মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে জানিয়েছেন বিয়ানীবাজারে স্মারকলিপি পেশ
২৪ সেপ্টে ২০২৪, ১২:৫৩ অপরাহ্ণ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
বৈষম্য দূরীকরণে মাধ্যমিক স্তরের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণসহ চার দফা দাবী বাস্তবায়নের আবেদন জানিয়েছেন বিয়ানীবাজার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা পরিবারের কর্মকর্তা ও শিক্ষক নেতৃবৃন্দ।
আজ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকালে বিয়ানীবাজার উপজেলা চত্ত্বরে মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার-এর মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর বিয়ানীবাজার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা পরিবারের পক্ষে স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয়।
দাবিগুলো হলো-
০১. মাধ্যমিক স্তরের প্রতিষ্ঠানের ৯৭% বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলি জাতীয়করণ করা অত্যন্ত জরুরী। একই শিক্ষাগত যোগ্যতা, একই বই পড়ানো, একই বোর্ডের আওতায় পরীক্ষা অথচ সরকারি ও বেসরকারি নাম দিয়ে আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদার মধ্যে বিরাট বৈষম্য তৈরি করে রাখা হয়েছে যা শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। শিক্ষার সকল অংশীজনের প্রাণের দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ।
০২. শিক্ষা বিভাগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একাডেমিক ও প্রশাসনিক। শিক্ষকেরা একাডেমিক কাজে দক্ষ। তাদের সকল প্রশিক্ষণ পেড্যাগোজি কেন্দ্রিক। ক্লাস রুমের শিক্ষণ-শিখনে তারা দক্ষ। অন্যদিকে শিক্ষা প্রশাসনে দীর্ঘ ৩১ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের সকল প্রশিক্ষণ প্রশাসনিক। শিক্ষকতা ও প্রশাসন ভিন্ন চরিত্রের, ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের, কাজের ধরন ভিন্ন, চর্চা বা অনুশীলন ভিন্ন। শিক্ষকরা প্রশাসনে অনভিজ্ঞ, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপপরিচালক পদে তাঁদের পদায়ন করা হলে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূণ্যতা যেমন সৃষ্টি হয় তেমনি ক্লাস রুম শিক্ষকতায় অভিজ্ঞ একজন শিক্ষক কে উল্লেখিত পদ সমূহে পদায়ন করা হলে বিভিন্ন বিধি বিধান সম্পর্কে পূর্ব জ্ঞান না থাকার কারণে অফিসের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অধস্তন পদের লোকজনের পরামর্শ দ্বারাই পরিচালিত হতে হয়। প্রশাসনিক দৃঢ় সিদ্ধান্ত তাঁরা গ্রহণ করতে সমস্যা হয়। এ ছাড়াও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকগণকে পদায়ন করা হলে প্রশাসনিক অনভিজ্ঞ সিনিয়র শিক্ষকের অধীনে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রধানগণকে কাজ করতে হবে, এতে শিক্ষাঙ্গনে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। সে কারণে উপজেলা, জেলা, অঞ্চল ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখায় ৩১ বছর শিক্ষা প্রশাসনে কাজের দক্ষতা সম্পন্ন ৬ষ্ঠ গ্রেডভুক্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের পদোন্নতি ও পদায়নের জোর দাবী করছি।
০৩. শিক্ষার মাঠ প্রশাসনে কাজ করা ১০-২২ বছরের দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত SESIP এর জনবল রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।
০৪. বহু মাত্রিক সমস্যায় মাধ্যমিক শিক্ষা জর্জরিত। স্কুল, মাদরাসা, সরকারি, বেসরকারি, ইংরেজি ভার্সন এ ধরণের নানা রকম প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এদের মধ্যে বৈষম্য প্রকট। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে মাননীয় উপদেষ্টা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর দেয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়, একটি উন্নত আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে সুষম সুস্থ্য-পরিচ্ছন্ন মানবিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য চাই সার্বজনীন শিক্ষার গভীর ও ব্যাপক আয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা হলো মৌলিক শিক্ষা। এই শিক্ষা সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা মানব সম্পদ সৃষ্টি করে না। অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষা পেশাদারী শিক্ষা প্রদান করে এবং উচ্চতর জীবিকার সম্ভাবনাময় পেশাদাররা দেশের বাইরে চলে যায়।
একমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে যথার্থ জনসম্পদ সৃষ্টি হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় পতিত ফ্যাসিষ্ট সরকার পরিকল্পিতভাবে মাধ্যমিক শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছে। জুলাই- আগষ্ট ২০২৪ এর বিপ্লবের মধ্যদিয়ে ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী দেশ গড়ার যে স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছে তাতে আমরাও নতুন করে স্বপ্ন দেখছি আপনার গতিশীল নেতৃত্বে মাধ্যমিক শিক্ষা আবার জেগে উঠবে। এ স্বপ্নযাত্রায় আমরাও আপনার সহযাত্রী হতে প্রস্তুত।
মানববন্ধনকালে বক্তাগন বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও একজন শিক্ষকের উৎসবভাতা ২৫%, বাড়িভাড়া ১০০০/- চিকিৎসা ভাতা ৫০০/- পৃথিবীর আর কোন দেশে প্রচলিত আছে কি-না, জানা নাই। এমন নিষ্ঠুর উপহাস থেকে পরিত্রাণ দিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করা এখন সময়ের দাবি ও অত্যন্ত জরুরি।
মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মৌলুদুর রহমানসহ উপজেলার ২০২৪ সনে সদ্য নির্বাচিত গুণী শিক্ষক, দাসউরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কলামিস্ট মোঃ আতাউর রহমান এর সঞ্চালনায় মানববন্ধন শেষে স্মারকলিপি হস্তান্তরকালে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার আরিফুর রহমান, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস) সভাপতি আব্দুদ দাইয়ান, সহ-সভাপতি ও খলিল চৌধুরী আদর্শ বিদ্যানিকেতন এর প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল মালিক,বশিস সচিব বিয়ানীবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কান্তি তালুকদার, কসবা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম সেলিম, পূর্ব মূড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খালেদ আহমদ, লাউতা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাহাব উদ্দিন, নালবহর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলাল আহমদ, শেওলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মঞ্জুরুল হক, জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মুছব্বির, মাথিউরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খসরুল আলম, পঞ্চখণ্ড আঙ্গুরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ মুহাম্মদ হাকিম আহমদ, দি নিউ জেনারেশন আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক মানিক মিয়া, হাজি ফয়জুর রহমান একাডেমির প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম, বাগবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আজিজুর রহমান, গোবিন্দ শ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন, মুল্লাপুর ইউনিয়ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ চক্রবর্তী, তেরাদল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমান, কুড়ারবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আতিকুল ইসলাম প্রমুখ।