কোটা সংস্কার আন্দোলন: উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় পরিবারের সদস্যরা

Daily Ajker Sylhet

admin

৩০ জুলা ২০২৪, ১২:১২ অপরাহ্ণ


কোটা সংস্কার আন্দোলন: উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় পরিবারের সদস্যরা

গৌরীপুর প্রতিনিধি:
আমার তো সব শেষ! ওর ছোট ভাই-বোনের লেখাপড়ার খরচ, আমাদের সংসারের খরচ, নিত্যদিনের সব প্রয়োজন মেটাত জোবায়ের আহম্মেদ। তার উপার্জনে আমাদের সংসার চলছিল। সংসারের আয়ের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে পুরো সংসারে অন্ধকার নেমে এসেছে। আমরা এখন কীভাবে চলব, সেটা আল্লাহ ভালো জানেন। সন্তানের লাশ কাঁধে নিয়েছি, জানাজায় আমি ইমামতি করেছি। কথাগুলো বলতে বলতে চোখের কোনায় জমে ওঠা নিঃশব্দের অশ্র“ মোছেন জোবায়েরের বাবা মোহাম্মদ আনোয়ার উদ্দিন।

তিনি বলেন, ছেলে হত্যার বিচারের ভার আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দিয়ে দিলাম। আমি চাই, আল্লাহ আমার ছেলেকে যেন শহিদি মর্যাদা দান করেন।

২০ জুলাই গৌরীপুরের কলতাপাড়া বাজারে কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে দুপক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তিনজন। তাদের মধ্যে একজন হলেন জোবায়ের আহম্মদ। তিনি কাউরাট আকবর আলী দাখিল মাদ্রাসা থেকে অষ্টম শ্রেণি পাশ করেন। এরপর গৌরীপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। এসএসসি পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল করেন। এ কারিগরি কলেজে পড়া অবস্থায়ই পুরোনো মোবাইল ফোন কেনার ব্যবসা শুরু করেন। শম্ভুগঞ্জে দোকান ভাড়া নিয়ে তিনি পুরোনো মোবাইল কিনে এর যন্ত্রাংশ বিক্রি করতেন। একপর্যায়ে ব্যবসার পরিধি বাড়লে তিনি ভারত, চীন থেকে মোবাইলের যন্ত্রাংশ আমদানি এবং নতুন মোবাইল ফোন আমদানি করতেন। এছাড়াও পুরোনো মোবাইলের যন্ত্রাংশও রপ্তানি করেন। তার আয়ে পুরো সংসারটি ঘুরে দাঁড়ায়।

তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের পূর্বকাউরাট গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহাম্মদ আনোয়ার উদ্দিনের ছেলে। ছয় বোন আর তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম। জোবায়েরের বড় বোন উম্মে হানিফ শ্যামগঞ্জ মাদ্রাসার কামিল পরীক্ষার্থী। সবার ছোট ভাই মো. কাউসার একই মাদ্রাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষার্থী। উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের বীরপাঁচাশী গ্রামের মার্জিনা আক্তারকে গত বছরের জুনে বিয়ে করেন জোবায়ের আহম্মেদ। স্বামীর মৃত্যুসংবাদ শোনে স্তব্ধ হয়ে যান তিনি। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তিনি স্বামীকে হারিয়ে এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেন না। অসুস্থ হয়ে পড়েন, বর্তমানে তার চলছে চিকিৎসা।

সন্তানের কথা স্মরণ হলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন জোবায়েরের মা নুরজাহান। তিনি বলেন, ওইদিন (২০ জুলাই) সকালে মাছের তরকারি দিয়ে নিজ হাতে ছেলেকে ভাত খাইয়েছি। দেশের পরিস্থিতি ভালো না। দোকানে যাসনে, বারবার নিষেধ করেছিলাম। আমাদের নিষেধ মেনে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দোকানে যায়নি। শনিবার বলল, দোকানে এত টাকার মাল তালা মেরে রেখে এসেছি। সব ঠিকঠাক আছে কি না, দেখে আসি। এই বলে ১১টার দিকে বাড়ি থেকে দোকানের চাবি নিয়ে বের হয়। কিছুক্ষণ পরই শুনতে পেলাম, আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ! বিকালে লাল সাইরেন বাজিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে ছেলের নিথর দেহটা এলো। এসব বলে আবারও হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন মমতাময়ী এই মা।

জোবায়েরের ছোট ভাই মো. কাউসার বলেন, বড় ভাইয়ের বুকের বামপাশে একটি গুলির চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। এছাড়া আর কোনো স্থানে গুলিবিদ্ধ হওয়ার দাগ ছিল না। তিনি আরও জানান, প্যান্টের পকেটে মানিব্যাগ ও দোকানের চাবি ছিল, সেগুলো পাওয়া গেছে। তবে বড় ভাইয়ের মোবাইল ফোনটা পাওয়া যায়নি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গৌরীপুরে উপজেলার কলতাপাড়া বাজারে ২০ জুলাই তিনজন নিহত এবং পুলিশসহ ৩০ জন আহত হন। নিহত অন্য দুজন হলেন ডৌহাখলা ইউনিয়নের চুড়ালী গ্রামের বাবুল মিয়ার ছেলে বিপ্লব ও রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও মধ্যপাড়ার আব্দুল হালিম শেখের ছেলে নুরে আলম সিদ্দিকী রাকিব।

Sharing is caring!