ধারদেনা আর ‘হাত পেতে’ নির্বাচন করবেন বিয়ানীবাজারের প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা!

Daily Ajker Sylhet

admin

১২ মে ২০২৪, ০৩:৫১ অপরাহ্ণ


ধারদেনা আর ‘হাত পেতে’ নির্বাচন করবেন বিয়ানীবাজারের প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা!

মো: আবুল হাছান আহমদ:
আগামী ২৯শে মে বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্টিত হবে। ১৩মে সোমবার প্রতীক বরাদ্দের পরই শুরু হবে প্রার্থীদের আনুষ্টানিক প্রচারণা। পোস্টার-লিফলেট আর মাইকের আওয়াজে সরগরম হয়ে ওঠবে পুরো উপজেলা। গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়বে উৎসবের আমেজ। প্রার্র্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে চায়ের স্টলে ঝড় ওঠবে। মিছিল-শ্লোগানে প্রকম্পিত হবে বিয়ানীবাজার। ভোট উৎসবের মাঝে উত্তাপ ছড়াবে প্রার্থীদের কথা-পাল্টা কথায়।

উৎসবের এমন মূহুর্তে এখনই কথা ওঠেছে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের হলফনামা নিয়ে। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতাকারী সব প্রার্থীই হাত পেতে আসন্ন নির্বাচন করবেন! অন্যের কাছ থেকে ধারদেনা আর অনুদানে নির্বাচনী বৈতরনী পার করবেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তারা। কোন প্রার্থীই ১০ লাখ টাকার বেশী ব্যয় করবেননা বলে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছেন। হলফনামায় দেয়া প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের এমন হিসাব মানতে পারছেননা সাধারণ ভোটাররা। তারা বলছেন, নির্বাচনী ঢামাডোল শুরুর আগেই প্রার্থীরা এই টাকার বেশী ব্যয় করে ফেলেছেন। প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের হলফনামা থেকে জানা যায়, সবাই আত্মীয়স্বজন, পরিবারের সদস্যদের দেয়া অনুদানে নির্বাচন করবেন। তাদের কারো কাছে নির্বাচনী ব্যয়ের টাকা-পয়সা নেই। উল্লেখ করার মত সম্পদও নেই তাদের। স্ত্রীদের স্বর্ণালঙ্কার থাকলেও এগুলো উপহারে পাওয়া।

সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীদের মধ্যে শিক্ষায় এগিয়ে আছেন প্রভাষক মো: জহির উদ্দিন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ, এলএলবি। এরপরেই আছেন সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসএস সম্পন্ন করেছেন। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব মামলায় এগিয়ে। মামলার দিক দিয়ে ২য় অবস্থানে রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান জামাল হোসেন। আর বেশী সম্পদের মালিক দাবী করে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন জাকির হোসেন সুমন।

ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সবাই কমবেশী শিক্ষিত। তাদেরও নিজস্ব কোন টাকা পয়সা নেই। নির্বাচনী ব্যয় করবেন হাত পেতে। এবারের নির্বাচনে এই পদে নির্বাচন করা সবাই নতুন এবং তরুণ। মহিলা ভাইস চেয়াম্যান প্রার্থীদের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো করুণ। তাদের কেউই লাখ টাকার বেশী ব্যয় করবেনা বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

বিয়ানীবাজারে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, সভাপতি আতাউর রহমান খান, সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুল বারী ও মোহাম্মদ জাকির হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের প্রভাষক মো: জহির উদ্দিন, লাউতার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান গৌছ উদ্দিন ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো: জাকির হোসেন সুমন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল হক রুনু, সায়দুল ইসলাম, লায়ন সুহেল আহমদ রাসেদ, সাবেক ফুটবলার জামাল আহমদ, উলামা মাশায়েখ মনোনিত মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন, জসিম উদ্দিন, পলাশ আফজাল, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খালেদুর রহমান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হাসিনা আক্তার, জেসমিন নাহার, রুমানা আফরোজ, জাহানারা বেগম সাদিয়া নির্বাচনের জন্য মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে একমাত্র আওয়ামীলীগ ছাড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, এলডিপি, সিপিবি, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, ইসলামী আন্দোলন, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, জেএসডি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপসহ আরও বেশ কয়েকটি দল অংশ নিচ্ছেনা। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান কিংবা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও তাদের দলীয় সমর্থক কোন প্রার্থী নেই। একটি সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান পদে যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাকির হোসেন সুমন বিগত সময়ে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে মাথিউরায় ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন।

বিয়ানীবাজার সুজন’র সভাপতি এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন জানান, যেসব রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিগত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, সেসব দল ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেনি। সরকারের ঘনিষ্ঠ ও নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের প্রতি পক্ষপাত ছিল, এমন দলগুলোও অংশগ্রহণ করেনি।

বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মিলাদ মো: জয়নুল ইসলাম বলেন, প্রার্থী যত বেশী প্রতিদ্বন্ধিতা তত বেশী হবে। এখানে ভোটারদের কদর বাড়বে, নির্বাচনী চর্চার আকার বৃদ্ধি পাবে।

Sharing is caring!