Beanibazarer Alo

  সিলেট     শনিবার, ২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জেলবন্দি সাবেক মন্ত্রীর আদালত চত্বরে ‘সাংবাদিক বৈঠক’

admin

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৩ | ১২:৪৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৩ | ১২:৪৬ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
জেলবন্দি সাবেক মন্ত্রীর আদালত চত্বরে ‘সাংবাদিক বৈঠক’

Manual5 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
নিয়োগ দুর্নীতিতে কয়েক মাস জেলবন্দি পশ্চিমবঙ্গের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সম্প্রতি আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে তার অবাধে কথা বলা নিয়ে চলছে বিতর্ক। স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে একের পর এক অভিযুক্ত ধরা পড়েছেন।

Manual1 Ad Code

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। তিনি রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী শুধু নন, তৃণমূলের মহাসচিবও ছিলেন। গত জুলাইয়ে ইডি পার্থকে গ্রেফতারের পর রাজ্যের শাসক দল তাকে বহিষ্কার করে। এরপর দফায় দফায় হেফাজত ও শুনানির হাজিরায় ইদানীং ম্রিয়মাণ, হতোদ্যম দেখায় পার্থকে।

আদালতে আসা-যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কার্যত নিরুত্তরই থাকেন। কখনো কখনো দলের সমর্থনে বার্তা দেন। কয়েক দিন আগেই আদালতের কাছে তিনি অসুস্থতার কারণে জামিনের অনুরোধ করেন। তবে তার অন্য চেহারা দেখা গেল চলতি সপ্তাহে।

ইডি হেফাজতে থাকা পার্থকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে পেশ করা হয় গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ)। মন্ত্রী-মহাসচিব থাকার সময় সাংবাদিক বৈঠকে বিরোধীদের আক্রমণ করতেন তেড়েফুঁড়ে। এ দিন খানিকটা পুরনো মেজাজে ফিরে পাওয়া গেল তাকে।

পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দিকে আঙুল তোলেন। তার দাবি, মন্ত্রী থাকাকালীন নিয়োগের জন্য তারা তার কাছে সুপারিশ করেছিলেন।

তিনি কোনো বেআইনি কাজ করতে রাজি হননি! পার্থের এই বিস্ফোরক মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে। একই সঙ্গে উঠে আসছে একটি ভিন্ন প্রশ্ন, জেলবন্দি অভিযুক্ত কীভাবে অবাধে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বললেন? পাশে পুলিশ থাকলেও কেন তারা সাবেক মন্ত্রীকে নিরস্ত করল না?

পুলিশ বা বিচারবিভাগীয় হেফাজতে থাকা বন্দিদের আদালতে পেশ করার সময় তারা বিক্ষিপ্ত কিছু মন্তব্য করেন ঠিকই। অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের ছুড়ে দেওয়া প্রশ্নে টুকরো জবাব দেন। ধাক্কাধাক্কির মধ্যে যখন দ্রুত পুলিশ আসামিকে আদালতের ভিতর নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন ধীরেসুস্থে জবাব দেওয়ার অবকাশ থাকে না।

Manual3 Ad Code

কিন্তু বৃহস্পতিবার পার্থের সঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরের আবহ যে আলাদা ছিল, তা খালি চোখে ধরা পড়েছে। বিনা বাধায়, সময় নিয়ে সাবেক মন্ত্রী বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। পিছনে উর্দিধারীরা থাকলেও তারা অন্যান্য বন্দিদের মতো পার্থকে আদালত থেকে জেলে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তৎপরতা দেখাননি।

এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। সিপিএম সাংসদ, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার অন্যতম আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘হেফাজতে থাকাকালীন কারো সঙ্গে মত বিনিময় করা নিয়মবিরুদ্ধ। কিন্তু এখানে ওজনদার নেতা-মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম কার্যকর হয় না।’

যদিও আর এক প্রবীণ আইনজীবী, সাবেক বিধায়ক অরুণাভ ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বিচারাধীন মানে পার্থ অভিযুক্ত। তিনি কথা বলতেই পারেন।’ তৃণমূল নেতা, আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আদালত চত্বরে বন্দিদের কথা বলা কোনো নতুন ব্যাপার নাকি! ভাঙরের বিধায়ক আদালতে পেশের সময় এতো কথা বলেছেন, তখন কেন এই প্রশ্ন ওঠেনি?’

নিয়োগ দুর্নীতিতে আটক বহিষ্কৃত তৃণমূল যুব নেতা কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়রাও আদালতে আসা-যাওয়ার পথে মন্তব্য করছেন। আবার অতীতে দেখা গেছে, সারদা মামলায় আটক সাংবাদিক কুণাল ঘোষ আদালতের বাইরে কিছু বলতে চাইলে পুলিশ বাধা দিত, প্রিজন ভ্যান চাপড়ে কুণালের মন্তব্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি করত!

Manual3 Ad Code

কুণাল এখন তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক, অন্যতম মুখপাত্র। পার্থকে আদালতে পেশ করার দিন সকালে তিনি একটি টুইট করেন। তাতে নিয়োগ দুর্নীতিতে সুজন, শুভেন্দুদের নিশানা করা হয়। তারপরই তৃণমূলের সাবেক মহাসচিবের একই দাবির মধ্যে অনেকে শাসক দলের যোগসূত্র খুঁজছেন। আদালত চত্বরে পার্থের সঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরের সময় পুলিশি নিঃস্পৃহতা এই যোগসূত্রের জল্পনায় ঘি ঢেলেছে।

সাবেক পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘শাসক দলের পক্ষে বললে পুলিশ বলার সুযোগ দেয়। তাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দিয়েছে। কুণাল ঘোষ তখন বিরুদ্ধে বলতেন। তাই তাকে বলতে বাধা দিত পুলিশ।’ বিকাশরঞ্জনের দাবি, তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টাতেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় মুখ খুলেছেন। পুলিশ তাকে সুযোগ করে দিয়েছে।

Manual8 Ad Code

 

শেয়ার করুন