Beanibazarer Alo

  সিলেট     শনিবার, ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সেনাবাহিনীকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না

admin

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৫ | ০১:১৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫ | ০১:১৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
সেনাবাহিনীকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতির ক্রান্তিকালের কান্ডারি। আমাদের জাতিগত ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। আন্তর্জাতিকভাবে গর্ব ও গৌরবের অংশীদার। দেশের প্রতিটি সংকটে প্রচলিত কমান্ড উপেক্ষা করে গণমানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সংকট উত্তরণের পথ দেখিয়ে দিয়েছে। ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে বিশ্বস্বীকৃত আমাদের সেনাবাহিনীকে নিয়ে সম্প্রতি পরিকল্পিত বিতর্ক ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

Manual6 Ad Code

তাদের নজিরবিহীন ইতিবাচক ভূমিকাকে সংকীর্ণ স্বার্থে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। পরিকল্পিত এজেন্ডা বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বিতর্কের মুখে। অথচ বর্তমান অস্থির সময়ে দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি জোরদারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সেনাবাহিনী। দেশের স্বার্থেই তাদের বর্তমান ত্যাগী ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। তাহলে সেনাবাহিনী জনহিতকর কাজে হতোদ্যম হয়ে পড়বে। আমাদের গণতন্ত্রের অভিযাত্রা ষড়যন্ত্রের চোরাবালিতে আটকা পড়ে যাবে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী স্বৈরশাসনের পতনে যেভাবে গণমুখী ভূমিকা রাখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, তাদের মূল্যায়ন করতে হবে সেই ত্যাগ ও সদিচ্ছার নিরিখে।

Manual3 Ad Code

নব্বইয়ের গণ অভ্যুত্থানের সময় স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আনুগত্য ছেড়ে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল নুরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী যদি জনতার কাতারে শামিল না হতো তাহলে কোনোভাবেই এরশাদের পতন সম্ভব হতো না। আরও দীর্ঘ সময় স্বৈরশাসনের কবলে থাকতে হতো বাংলাদেশকে। আরও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হতো এ দেশের মুক্তিকামী মানুষকে। ঠিক একইভাবে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যদি স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পক্ষ হয়ে দাঁড়াত তাহলে দেশ গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতিতে চলে যেত। সরকার পতন প্রলম্বিত হতো। রাজপথে লাশের মিছিল বাড়ত। চব্বিশের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলনে বিচক্ষণ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নেমে এসেছে জনতার কাতারে। বলা চলে সরকারের পক্ষ ত্যাগ করে প্রচলিত কমান্ড ভেঙে জনতার কাতারে এসে শামিল হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেই সেনাবাহিনীকে নিয়ে কোনোভাবেই বিতর্ক চলে না। কোনোভাবেই তাদের প্রতিপক্ষ ভাবার সুযোগ নেই। তাদের নির্মোহ প্রচেষ্টাকে কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে না। গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের মধ্যস্থতায় নেতৃস্থানীয় সব রাজনৈতিক দল সেনানিবাসে গিয়ে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়। তা না হলে দেশব্যাপী অরাজক পরিস্থিতি আরও প্রলম্বিত হতে পারত। নৈরাজ্য ছড়িয়ে পড়ত আনাচেকানাচে। আমাদের সৌভাগ্য যে, স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর গত ৪২ বছরে আর কোনো জেনারেল ক্ষমতার দিকে হাত বাড়ায়নি। ১৯৮২ সালে ২৪ মার্চ আজকের দিনে সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। পাকিস্তান, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মতো ক্ষমতালিপ্সু নয় আমাদের জেনারেলরা। নইলে ইতিহাস অন্যরকম হতে পারত। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে পুলিশের অভাব ও নির্লিপ্ততা পূরণে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বপূর্ণ কাজ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে তুলছে সেনাবাহিনী। কিন্তু এরই মধ্যে সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা সক্রিয় রয়েছে। গত ৫ আগস্টের পর রাজনীতিতে নানা মত-পথের পার্থক্য প্রকট হয়েছে। সংঘবদ্ধ অরাজকতায় দেশজুড়ে আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নিজেদের মধ্যেই হানাহানি বেড়ে গেছে। এখনো দেশে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি। বড় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলো এখনো মাঠে সক্রিয় নয়। তারপরও নতুন রাজনৈতিক দলের নেতারা মাঠপর্যায়ে গিয়ে নিজেদের লোকদের বাধার মুখে পড়েছেন। অদূর ভবিষ্যতে দেশের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়বে। তখন সেনাবাহিনীর অনিবার্য উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। দেশে পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার কোনো সুযোগ নেই। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে যেতে পারে।

