পাওয়া যাচ্ছে না মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লাকে
২৪ জুন ২০২৪, ১২:১২ অপরাহ্ণ
নরসিংদী প্রতিনিধি:
ছেলের ছাগলকাণ্ডের পর আলোচনায় আসেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মতিউর রহমান। রোববার তাকে এনবিআর থেকে সরিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। এবার আলোচনায় মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরার উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকী।
লায়লা গত কয়েকদিন ধরে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না, ফোন কলেও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি তিনি এখন কোথায় আছেন, তাও কেউ বলতে পারছে না।
তিনি কেন আত্মগোপনে? তাহলে কি তার গড়া সম্পদও অবৈধ? এমন নানা প্রশ্ন জনমনে ঘুরপাক খাচ্ছে।
উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা যায়, ঈদের দুই দিন আগে সর্বশেষ অফিস করেছেন লায়লা। ঈদের ছুটি শেষে তাকে কার্যালয়ে দেখা যায়নি।
উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের ধারণা, তিনি ছাগলকাণ্ডে বেশ বিব্রত। সাংবাদিকেরাও বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পেতে তার কার্যালয়ে এসে খোঁজাখুঁজি করছেন।
রায়পুরার ইউএনও ইকবাল হাসান বলেন, ঈদের পর উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ তার কার্যালয়ে আসেননি। রোববার সকালে অনুষ্ঠিত উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভাতেও তিনি অংশ নেননি। ব্যক্তিগত কারণে তিনি আজ (সোমবার) আসতে পারবেন না জানিয়ে ছিলেন। কিন্তু কবে আসবেন তা বলেননি, কোনো ছুটিও নেননি।
লায়লাও সম্পদের পাহাড় গড়েছেন; সরকারি কলেজের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হয়ে কীভাবে তিনি এত সম্পদের মালিক হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। লাকী বর্তমানে রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। স্থানীয়রা জানান, চিহ্নত রাজাকার আব্দুল কাদিরের নাত্নি এই লাকী। তিনি এখন নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের দুর্যোগ, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক। রাজাকার ও বিএনপি পরিবারের সন্তান হয়ে কিভাবে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত হলেন তা নিয়েও স্থানীয়দের মাঝে আলোচনা রয়েছে।
মতিউরের প্রথম স্ত্রী লাকীর সংসারে তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও ফারজানা রহমান ইপসিতা নামে দুই সন্তান রয়েছে। অন্যদিকে ছাগলকাণ্ডে ভাইরাল তরুণ মুশফিকুর রহমান (ইফাত) তার দ্বিতীয় স্ত্রী ফেনীর সোনাগাজীর শাম্মী আখতারের গর্ভের সন্তান।
লাকী ছিলেন রাজধানীর তিতুমির সরকারি কলেজের বাংলা বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক। শিক্ষকতার পাশাপাশি রায়পুরা উপজেলার মরজালে নিজ এলাকায় প্রায় দেড় একর জমিতে ওয়ান্ডার পার্ক ও ইকো রিসোর্ট নামে একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলেন তিনি। গত বছর উপজেলা চেয়ারম্যান সাদেকুর রহমান মারা গেলে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে উপনির্বাচনে প্রার্থী হন এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হন।
শিক্ষক থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া লাকীর নামে বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। তার নির্বাচনি হলফনামা থেকে জানা গেছে, বাৎসরিক আয় বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট-দোকান ও অন্যান্য ভাড়া থেকে ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা, কৃষিখাত থেকে ১৮ লাখ টাকা, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র-ব্যাংক আমানতের লভ্যাংশ থেকে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা, উপজেলা চেয়ারম্যানের সম্মানী বাবদ ১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৭৫ টাকা, ব্যাংক সুদ থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার ৯৩৯ টাকা। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমা রয়েছে ৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। তার কৃষিজমির পরিমান ১৫৪ শতাংশ, অকৃষি জমির মধ্যে রয়েছে রাজউকে পাঁচ কাঠা, সাভারে সাড়ে ৮ কাঠা, গাজীপুরে ৫ কাঠা, গাজীপুরের পুবাইলে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ ও ২ দশমিক ৯০ শতাংশ, গাজীপুরের খিলগাঁওয়ে ৫ শতাংশ ও ৩৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, গাজীপুরের বাহাদুরপুরে ২৭ শতাংশ, গাজীপুরের মেঘদুবীতে ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ, গাজীপুরের ধোপাপাড়ায় ১৭ শতাংশ, রায়পুরায় ৩৫ শতাংশ, ৩৫ শতাংশ ও ৩৩ শতাংশ, রায়পুরার মরজালে ১৩৩ শতাংশ, সোয়া ৫ শতাংশ, ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, ২৬ দশমিক ২৫ শতাংশ ও ৪৫ শতাংশ, শিবপুরে ২৭ শতাংশ ও ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, শিবপুরের যোশরে সাড়ে ৪৪ শতাংশ, নাটোরের সিংড়ায় ১ একর ৬৬ শতাংশ।