সিলেট নার্সিং কলেজ হোস্টেলে ছাত্রীদের দিন কাটছে দুর্বিসহ
২৫ মে ২০২৪, ১২:৩১ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন সিলেট নার্সিং কলেজ হোস্টেলে আবাসন সমস্যা প্রকট হয়ে দঁড়িয়েছে। ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ ছাত্রীকে হোস্টেলে রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। ফলে শতাধিক ছাত্রীকে থাকতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগের মধ্যদিয়ে। এ নার্সিং কলেজের নতুন ৬ তলা হোস্টেল ভবন নির্মাণ করা হলেও ছাত্রীদেরকে সেখানে স্থানান্তর করার বিষয়ে গড়িমসি করছেন কর্তৃপক্ষ।
পর্যাপ্ত রুমের দাবিতে ছাত্রীরা কিছুদিন পরপরই কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দেন- এমনকি আন্দোলনও করেন। তখন নতুন ভবনে তাদের স্থানান্তর করার আশ্বাস দেন কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আন্দোলনে গেলে পরীক্ষায় ফেল করানোসহ নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে ছাত্রীদের নীরব করার অভিযোগও রয়েছে। চলমান তীব্র গরমে থাকার কষ্টে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ফের কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে পর্যাপ্ত রুমের দাবি করেন অর্ধশত ছাত্রী। পরে তারা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। ছাত্রীদের সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ঠেকাতে একপর্যায়ে পুলিশ ডেকে নিয়ে আসেন কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষান্ত হননি, কর্তৃপক্ষ শেষ বিকালে সব ছাত্রীকে হল ছাড়ার নোটিশ জারি করেন। এতে ছাত্রীদের মাঝে দেখা দিয়েছে আরও ক্ষোভ এবং হতাশা।
জানা যায়, হোস্টেলে বর্তমানে আছেন সিলেট নার্সিং কলেজে অধ্যয়নরত পোস্ট বেসিক বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ, পোস্ট বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং, বিএসসি নার্সিং কোর্স ও ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি ডিপার্টমেন্টের প্রায় পাঁচ শ’ ছাত্রী। হোস্টেলের চারতলা ভবনের দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় তিনটি হলরুম আছে। সেগুলোতে নার্সিংয়ের ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের ছাত্রীরা থাকেন। মিডওয়াইফারি প্রথম বর্ষের ছাত্রীরা দ্বিতীয় তলার হলরুমে এবং তৃতীয় ও চতুর্থ তলার হলরুমে থাকেন বিএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্রীরা। ভবনের প্রথম তলায় রয়েছে রান্না ও খাবার ঘর। এর পাশাপাশি কয়েকটি থাকার কক্ষও রয়েছে। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায়ও হলরুম ছাড়া আলাদা থাকার বেশ অনেকগুলো কক্ষ আছে।
কক্ষগুলোতে এই চার প্রোগ্রামের প্রথম বর্ষ (পুরাতন), দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় বর্ষ ও চতুর্থ বর্ষের ছাত্রীরা থাকেন। প্রতিটি কক্ষে চারজন করে থাকার কথা থাকলেও ধারণক্ষমতার বেশি ছাত্রী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এসব কক্ষে ছয়জন করে ছাত্রী গাদাগাদি করে থাকছেন। এই ছয়জনের মধ্যে চারজন সিনিয়র সিটে এবং একজন পুরাতন প্রথম বর্ষের ছাত্রী ও চার প্রোগ্রামের কোনো একটি নতুন ভর্তি হওয়া একজন ছাত্রী ফ্লোরে থাকছেন।
এছাড়া নতুন ভর্তি হওয়া ছাত্রীরা কক্ষ বা সিটে জায়গা না পাওয়ায় হলরুমগুলোতে থাকছেন গাদাগাদি করে। একেকটি হলরুমে ১৫-২০ জন থাকার মতো অবস্থা থাকলেও প্রায় ৫০ জন থাকছেন কোনোমতে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। চলমান তীব্র গরম এ ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে শতগুণ। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই আবাসন সমস্যার কোনো সমাধান করছেন না কলেজ ও হোস্টেল কর্তৃপক্ষ। নতুন ভবনে স্থানান্তরের দাবি তুললে বা ভোগান্তির জন্য আন্দোলনে গেলে ছাত্রীদের থামানো হয় নানা কৌশলে।
হোস্টেলে অবস্থানরত বিভিন্ন ব্যাচের কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএসসি ১৩ ব্যাচের ৪৪ জন ছাত্রী সিনিয়রদের সঙ্গে রুমে থাকছেন। এ ব্যাচের আরও ২৪ জন ছাত্রী হলরুমে আছেন বিভিন্ন প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া নতুনদের সঙ্গে। এছাড়া মিডওয়াইফারি পুরাতন প্রথম বর্ষের ছাত্রীরা এখনো হলরুমে আছেন তাদের সিনিয়রদের পরীক্ষা শেষ হয়ে বের হয়ে যাননি বলে।
এ অবস্থায় চরম ভোগান্তি নিয়ে হলরুমগুলোতে থাকা বিভিন্ন ব্যাচের প্রায় অর্থশত ছাত্রী বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে যান রুমের দাবি নিয়ে। কলেজ কর্তৃপক্ষ বেলা আড়াইটার দিকে নির্দেশ দেন- চারজনের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন কক্ষগুলোতে ৮ জন করে থাকার। তখন কলেজ কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা।
এসময় হোস্টেলে এসে শিক্ষকরা ছাত্রীদের গালাগালি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রীদের ভয় দেখাতে হোস্টেলে পুলিশও নিয়ে আসেন। তারপরও কেউ হোস্টেল কর্তৃপক্ষের নির্দেশ না মানলে শেষ বিকালে সবাইকে হল ছাড়ার নোটিশ দেন সিলেট নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ শাহিনা বেগম। নোটিশে বলা হয়, ‘সিলেট নার্সিং কলেজে অধ্যয়নরত ছাত্রছাত্রীদের প্রশাসনিক কারণে ২৩ মে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব আবাসিক হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
ছাত্রীদের অভিযোগ- নোটিশ জারির পরপরই হোস্টেলের বাবুর্চিসহ সব স্টাফকে সরিয়ে নেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। পরে রাতে হোস্টেলে থাকা ছাত্রীরা নিজেরা রান্না করে রাতের খাবারের ব্যবস্থা করেন।
সিলেট নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ শাহিনা বেগম শুক্রবার বিকালে মুঠোফোনে বলেন- ‘বিশৃঙ্খলা ঠেকামে আমরা হোস্টেল ছুটির নির্দেশ দিয়েছিলাম, কিন্তু সেটা আজ প্রত্যাহার করেছি। হোস্টেল বন্ধের নোটিশ দেওয়া হলেও মূলত হোস্টেল বন্ধ না। রাতে বেশিরভাগ মেয়েই হোস্টেলে ছিল। ছাত্রীরা এখনো হোস্টেলে আছে। তাদের খাওয়া-দাওয়া চলছে।’
তিনি বলেন, ‘হোস্টেলের পাশাপাশি নতুন নির্মিত ভবনেও ছাত্রীদের স্থানান্তর করা হবে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাদের সেটি বুঝিয়ে দিতে হবে, এখনো দেননি। এ মাসেই দেওয়ার কথা। আশা করছি শীঘ্রই সমাধান হবে ছাত্রীদের আবাসন সমস্যার।’