সিলেটে তিন মেয়রের মেয়াদেই সর্বনাশা জলাবদ্ধতা
০৪ জুন ২০২৪, ১২:১৭ অপরাহ্ণ
স্টাফ রিপোর্টার:
ঘন্টাখানেক ভারি বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় সিলেট নগরের বৃহৎ অংশ। জলাবদ্ধতার বিড়ম্বনায় পড়তে হয় নগরবাসীকে। বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, আরিফুল হক চৌধুরী কিংবা বর্তমান মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী- জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির আশ্বাস দিয়েছেন অনেক। কিন্তু ঘুরেফিরে নগরবাসীর প্রধান সমস্যা থেকে গেলে এই সর্বনাশা জলাবদ্ধতা।
রবিবার (২ জুন) রাতে ভারি বর্ষণে আরেকবার ডুবেছে সিলেট নগর। সোমবার (৩ জুন) দুপুর পর্যন্ত নগরীর প্রায় এক চতুর্থাংশ এলাকার লোকজন শিকার হয়েছেন জলজটের ভোগান্তিতে। দুপুর থেকে বৃষ্টিপাত কমে আসায় কিছু এলাকা থেকে নেমেছে পানি। তবে এখনো সুরমা তীরবর্তী অনেক এলাকা পানির নিচে। বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে পানি ওঠায় বিড়ম্বনার শেষ নেই জলবাদ্ধতার শিকার লোকজনের।
সুরমার পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তীরবর্তী সিলেট নগরের অনেক এলাকায় দেখা দিয়েছিল জলাবদ্ধতা। এর মধ্যে গত রবিবার মধ্যরাত থেকে ভারি বর্ষন শুরু হওয়ায় নগরীর বৃহৎ এলাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির সাথে হু হু করে বাড়তে থাকে ছড়া-খালের পানি। বৃষ্টির পানিতে ডুবতে থাকে বাসা-বাড়ি, দোকানপাট ও রাস্তাঘাট। গেল তিনদিন বৃষ্টি না হওয়ায় সিলেটের মানুষের মনে যে স্বস্তি নেমেছিল, গত রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়ায় বৃষ্টিতে তা উড়ে গেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ২০২২ সালের মতো সিলেট নগরীর অর্ধেক এলাকাজুড়ে বন্যার আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। বৃষ্টির পানি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ওঠেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েন রোগী, তাদের স্বজন ও চিকিৎসকরা। ব্যহত হয় চিকিৎসা ব্যবস্থা। দুপুরের পর ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করে হাসপাতাল থেকে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিপাতে সিলেটের সবকটি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ হওয়ায় পানি কমতে থাকে। টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরের সুরমা নদীর তীরবর্তী উপশহর, তালতলা, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, শেখঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। গেল তিনদিন বৃষ্টি না হওয়ায় পানি কিছুটা নামতে শুরু করে। কিন্তু এর মধ্যে গত রবিবার মধ্য রাত থেকে ভারি বর্ষন শুরু হওয়ায় নগরীর পানি নিষ্কাশনের সবকটি ছড়া-খাল পানিতে টুইটম্বুর হয়ে পড়ে। বাড়তে থাকে সুরমা নদীর পানি। ফলে ছড়া-খাল দিয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে নগরীতে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা।
রাত ১২টা থেকে নগরীর উপশহর, যতরপুর, সোবহানীঘাট, মাছিমপুর, ছড়ারপাড়, মেন্দিবাগ, তেররতন, সাদারপাড়া, কুশিঘাট, তালতলা, তেলিহাওর, জামতলা, জল্লারপাড়, মির্জাজাঙ্গাল, জামতলা, জিন্দাবাজার, দরগাহ মহল্লা, মুন্সিপাড়া, কেওয়াপাড়া, সাগরদিঘীরপাড়, হাওয়াপাড়া, কানিশাইল, কাজলশাহ, বাঘবাড়ি, নাইওরপু, মাছুদিঘীরপাড়, ভাতালিয়া, লামাবাজার, বিলপাড়, জেলরোড, সওদাগরটুলা, দাঁড়িয়াপাড়া, শিবগঞ্জ, সোনারপাড়া, শেখঘাট, কলাপাড়া, মজুমদারপাড়া, খাসদবীর, চৌকিদেখি, লালদিঘীরপাড়, আগপাড়া, মেজরটিলা, ইসলামপুরসহ নগরীর দক্ষিণ অংশের বেশিরভাগ এলাকায় পানি ওঠতে থাকে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে এসব এলাকার বেশিরভাগ বাসা-বাড়ি ও দোকানপাটে পানি ওঠে। তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। সকালের মধ্যে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানি জমে। ফলে রাতেই ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। দুপুর ১২টা থেকে সুরমা নদীর পানি কমতে থাকায় কিছু এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করে। তবে বেশিরভাগ এলাকা এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
সিলেট নগরীর তালতলার বাসিন্দা এনামুল কবীর জানান, রাত ১টার দিকে তার বাসায় পানি ওঠতে শুরু করে। ঘন্টাখানেকের মধ্যে বাসার ভেতর হাঁটু পানি জমে। বাধ্য হয়ে রাতেই এক আত্মীয়ের বাসায় পরিবার নিয়ে ওঠেছেন। পানিতে বাসার সকল আসবাবপত্র ভিজে গেছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, মধ্যরাত থেকে ভারি বর্ষনের কারণে নগরীর নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যে কারণে ছড়া-খাল দিয়ে পানি নদীতে যেতে পারছে না। কোন কোন স্থানে উল্টো নদীর পানি ছড়া-খাল দিয়ে নগরে ঢুকছে। ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নগরবাসীর দুর্ভোগ বিবেচনায় যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নির্দেশে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আশ্রয়কেন্দ্র খোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, সোমবার সিলেটের সকল নদীর পানি আগের দিনের চেয়ে কমেছে। রাত থেকে বৃষ্টির পানি সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টে বাড়তে থাকলেও দুপুর থেকে কমতে শুরু করেছে। সুরমা ও কুশিয়ারার পানি রবিবার থেকে গতকাল সোমবার কমলেও এখনো দুই নদীর চারটি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সিলেটের বন্যাকবলিত ৯টি উপজেলার সবকটিতে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন বন্যার্তরা। এখনো ১৩৮৪ জন বন্যার্ত আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।