সিলেটে বদলেছে শেল্টারদাতা, বন্ধ হয়নি ‘বুঙ্গার চিনি’র কারবার

Daily Ajker Sylhet

admin

১৪ সেপ্টে ২০২৪, ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ


সিলেটে বদলেছে শেল্টারদাতা, বন্ধ হয়নি ‘বুঙ্গার চিনি’র কারবার

স্টাফ রিপোর্টার:
ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানে পতন হয়েছে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের। দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। এরপর দেশে অনেক কিছুরই ইতিবাচক পরিবর্তন আসলেও সিলেটে বন্ধ হয়নি বহুল আলোচিত ভারতীয় চিনির অবৈধ ব্যবসা। যা সিলেটসহ সারাদেশে পরিচিতি পেয়েছে ‘বুঙ্গার চিনি’র কারবার হিসেবে।

ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সাথে অবৈধ এই ব্যবসার শেল্টারদাতাদের তালিকা বদলালেও বহাল রয়ে গেছেন কারবারিরা। ফলে কোনভাবেই সীমান্ত দিয়ে চিনি আসা বন্ধ হচ্ছে না। এতে সরকারকেও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাতে হচ্ছে।

প্রায় দুইবছর ধরে সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসছিল ভারতীয় চিনি। সীমান্ত এলাকা থেকে সিলেট মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চিনি পরিবহনের দেখভাল করতেন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বিশেষ করে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ ও মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ তাদের ঘনিষ্টজনরা এলাকা ভাগ করে ‘বুঙ্গার চিনি’র কারবারে শেল্টার দিতেন। বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে চিনির দাম প্রায় অর্ধেক হওয়ায় অল্প দিনে চোরাকারবারী ও তাদের শেল্টারদাতারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে ওঠেন। একদম জিরো থেকে অনেকে কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যান।

৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর ‘বুঙ্গার চিনি’ কারবারের রাজনৈতিক শেল্টারদাতারা লাপাত্তা হয়ে গেছেন। বেশিরভাগই ওই চোরাকারবারীদের সহায়তায় সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে শেল্টারদাতা পরিবর্তন হলেও সিলেটে বন্ধ হয়নি ভারতীয় চিনির কারবার। যৌথ বাহিনীর অভিযানের মধ্যেও থেমে নেই চোরাকারবারীরা।

প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চিনি সিলেট সীমান্ত হয়ে ভারত থেকে প্রবেশ করে পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে। ইতোমধ্যে যারা চিনির চালানসহ আটক হয়ে জেলে গিয়েছিলেন, তারাও জামিনে মুক্ত হয়ে ফের একই কারাবারে লিপ্ত হচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সিলেট নগরীর কালিঘাট থেকে ৮৫ বস্তা চিনি বোঝাই একটি ট্রাক জব্দ করে পুলিশ। চিনির বস্তার উপর বালুচাপা দিয়ে পুলিশের চোখ ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছিল চোরাকারবারীরা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এসময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাকারবারিরা পালিয়ে যায়।

গত ৯ সেপ্টেম্বর সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের শাহপরাণ (রহ.) থানাধীন পীরেরবাজার এলাকা থেকে ৩শ’ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ করে পুলিশ। এসময় আটক করা হয় তিনজনকে। এই তিনজনের মধ্যে দুইজন আগেও চিনিসহ আটক হয়েছিলেন। পরে জামিনে বের হয়ে ফের একই কাজে জড়িয়েছেন।

আটককৃতরা জানায়, ট্রাকে করে চিনিগুলো জৈন্তাপুরের হরিপুর এলাকা থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে তারা ট্রাকে চিনির বস্তার উপর বালু রেখে থ্রিপল টানিয়ে পাচারের চেষ্টা করছিল। এর আগে গত ১৯ আগস্ট জালালাবাদ থানাধীন শিবের বাজার এলাকা থেকে পিকআপ ভর্তি ভারতীয় চিনির চালান আটক করে পুলিশ।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম কর্মকর্তা, অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ভারতীয় চিনির ব্যবসার নেপথ্যে কারা জড়িত তা আগে সনাক্ত হয়নি। চালানসহ যারা ধরা পড়তো তাদের বেশিরভাগ মহানগরীর বাইরের হওয়ায় তাদের কাছ থেকে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যেত না।

৫ আগস্টের পর পুলিশের লজিস্টিক সাপোর্ট অনেক কমে গেছে। অনেক গাড়ি ও থানা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তারপরও চোরাকারবারী চক্রকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। আশা করা যাচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যে পুরোদমে পুলিশী কার্যক্রম শুরু হবে। তখন চোরাকারবারীরা পার পাওয়ার সুযোগ পাবে না।

Sharing is caring!