সিলেটে এখন মুখোমুখী দু’পক্ষ। এক পক্ষে আছে ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক ও শ্রমিক। অপর পক্ষে প্রশাসনসহ গোটা সিলেট সিলেটবাসী। সিলেট মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে কি চলবেনা- নিয়ে অবস্থা এখন মারমুখী।
সিলেট মহানগরীকে যানজট মুক্ত রাখতে এবং নাগরিক জীবন আরও সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল করতে অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে প্রশাসন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার আব্দুল কুদ্দুছ চৌধুরী পিপিএম পরিবহন মালিক শ্রমিকদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নগরীতে কোনো অবৈধ যানবাহন চলতে দেওয়া হবেনা। কঠোর অভিযান শুরু করবেন তারা।
হয়েছেও তাই। গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে নগরীতে শুরু হয়েছে পুলিশের বিশেষ অভিযান। চলে টানা ৩দিন। এই ৩ দিনের অভিযানে মোট ২৬১টি অবৈধ যানবাহন আটক করা হয়। এর সিংহভাগই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
শুধু রাজপথেই নয়, অভিযান শুরু হয় নগরীর বিভিন্ন অটোরিকশার গ্যারেজে। ১০টি মিটার, ১৪৫ ফুট বৈদ্যুতিক কেবল এবং ১৮০টির মতো চার্জিং পয়েন্টও ধ্বংস করা হয়।
অনেকটা দিশাহারা অবস্থায় পড়েন ব্যাটারিচালিত রিকশার মালিক ও শ্রমিকরা। তারা বুধবার কয়েক হাজার মানুষের বিশাল একটা মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পৌঁছে স্মারকরিপি দেন। তবে পথিমধ্যে তারা চৌহাট্টা, বন্দরবাজারের কৌর্ট পয়েন্ট ও নগরভবনের সামনে সিএনজিচালিত অটোরিকশার উপর হামলা ও কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেন। এমনকি কয়েকজন যাত্রী এবং চালকের উপরও হামলা করেন তারা। একই দিনে উপশহরে তারা মাইক্রোবাস স্ট্যাণ্ডেও হামলা করেছেন। এ ব্যাপারে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ দুই মামলায় শনিবার বিকালে আম্বরখানা এলাকা থেকে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদের সিলেট জেলা সভাপতি আবু জাফর ও সদস্য সচিব প্রণব জ্যোতি পালকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানাপুলিশ। তাদের দেখতে থানায় যাওয়া দুই অটোরিকশা চালককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে যানবাহন ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সিলেটের পরিবহন নেতৃবৃন্দের মধ্যে। শুক্রবার ও শনিবার তারা নগরীতে হামলা ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছেন।
এসব কর্মসূচি থেকে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ ঐক্য পরিষদের সভাপতি মইনুল ইসলাম হুমকি দিয়েছেন, ৭ অক্টোবরের মধ্যে হামলা ও ভাঙচুরকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে ৮ অক্টোবর থেকে তারা কোনো যানবাহন চালাবেন না। রাস্তায় কোনো যানবাহন নামাবেন না।
হুমকির পাশাপাশি তারা সিলেট মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও টমটম নিষিদ্ধেরও দাবি জানিয়েছেন।
মানে একা হয়ে পড়েছেন সিলেটের ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক ও শ্রমিকরা। তাদের বিরুদ্ধে যেমন প্রশাসন এবং সচেতন নগরবাসী, তেমনি পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। বিশেষ করে পরিবহন খাতের নেতাকর্মীদের দেওয়া বক্তব্য, আর হুমকি ধমকিতে সচেতন মহলে শঙ্কা বাড়ছে। আবারও একপাক্ষিক হামলা ভাঙচুরের পর এবার পরস্পরের উপর হামলা হয় কি না, শঙ্কার বিষয় এটাই।
এদিকে আবার শনিবার ব্যাটারিচালিত রিকশা শ্রমিকদের দাবি দাওয়া নিয়ে অনুষ্টিত এক সভায় নেতৃবৃন্দ রাজপথ না ছাড়ার হুমকি দিয়েছেন।
তবে শনিবার আবু জাফরসহ ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক শ্রমিকদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করায় জল আর বেশীদূর গড়াবেনা বলেও মনে করছেন অনেকে।