Beanibazarer Alo

  সিলেট     বৃহস্পতিবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের কাজের সুযোগ দিতে পারব না, আল জাজিরাকে প্রধানমন্ত্রী

admin

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৩ | ০৯:২৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ | ০৯:২৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
রোহিঙ্গাদের কাজের সুযোগ দিতে পারব না, আল জাজিরাকে প্রধানমন্ত্রী

Manual4 Ad Code

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জাতিসংঘের আয়োজিত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলনে যোগ দিতে মার্চের প্রথম সপ্তাহে কাতারে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সম্মেলনের ফাঁকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেন। শনিবার (১১ মার্চ) সাক্ষাৎকারটি প্রচার করেছে সংবাদমাধ্যমটি। সেখানে রোাহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘যখন রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়, রোহিঙ্গারা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছিল…তাদের প্রতি আমাদের মায়া কাজ করে। এরপর আমরা আমাদের সীমান্ত খুলে দেই…তাদের আসতে দিই। এছাড়া মানবিক দিক চিন্তা করে আমরা তাদের বাসস্থান এবং চিকিৎসা দিই।’

প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, পাশাপাশি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও কথা বলতে থাকে বাংলাদেশ। তবে, ‘দুঃখজনকভাবে তারা ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয়নি। তাদের অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ দিচ্ছে, কিন্তু এটি খুবই কঠিন। আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করেছি। ভাসান চর থাকার জন্য খুবই ভালো জায়গা। বাচ্চাদের জন্য আমরা খুবই সুন্দর বাড়ি এবং অসাধারণ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছি।’

এরপর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক আগুন নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যে ঘটনায় প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা বাসস্থান হারিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আসলে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থা খুব ভালো নয়। রোহিঙ্গারা একে-অপরের সঙ্গে মারামারি করছে। তারা মাদক, মানব ও অস্ত্র পাচারের মতো বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে।’

Manual8 Ad Code

এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর ইউক্রেন এবং ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের দিকে চলে গেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

সাংবাদিক নিক ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন রোহিঙ্গাদের কাজ করার ব্যবস্থা বা সুযোগ করে দেবেন কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের অনেক সুবিধা দিলেও এটি তিনি করতে পারবেন না। কারণ সেখানকার স্থানীয় বাংলাদেশিরাই ভালো নেই। এছাড়া রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশে থাকলেও, তারা অন্য দেশের নাগরিক। বাংলাদেশে হলো তারা শরণার্থী।

প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী নিক ক্লার্ক স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, করোনার আগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ যা প্রায় চীনের সমান ছিল। বর্তমানে ঢাকার জিডিপির পরিমাণ ভারতের চেয়ে বেশি। এছাড়া বাংলাদেশে পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং মেট্রো চলার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।

উন্নতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘শুনুন। আসলে বাংলাদেশে… আমাদের সম্পদ সীমাবদ্ধ। কিন্তু আমি একটি কথা বলতে পারি… আমাদের মানুষ খুবই ভালো। কিন্তু এটি নির্ভর করে নীতির ওপর। আমরা যা করেছি সেটি হলো একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে নিয়েছি। স্বল্পমেয়াদী, মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদি পকিরল্পনা।’

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এবং এর ওপর নির্ভরতার কথা বলেছেন নিক ক্লার্ক। তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, তৈরি পোশাক খাত ছাড়া বাংলাদেশ আরও কোনো কিছুর ওপর জোর দিচ্ছে কিনা।

Manual4 Ad Code

এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের প্রধান প্রাধান্য ছিল, আমাদের সম্পদের মাধ্যমে খাদ্য বাড়ানো। আমাদের লক্ষ্য ছিল খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এরপর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা…চাকরির ব্যবস্থা করা। আমি যা করেছি তা হলো সবকিছু বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। হ্যাঁ সরকারি খাতও আছে। কিন্তু আমি প্রায় সবকিছু বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমরা আমাদের মানুষদের উদ্বুদ্ধ করেছি, বিদেশিদের, সঙ্গে নিজ দেশের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি। আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনের ইস্তেহারে বলেছিলাম, বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। মানে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে গুরুত্ব দেব। এখন পুরো বাংলাদেশে ওয়াইফাই সুবিধা রয়েছে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে মানুষের কাছে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়েছি। এখন আমরা নিজেরা বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছি। আমি আপনাকে বলতে পারি এখন প্রত্যেকটি বাড়িতে মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে।’