গত ১৫ মার্চ বিডিআর হত্যাকাে র বার্ষিকীতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, আপনারা নিজেরা যদি কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি, কাটাকাটি করেন এ দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। তিনি বলেন, আমার অন্য কোনো আকাক্সক্ষা নেই। আমার একটাই আকাক্সক্ষা- এ দেশ এবং জাতিকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসব। গত সাত মাসে অনেক হয়েছে। এ দেশে আমরা সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই।

সেই অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান আরও বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পেছনে কিছু কারণ আছে। প্রথম কারণ হচ্ছে, আমরা নিজেরা হানাহানির মধ্যে ব্যস্ত। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারে ব্যস্ত। এটা একটা চমৎকার সুযোগ অপরাধীদের জন্য। যেহেতু আমরা অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে আছি। তারা জানে এ সময়ে অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়া যাবে। এ পরিস্থিতিতে আমরা যদি সংগঠিত থাকি, একত্রিত থাকি, তাহলে এটা সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব।

Manual7 Ad Code

তিনি বলেন, এ দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব শুধু সেনাবাহিনীর নয়। দুই লাখ পুলিশ আছে। র‌্যাব আছে, বিজিবি আছে। আনসার-বিডিপি আছে। আমার আছে ৩০ হাজার সৈন্য। এই যে একটা বিরাট শূন্যতা আমি ৩০ হাজার সৈন্য দিয়ে কীভাবে এটা পূরণ করব? ৩০ হাজার মাঠে থাকে। ৩০ হাজার ক্যান্টনমেন্টে চলে যায়, আরও ৩০ হাজার আসে। এটা দিয়ে আমরা দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছি।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকৃত অর্থেই গত সাত মাস ধরে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে মাঠের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এত দীর্ঘ সময় সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় ও বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় কখনো তাদের থাকতে হয়নি। এটা নিঃসন্দেহে অনেক শ্রমসাধ্য কাজ। দেশে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটছে। চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, ছিনতাই, খুন, সন্ত্রাস, রাহাজানি নিত্যদিনের ঘটনা। নাগরিকদের নিরাপত্তা বলতে কিছু নেই। মনোবল ভাঙা সন্ত্রস্ত পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না। উপরন্তু পুলিশ মার খেয়ে ব্যারাকে ফিরে আসছে। পুলিশের ওপর হামলা হচ্ছে। আসামি ছিনিয়ে নিচ্ছে। সংঘবদ্ধ মব সৃষ্টি করে নাগরিক নিরাপত্তা বিপন্ন করা হচ্ছে জায়গায় জায়গায়। কোথাও কোনো জবাবদিহি নেই। এ পরিস্থিতিতে গত সাত মাস ধরে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে সেনাবাহিনী। তারা যদি মাঠে সক্রিয় না থাকত তাহলে সারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ত। বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ত সমাজের সর্বস্তরে। সামাজিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ১৩ মার্চ সশস্ত্র বাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতার মেয়াদ চতুর্থবারের মতো বাড়ানো হলো। এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি থেকে তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতার মেয়াদ দুই মাস বাড়ানো হয়েছিল। প্রথমে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই মেয়াদ নভেম্বরের মাঝামাঝি শেষ হয়। পরে সেই ক্ষমতার মেয়াদ বাড়ানো হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্য দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌত্ব রক্ষায় জীবন উৎসর্গের শপথ নেয়। দেশের অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে এ আত্মত্যাগের শপথ নিতে হয় না। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, পুলিশ, র‌্যাব কাউকেই দায়িত্ব পালনে জীবনদানের শপথ নিতে হয় না। এ অসামান্য ত্যাগের দাবিদার একমাত্র সেনাবাহিনী। তাদের সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে। অতীতে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু কোনো ষড়যন্ত্রই ফলপ্রসূ হয়নি। কর্তব্যে অবিচল পেশাদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রই সফল হয়নি। বর্তমানে সেনাবাহিনীকে প্রতিপক্ষ বানানোর প্রচেষ্টাও সফল হওয়ার নয়। কারণ, এ দেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন। তারা যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে, পূর্বাপর কর্মতৎপরতা বিচার করে সিদ্ধান্ত নেয়। চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে সাধারণ মানুষকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভ্রান্ত করা যাবে না। উপরন্তু এ হীন প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িতরাই নিজেদের কৃতকর্মের কারণে বিতর্কিত হয়ে পড়বে।

Manual2 Ad Code

শেয়ার করুন