পদ্ধতিতে খুঁজে পাওয়া কঠিন।’

Manual5 Ad Code

‘তবে সেটাও তারা কাভার করার জন্য আপিল বিভাগ থেকে একটি রেফারেন্স (প্রাসঙ্গিক মতামত বা সুপারিশ) করে নিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত তারা সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণভাবে চলার চেষ্টা করছেন। যা সঙ্গতিপূর্ণ না, সেগুলো রেফারেন্সের মাধ্যমে। তাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পদ্ধতি কী হবে, সেটার জন্য তাদেরকে এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে রেফারেন্স নিতে হবে।’

Manual4 Ad Code

‘সেই রেফারেন্স অনুয়ায়ী তারা একজনকে বাদ বা নতুন একজনকে নিয়োগ দিতে পারেন। বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় এছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নাই,’ তিনি যোগ করেন।

Manual7 Ad Code

তবে আপিল বিভাগের এই রেফারেন্স বা সুপারিশ পদ্ধতি নিয়ে নাম প্রকাশ না করতে চেয়ে প্রশ্ন তোলেন একজন সিনিয়র আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছিলেন, সেই ক্ষমতাই রাষ্ট্রপতির নাই। সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর লিখিত উপদেশক্রমে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিতে পারে। শেখ হাসিনা যাওয়ার আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছে বলে তো কেউ শুনিনি।’

‘যে বিষয়ে সংবিধানে কোনো বিধান বলা নাই, সেখানে আপিল বিভাগের পরামর্শ নিতে পারে। যেখানে স্পষ্ট বলা আছে, সেখানে অভিমত নেওয়ার কোনো প্রশ্ন আসে না,’ তিনি আরও বলেন।

আপিল বিভাগের এই রেফারেন্স প্রসঙ্গে বলেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাও। যেহেতু স্পিকার-সংসদ নেই, তাই তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব কে গ্রহণ করবে? তখন তিনি জানান, ‘স্পিকারও না থাকলে ইনচার্জ থাকেন প্রধান বিচারপতি।’ ‘প্রধান বিচারপতিকে অফার করতেই হবে। যদি না করে, সেটা হবে আরেকটা ইলিগ্যাল কাজ।’

শেয়ার করুন