Beanibazarer Alo

  সিলেট     বৃহস্পতিবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৩ বছরে ৫১ মামলার রায়

admin

প্রকাশ: ২৭ মার্চ ২০২৩ | ০১:১৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৩ | ০১:১৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
১৩ বছরে ৫১ মামলার রায়

Manual3 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ১৩ বছর পূর্ণ হয় ২৫ মার্চ। এই সময়ে ট্রাইব্যুনাল থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫১টি মামলার রায় হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামি ছিল ১৫১ জন। দণ্ডিত হয়েছেন ১৩১ জন। রায় হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ১৮ জন। আর পলাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন দুজন।

৫১ মামলার রায়ের পর চূড়ান্ত আপিল শুনানি শেষে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে ছয় আসামির। আর সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ডের দুই আসামির রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া খালাস পেয়েছেন দুজন। বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে ৪০টি মামলা। আর ট্রাইব্যুনালে চলছে ৩৫টি মামলার বিচারকাজ।

Manual6 Ad Code

প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মুখলেছুর রহমান বাদল যুগান্তরকে বলেন, জার্মানির নুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলার বিচার শেষ হয়েছে ২৩ বছরে গত নভেম্বরে। এ রায়ে এক আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। আর আমাদের ট্রাইব্যুনাল থেকে গত ১৩ বছরে ৫১টি রায় এসেছে। এটা বিচার বিভাগের একটি যুগান্তকারী অর্জন। এই অর্জনের ধারা অব্যাহত থাকবে।

নিজেদের দুর্বলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট তেমন ছিল না। ট্রাইব্যুনালের আইন সম্পর্কে আমাদের নিজস্ব কোনো ট্রেনিং ছিল না। তারপরও এখানে নিখুঁতভাবে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিচার হয়েছে। আমাদের রায়গুলো আন্তর্জাতিকভাবে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। মামলাগুলো আইসিটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করছে। আমরা পুরোপুরি সফল। এ সময় তিনি জানান, ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ১৬ জন প্রসিকিউটর রয়েছে।

Manual8 Ad Code

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নিরীহ বাঙালির ওপর বর্বর গণহত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন চালিয়েছিল। এসব অপরাধে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করা বা নৃশংসতায় সরাসরি অংশ নেয় তাদের এ দেশীয় দোসররা। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের যাত্রা শুরুর পর দুই বছরের মাথায় ২০১২ সালের ২২ মার্চ আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়, যা ট্রাইব্যুনাল-২ নামে পরিচিতি পায়। ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুই ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করে আবার একটি ট্রাইব্যুনাল করা হয়। এখন একটি ট্রাইব্যুনালে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১) বিচারকাজ চলছে।

২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারি প্রথম রায় আসে। দুটি ট্রাইব্যুনাল থেকে ওই বছর মোট ৯টি মামলায় রায় হয়। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আসে ১২টি মামলায় রায়। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চার বছরে আসে ২০টি মামলায় রায়। ২০২০ সালে ট্রাইব্যুনাল থেকে কোনো রায় আসেনি। ২০২১ সালে দুটি রায় দেন ট্রাইব্যুনাল-১। গত বছর ৬টি মামলার রায় আসে। আর ২০২৩ সালের (২৩ মার্চ পর্যন্ত) ২টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। সর্বশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের পাঁচজন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

Manual4 Ad Code

তদন্ত সংস্থার সূত্র জানায়, শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষে বর্তমানে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় স্থানীয় ও তৃণমূলের যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ৪৬৩টি অভিযোগ জমা রয়েছে। এগুলোতে আসামির সংখ্যা ২ হাজার ৭৯৯ জন। অভিযোগগুলো তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই করছেন। বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে ৪০টি মামলা। আর ট্রাইব্যুনালে চলছে ৩৫টি মামলার বিচারকাজ।

Manual2 Ad Code

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক এম সানাউল হক বলেন, অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আমরা তদন্ত করি। এ কারণেই ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিকভাবে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন, তদন্ত সংস্থায় যেসব অভিযোগ জমা পড়ে তা যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। এখানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা রয়েছে।

সুপ্রিমকোর্ট সূত্র জানায়, ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে শীর্ষ পর্যায়ের সাত আসামির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া আসামিরা হলেন-জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, দলটির শীর্ষ স্থানীয় নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলী ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

এদিকে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের করা আপিলের ওপর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে আজহারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন (রিভিউ) করেন তিনি। পুনর্বিবেচনার আবেদন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায়। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন তিনি। তবে পুনর্বিবেচনা আবেদন নিষ্পত্তির আগে গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতালের প্রিজন সেলে মারা যান তিনি।

 

শেয়ার করুন