এরপর বাংলাদেশের বৈদশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুনুন আমাদের মুদ্রা নীতি সময় উপযোগী এবং বাস্তবিক। আমি যেটি বলেছি, প্রথমে আপনার জনগণকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন। এরপর চাকরির সুযোগ তৈরি করুন। তরুণরা নিজেরাই তাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে। আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি, ইন্টারনেট সেবা দিয়েছি। এগুলো পুরো দেশে চাকরি তৈরি করবে।’

‘আর তৈরি পোশাক ছাড়াও অন্য রপ্তানিযোগ্য পণ্য তৈরির ব্যাপারে আমরা ধীরে ধীরে উন্নতি করছি। আমরা খাদ্যের ওপর জোর দিচ্ছি। এছাড়া প্রযুক্তি খাতে জোর দিচ্ছি। এই প্রযুক্তিই আমাদের পরবর্তী রপ্তানির প্রধান বিষয় হবে।’

Manual4 Ad Code

প্রধানমন্ত্রীকে পশ্চিমাদের বিভিন্ন অভিযোগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হয়। তিনি জানান, যখনই এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে, তখনই সরকার ব্যবস্থা নেয়। এছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবেও এসব করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

আল জাজিরাকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। আর এ কারণেই দেশ এমন অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। তিনি বলেছেন, ‘২০০৫-২০০৬ সালে আমাদের আমাদের দারিদ্রতার হার ছিল ৪১ শতাংশ। সেটি কমিয়ে আমরা ২০ শতাংশে নিয়ে এসেছি। আমাদের জিডিপি খুবই নিচে ছিল। কিন্তু এটি এখন বেড়েছে। করোনা মহামারির আগে আমাদের জিডিপি দাঁড়িয়েছিল ৮ দশমিক ১ শতাংশে। কিন্তু মহামারির কারণে এটি কমে এসেছে।’

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার যে দাবি করছে সেটি তিনি মেনে নেবেন কিনা। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আমাদের খুবই বাজে অভিজ্ঞতা আছে।‘ এরপর প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ব্যাপারে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি যখন ২০০১ সালে ক্ষমতায় ছিল তখন সারা দেশে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। তারা এমনকি আমাকে প্রকাশ্যে হত্যা করতে চেয়েছে। আমার দলের নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনো বিচার ও তদন্ত হয়নি। তাদের দুর্নীতি শুধু দেশ নয়, বিদেশি দেশগুলোও জানত। এরপর শুরু হলো জঙ্গিবাদ। বিএনপির আমলে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা হয়েছিল। তারা আসলে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। আর তাদের অব্যবস্থাপনার কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল। আমি আপনাকে একটা কথা বলতে পারি আমি মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছি।’

প্রধানমন্ত্রীকে আরও প্রশ্ন করা হয়, সামনে যে জাতীয় নির্বাচন আসছে সেটি অবাধ ও সুষ্ঠু হবে কিনা? এর জবাবে তিনি বলেছেন, ‘অবশ্যই। ১০০ ভাগ নিশ্চিত। আগের দুটি নির্বাচনে তারা কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল। কিন্তু তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি। নির্বাচন স্বচ্ছ ছিল এবং মানুষ আমার দলকে ভোট দিয়েছে। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাদের নেতা কে? তাদের নেতাদের দুর্নীতি, অস্ত্র চোরাচালান এবং গ্রেনেড হামলার দায়ে শাস্তি হয়েছে।’

Manual3 Ad Code

সাক্ষাৎকারটির শেষ অংশে প্রধানমন্ত্রী জানান তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে দেশ শাসন করছেন। আর বঙ্গবন্ধুর দোয়া থাকার কারণেই ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশের সাধারণ মানুষদের সেবা দিয়ে যেতে পারছেন তিনি।

শেয়ার করুন