Beanibazarer Alo

  সিলেট     শনিবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সীমান্তে উত্তেজনা, তিন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘর্ষে আতঙ্কে সীমান্তবাসী

admin

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ | ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ | ১১:৩০ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
সীমান্তে উত্তেজনা, তিন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংঘর্ষে আতঙ্কে সীমান্তবাসী

Manual4 Ad Code

উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা :
বাংলাদেশের বান্দরবান সীমান্তসংলগ্ন মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ফের নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)—এই তিন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষে সীমান্তবর্তী এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
শনিবার রাত ৮টার দিকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু চাকমাপাড়া সীমান্তের ওপারে, আন্তর্জাতিক সীমারেখার ৩৪ নম্বর পিলার থেকে প্রায় তিন থেকে চারশ মিটার ভেতরে তীব্র গোলাগুলি শুরু হয়। রাতজুড়ে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়, এতে সীমান্তের দুই পাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

Manual8 Ad Code

স্থানীয় বাসিন্দা মনির আহমেদ বলেন, ‘রাতের দিকে হঠাৎ করেই প্রচণ্ড শব্দে গুলি শুরু হয়। প্রথমে মনে হয়েছিল আতশবাজি ফাটানো হচ্ছে, পরে বুঝি এটা আসলে গোলাগুলির শব্দ। পুরো রাত ঘরে বসে কাটিয়েছি, সবাই ভয়ে ছিল।’

গোলাগুলির সময় সীমান্তবর্তী এলাকার অনেকে সন্তান-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র চলে যান। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বিজিবি সদস্যরা টহল জোরদার করেন।

Manual7 Ad Code

এর আগে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার থেকে মিয়ানমারের লংপংপাড়া এলাকায় আরাকান আর্মি ও আরসার মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষের পরিধি বাড়তে বাড়তে বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টানা গোলাগুলির শব্দ শোনা যায় আলীকদম উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা পর্যন্ত।

রামু ব্যাটালিয়ন (৩০ বিজিবি) সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষটি মূলত সীমান্ত পিলার ৫৫ ও ৫৬-এর মধ্যবর্তী স্থানে এবং বুচিটং সীমান্ত চৌকির দায়িত্বাধীন এলাকায় ঘটছে। রামু ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পোয়ামুহুরী ও বুচিটং সীমান্ত চৌকির দায়িত্বপূর্ণ এলাকার শূন্যরেখার ওপারে সংঘর্ষ চলছে। পরিস্থিতি আমরা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি, বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।’

কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন (৩৪ বিজিবি)-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম খায়রুল আলমও নিশ্চিত করেছেন, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরাকান আর্মি, আরসা ও আরএসও’র মধ্যে সংঘর্ষের খবর আমরা নিশ্চিতভাবে পেয়েছি। আমাদের সীমান্তে কোনো সংঘর্ষ হয়নি, তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার ওপারের কুরিকপাতা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকাতেও একই ধরনের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় ম্রো জনগোষ্ঠীর সদস্যরা জানিয়েছেন, গত এক মাসে অন্তত চারবার সেখানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

সীমান্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার ৩৪ থেকে ৫৭ পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই গরু ও মাদক পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই পথের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিযোগিতাই সাম্প্রতিক সংঘর্ষের মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

Manual7 Ad Code

বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, থানচি ও রুমা সীমান্তে বিজিবির সেক্টর ও ব্যাটালিয়ন মোতায়েন রয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহল ও নজরদারি কার্যক্রম। রামু ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, ‘এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও সীমান্তসংলগ্ন হওয়ায় আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।’

Manual8 Ad Code

শেয়ার করুন