Beanibazarer Alo

  সিলেট     শুক্রবার, ১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৭ জানুয়ারি ভোট, কিন্তু এরপর কী?

admin

প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০১:৩৮ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০১:৩৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
৭ জানুয়ারি ভোট, কিন্তু এরপর কী?

Manual8 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট। এবারের নির্বাচনে শুধু আভ্যন্তরীণ উপাদানই নয়, সঙ্গে যোগ হয়েছে আন্তর্জাতিক সমীকরণও। বাংলাদেশের প্রতি, বিশেষ করে নির্বাচনকে কেন্দ্র আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে অনেক আগে থেকেই। তাই নির্বাচনের পরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন অনেকেই। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সতর্ক অবস্থান এবং বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রতি রাশিয়া ও চীনের মনোযোগ— সব মিলিয়ে ধারণা করা হচ্ছে, নির্বাচন পরবর্তী সরকারের জন্য সামগ্রিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়াটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে এবারের নির্বাচনে বিদেশিদের আগ্রহ অনেক বেশি দৃশ্যমান। গেলো কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে অর্থাৎ ২০০৮, ২০১৪ বা ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা এত দৃশ্যমান ছিল না। এবারে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চীন ও রাশিয়ার প্রকাশ্য আগ্রহ। পশ্চিমা বিশ্ব ও তাদের বিরোধী শিবিরের (রাশিয়া ও চীন) আগ্রহের জায়গা সম্পূর্ণ বিপরীত। একদল জোর দিচ্ছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, মত প্রকাশে স্বাধীনতাসহ অন্যান্য নাগরিক অধিকারের ওপর। অন্যদিকে আরেক দল বিষয়গুলোকে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মনে করে।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সামগ্রিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নতুন সরকারকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। একইসঙ্গে সবার সঙ্গে আলোচনা করে কৌশল নির্ধারণ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে সূক্ষ্ম ভারসাম্য নিশ্চিত করতে হবে।

Manual5 Ad Code

ইস্যু সাময়িক, দক্ষতা স্থায়ী
বর্তমানে নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে সরকার ও পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে। নতুন করে শ্রম অধিকারের বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

Manual1 Ad Code

এ বিষয়ে সাবেক একজন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) কূটনীতিক বলেন, ‘প্রেক্ষাপট, সময় ও জাতীয় স্বার্থের কারণে বিভিন্ন বিষয়ে দুই পক্ষ একমত নাও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ও সময় পরিবর্তন হলে অমীমাংসিত বিষয়ে তারা একমত হয়। যে সময়ে দুই পক্ষ একমত হয় ওই সময়ে আবার নতুন ইস্যু সামনে চলে আসে। অর্থাৎ ইস্যুগুলো সাময়িক সময়ের জন্য আসে ও সমাধান হয়। অন্যদিকে যেগুলো সমাধান হয় না সেটি এক সময় গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য দক্ষ ব্যক্তি। নতুন নতুন ইস্যু সবসময় আসতে থাকবে। কিন্তু ইস্যুগুলো সঠিকভাবে মোকাবিলা করার মতো দক্ষ ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে ও নিতে হবে। সঠিক ব্যক্তিকে সবসময় কাজের দায়িত্ব দেওয়ার ব্যবস্থাটি স্থায়ী হতে হবে।’

সূক্ষ্ম ভারসাম্য
বাংলাদেশ সবসময় বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রেখে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করে থাকে। সূক্ষ্ম ভারসাম্য মানে সবাইকে সমান গুরুত্ব নয়, বরং প্রয়োজন বিবেচনা করে কোনও সময় একপক্ষকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া এবং অন্য সময় অন্য পক্ষকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া।

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘কোন পক্ষকে কখন, কোথায় ও কীভাবে কী ধরনের গুরুত্ব দেওয়া দরকার, সেটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও সাহস, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা এবং সঠিকভাবে ও সঠিক সময়ে ওই সিদ্ধান্তের প্রয়োগ একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’

কূটনীতিতে ধারাবাহিকতা ও সঙ্গতিপূর্ণ আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘এখানে শব্দের ব্যবহার ও ঠিক শব্দ খুঁজে বের করাও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’

Manual4 Ad Code

তিনি বলেন, ‘‘কিছুদিন আগেও যুক্তরাষ্ট্রে কত গুম হয়েছে বা সে দেশে কত ধর্ষণ হয়, ওই পরিসংখ্যান দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা হতো। কিন্তু এখন ‘ওয়াশিংটন আমাদের বন্ধু’— এ ধরনের মন্তব্য করা হয়। এ ধরনের ঢালাও মন্তব্য ধারাবাহিক ও সঙ্গতিপূর্ণ আচরণ নয়। এই ধরনের আচরণ করলে বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়।’’

শ্রম পরিস্থিতি
বাংলাদেশে সবসময়ে অর্থ, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় হিসেবে সঙ্গত কারণে বিবেচনা করা হয়। তবে সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে দেখা যায়, সামনে দিনে শ্রম মন্ত্রণালয়ও অত্যন্ত গুরুত্ব পাবে।

এ বিষয়ে সাবেক আরেক কূটনীতিক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তাদের নতুন যে শ্রমনীতি ঘোষণা করেছে, সেটি তারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাইবে। বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতিকে যে তারা গুরুত্ব দিচ্ছে সেটির বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন শ্রমনীতির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে বাংলাদেশের রেফারেন্স দিয়েছেন।’

Manual6 Ad Code

তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও এ বিষয়ে কোনও দৃশ্যমান মন্তব্য করেনি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে অগ্রসর হলে তারাও পিছিয়ে থাকবে না।’ অন্য আরেকটি বিষয় হচ্ছে সামনের বছর মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট সরকার ক্ষমতায় না আসলেও পরিবর্তিত সরকার মার্কিন নীতির পরিবর্তন ঘটাবে না এবং এটি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

‘মাল্টি পার্টি’ কূটনীতি
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক শুধু দ্বিপক্ষীয় উপাদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে চীন ও ভারত কী নজরে দেখছে, সেটিও সামগ্রিক বিবেচনার একটি অংশ। একই বিষয় প্রযোজ্য বাংলাদেশ-ভারত বা বাংলাদেশ-চীন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে।

এ বিষয়ে সাবেক আরেক কূটনীতিক বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যে বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল সেটি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। বর্তমান ভূ-রাজনীতি আগের যেকোনও সময়ের চেয়ে জটিল। আর ওই ভূ-রাজনীতির বড় একটি অংশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে ঘিরে, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান।’

তিনি বলেন, ‘এটি কোনও গোপন বিষয় নয় যে ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া সমীকরণ এবং ওই দেশগুলো বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

সবদিক বিবেচনা করলে যেকোনও দুই দেশের সম্পর্কে শুধু দ্বিপক্ষীয় উপাদান নয়, বরং অন্য দেশগুলোও ওই সহযোগিতাকে কী চোখে দেখছে, সেটিও বিবেচনায় নিতে হবে বলে তিনি জানান।

এই বিশ্লেষক বলেন, ‘মোটা দাগে বাংলাদেশ একটি সন্ধিক্ষণে আছে। তবে এর আগেও অনেক দেশ বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের সন্ধিক্ষণের মুখোমুখি হয়েছে। বাংলাদেশের এখন দরকার গোটা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। আর ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য সঠিক ও দক্ষ লোককে দায়িত্ব দেওয়া।’

শেয়ার করুন