লাগামহীন মূল্যস্ফীতি: বাগে আনা যাচ্ছে না কেন?

Daily Ajker Sylhet

admin

০২ জুন ২০২৪, ০১:১২ অপরাহ্ণ


লাগামহীন মূল্যস্ফীতি: বাগে আনা যাচ্ছে না কেন?

সম্পাদকীয়:
আইএমএফের শর্তপূরণ, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি ও সিন্ডিকেটের কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা ভোক্তার আয়কে ছাড়িয়ে গেছে। বস্তুত নিত্যপণ্য নিয়ে একের পর এক ভয়াবহ কারসাজির ফলে দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ দুর্ভোগের চরমসীমায় পৌঁছেছে। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দেশে কমলেও বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশেই কেবল তা বাড়ছে। গড় মজুরি বৃদ্ধির প্রবণতা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয় বাড়ার চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি হওয়ায় ভোক্তাদের প্রকৃত আয় কমে গেছে, যা শুধু উদ্বেগজনকই নয়, অর্থনীতির জন্যও সৃষ্টি করেছে চ্যালেঞ্জ।

বস্তুত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার কারণে দেশে খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীন গতিতে বাড়তে শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। গেল বছর দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১২ বছরে সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়ার প্রেক্ষাপটে সবাই আশা করেছিল, সরকার এমন পদক্ষেপ নেবে যাতে পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে থাকে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে এর উলটোটি। প্রতিবেদনে অবশ্য কিছু আশার বাণীও শোনানো হয়েছে। যেমন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে আগামী মাসগুলোতে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমে আসবে। একইসঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের হারও কিছুটা কমবে, ফলে মূল্যস্ফীতির হারও কমবে।

প্রশ্ন হলো, শ্রীলংকার মতো অর্থনৈতিক সংকটে দেউলিয়া হওয়া দেশটিও যেখানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে, সেখানে আমরা কেন ব্যর্থ হচ্ছি? বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমার প্রভাব দেশে না পড়ার কারণই বা কী? লক্ষ করা যাচ্ছে, বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের উৎপাদন, মজুত ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে হঠাৎ দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে; পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। যেসব পণ্য দেশে উৎপাদিত হয়, ভরা মৌসুমে সেসব পণ্যের বাজারেও তৈরি করা হয় অস্থিরতা। মূলত অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতেই পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। আমরা মনে করি, এসব বিবেচনায় নিলেই বাজার তদারকির দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর অদক্ষতা স্পষ্ট হবে। বাজার তদারকি সংস্থার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসাধু ব্যবসায়ীদের আঁতাতের বিষয়টি বহুল আলোচিত। সরষের ভেতরের এ ভূত তাড়াতে কর্তৃপক্ষ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে, সরষের ভেতরে ভূত থাকলে যত পদক্ষেপই নেওয়া হোক, কাঙ্ক্ষিত সুফল প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে।

মূল্যস্ফীতির লাগামহীন ঘোড়াকে বাগে আনতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অজুহাত নয়, বরং সিন্ডিকেটসৃষ্ট কৃত্রিম সংকট উত্তরণে সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে আন্তরিক হতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করেন, তাদের সঞ্চয়ও নেই, কেউ অর্থ ধারও দেন না। এ অবস্থায় তারা সন্তানদের পড়ালেখা, চিকিৎসা খরচ তো বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেনই, তাতেও না কুলালে খাবার খরচ কমিয়ে তিন বেলার পরিবর্তে এক বেলা খেয়ে দিন পার করছেন। কারণ সিন্ডিকেটের থাবা এখন গরিবের খাবারেও পড়েছে। মনে রাখতে হবে, সিন্ডিকেটসৃষ্ট কৃত্রিম মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশের জীবনযাত্রা হুমকিতে পড়লে বাকিরাও ভবিষ্যতে এর বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারবে না।

Sharing is caring!