Beanibazarer Alo

  সিলেট     মঙ্গলবার, ১৬ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হবিগঞ্জে তিন খুনের নেপথ্যে গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব, থমথমে পুরো গ্রাম

admin

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪ | ০১:২৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১২ মে ২০২৪ | ০১:২৯ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
হবিগঞ্জে তিন খুনের নেপথ্যে গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব, থমথমে পুরো গ্রাম

Manual8 Ad Code

হবিগঞ্জ সংবাদদাতা:
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার আগুয়া গ্রামে তিন খুনের নেপথ্যে রয়েছে গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্ব। গোষ্ঠীভিত্তিক দ্বন্দ্বের কারণেই গেল কয়েক বছর যাবত উত্তপ্ত ছিল পুরো গ্রাম। এরইমধ্যে বেশ কয়েকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে ওই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। যার শেষটা হয়েছে তিন খুনের মধ্যে দিয়ে। বৃহস্পতিবার তিন খুন হওয়ার পর থেকেই পুরো গ্রামে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

চারদিকে শুধু ভেসে আসছে কান্নার আওয়াজ। স্বজন হারানোর আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠছে এলাকার আকাশ বাতাস। শুক্রবার বাদ জুম্মা খুন হওয়া তিন জনের মরদেহ বাড়িতে পৌছলে কান্নার রোল পড়ে যায় নিহতের স্বজনদের মধ্যে। বাদ আছর তিন জনের জানাজার নামাজ শেষে গ্রামের কবরস্থানে পাশাপাশি শায়িত করা হয়। এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজিসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তরা।

Manual4 Ad Code

নিহত তিন ব্যক্তির গোষ্ঠীর সর্দার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আগুয়া গ্রামের সিএনজি স্ট্যান্ডের ম্যানেজার বদরুল আলম বদির ও সোহেল মিয়া গত ইউপি নির্বাচনে মেম্বার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এতে সোহেল মিয়া জয়ী হন। এরপর থেকে বদরুল আলম ও তার লোকজন আমাদের গোষ্ঠীর লোকজনের সাথে মারামারি করার জন্য ওঠেপড়ে লাগে। এর আগেও আমাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

তিনি বলেন- বৃহস্পতিবার সকালে আমার ভাতিজা কাদির মিয়া বাড়ির পাশ থেকে সিএনজিতে একজন যাত্রী উঠায়। বিষয়টি জেনে ম্যানেজার বদরুল আলম তাকে স্ট্যান্ডের অফিসে ডাকেন। কাদির মিয়া অফিসে গেলে তাকে কয়েকজন মিলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারপিট করেন। ঘটনাটি লাইন সভাপতি আশিক মিয়াকে জানানো হলে তিনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন। দুপুর ২টার দিকে বদরুল আলম ও তার লোকজন কাদিরের বাড়ি ঘেরাও করে হামলায় চালায়। এরপর দুইপক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে আমাদের তিনজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বদরুলের লোকজন।

Manual8 Ad Code

নিহত সিরাজ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সবাই মিলে আহাজারি করছেন। ১০ বছরের মেয়ে মার্জিয়া বিছানায় লুটোপুটি খেয়ে বলছে- এখন আমি কাকে বাবা ডাকব ? আমাদের কে আদর করবে? এসময় সিরাজ মিয়ার মা ও স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্চ্ছা যাচ্ছিরেন। তারা সকলেই এই হত্যার সাথে জড়িতদের ফাঁসি দাবী করেন। নিহত লিলু মিয়ার মা সুন্দর বানু বলেন- যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই। আমার চারজন নাতি-নাতনী এতিম হয়ে গেল। এখন তাদের মুখে ভাত দেয়ার কেউ রইল না।

অটোরিক্সাচালক কাদির মিয়ার বাড়িতেও একই দৃশ্য। বাড়ির উঠোনে কাদির মিয়ার ১ বছর বয়সী সন্তানকে কোলে নিয়ে তার মা আহাজারি করছেন। তিনি দোষীদের দৃষ্ঠান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানান। স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেল মিয়ার ভাই বাবলু মিয়া বলেন, আমার ভাইর কাছে নির্বাচনে পরাজিত হয় বদরুল আলম বদির। এরপর থেকে বদির ও তার লোকজন আমাদের সাথে ঝগড়ার পরিকল্পনা নিচ্ছিল। যার ফল হিসেবে তারা আমাদের তিনজনকে পরিকল্পনা করে হত্যা করেছে। এদিকে, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান ও হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পরিদর্শনকালে ডিআইজি নিহত তিনজনের স্বজনের সাথে কথা বলে তাদেরকে ন্যায়বিচারের আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিন খুনের ঘটনায় এখন কোন মামলা হয়নি। তবে দোষীদের আটক করতে পুলিশের অভিযান চলছে।

Manual4 Ad Code

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (৯ মে) আগুয়া গ্রামে সিএনজি অটোরিক্সাতে যাত্রী ওঠানোকে কেন্দ্র করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে একইপক্ষে তিনজন নিহত হন। নিহতরা হলেন- লিলু মিয়া (৫০), সিএনজি চালক কাদির মিয়া (৩০) ও সিরাজ মিয়া (৩৬)। এতে আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৫০ জন। আশংকাজনক অবস্থায় আহত তিনজন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। নিহত লিলু মিয়ার চাচাতো ভাই অপর নিহত সিরাজ মিয়া। আর কাদির মিয়া সম্পর্কে তাদের ভাতিজা।

Manual8 Ad Code

শেয়ার করুন