ভিডিও কলেও স্বামীর মুখ দেখার ভাগ্য হয়নি সাংবাদিক তুরাবের স্ত্রী তানিয়ার

Daily Ajker Sylhet

admin

১৭ আগ ২০২৪, ০৮:০৫ অপরাহ্ণ


ভিডিও কলেও স্বামীর মুখ দেখার ভাগ্য হয়নি সাংবাদিক তুরাবের স্ত্রী তানিয়ার

স্টাফ রিপোর্টার:
চলতি বছরের ১৩ মে। যুগল জীবনে পা রেখেছিলেন সাংবাদিক এটিএম তুরাব। স্ত্রী যুক্তরাজ্য প্রবাসী তানিয়া ইসলাম। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরে আসেন নেপাল। মধুর এই স্মৃতি নিয়ে ৫ জুন যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান তানিয়া। স্বামী তুরাবকে অল্প দিনের মধ্যে যুক্তরাজ্যে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই প্রক্রিয়াও শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার এটিএম তুরাবের আর যুক্তরাজ্য যাওয়া হয়নি। নববধূকে নিয়ে নবজীবনের সব স্বপ্নই তার রয়ে যায় অধরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হন তিনি। বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় শেষ বিদায়ের সময় ভিডিও কলে স্বামীর মুখও দেখার ভাগ্য হয়নি নববধূ তানিয়ার।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে সিলেটে আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর সিলেট কালেক্টরেট জামে মসজিদ থেকে মিছিল বের করে বিএনপি। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শুরু হয় সংঘর্ষ। পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হন সাংবাদিক তুরাব। প্রথমে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরে বেসরকারি একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে ওইদিন সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।

তুরাবের মৃত্যুর ঘটনায় আন্দোলনে নামেন সিলেটের সাংবাদিক সমাজ। পেশাদার সাংবাদিকদের সবকটি সংগঠন মিলে যৌথভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। হত্যাকান্ডের পাঁচ দিন পর তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান মো. আজরফ ৮-১০ জন পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এর আগে পুলিশ তুরাব হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিএনপি ও জামায়াতের ৩৪ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকশকে আসামি করে একটি মামলা রেকর্ড করে। আর তুরাবের ভাইয়ের দায়ের করা অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে রেকর্ড করে পুলিশ। তুরাব হত্যাকান্ডের ঘটনায় নতুন করে মামলা করতে চায় তার পরিবার।

তুরাবের বড় ভাই আবুল আহসান মো. আজরফ (জাবুর) জানান, তার পরিবারের দেওয়া মামলাটি পুলিশ রহস্যজনক কারণে জিডি হিসেবে রেকর্ড করেছে। আগামী সপ্তাহে তিনি আদালতে নতুন করে মামলা করবেন। আগে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ না করলেও এবার এজহারে নাম উল্লেখ করবেন। মামলায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আজবাহার আলী শেখ ও সহকারী কমিশনার কাওসার দস্তগীরকে আসামি করবেন বলে জানান তিনি।

 

এদিকে সিলেট নগরীর কোর্ট পয়েন্টকে শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাব চত্বর ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেটের প্রতিনিধিত্বশীল সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে ব্যানার টাঙ্গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তুরাব চত্বর নামকরণ করা হয়। এ সময় গত ১৯শে জুলাই পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে নিহত বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিপিজেএ) সিলেট বিভাগীয় কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাবের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। দৈনিক জালালাবাদের চিফ ফটো জার্নালিস্ট হুমায়ুন কবির লিটনের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিপিজেএ) সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলামের পরিচালনায় তুরাব চত্বর নামকরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সিলেট প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইকরামুল কবির, সিনিয়র সহ-সভাপতি খালেদ আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, সিলেট জেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন (বিপিজেএ) সিলেট বিভাগীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আতাউর রহমান আতা প্রমুখ। নেতৃবৃন্দ বলেন, সিলেটের মাটিতে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ কর্তৃক গুলি করে সাংবাদিক হত্যা ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। তুরাব হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সোচ্চার হতে হবে।

 

সাংবাদিক আবু তাহের মো: তুরাবের বাড়ি বিয়ানীবাজার পৌরসভার ফতেহপুর গ্রামে। তার পিতা মাস্টার আব্দুর রহীম দীর্ঘদিন বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

অপরদিকে বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাব সভাপতি সজীব ভট্রাচার্য এবং সাধারণ সম্পাদক মিলাদ মো: জয়নুল ইসলাম সাংবাদিক তুরাব হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্থির দাবী জানিয়েছেন।

Sharing is caring!